HomeBusinessকৃষকদের স্বস্তি! ২০% পেঁয়াজ রপ্তানি শুল্ক উঠছে পয়লাতেই

কৃষকদের স্বস্তি! ২০% পেঁয়াজ রপ্তানি শুল্ক উঠছে পয়লাতেই

- Advertisement -

ভারত সরকার গত ২২ মার্চ, ২০২৫-এ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছে—আগামী ১ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে পেঁয়াজ রপ্তানির (Onion Export) উপর আরোপিত ২০ শতাংশ শুল্ক সম্পূর্ণভাবে তুলে নেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা এবং শুল্কের যুগের অবসান হতে চলেছে, যা কৃষক এবং ভোক্তা উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। এই পদক্ষেপ কৃষকদের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসার পাশাপাশি পেঁয়াজের দাম—মণ্ডি (পাইকারি বাজার) থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত—কীভাবে প্রভাবিত করবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

Onion Export নিষেধাজ্ঞার পটভূমি

পেঁয়াজ ভারতের রান্নাঘরে একটি অপরিহার্য উপাদান এবং এর দাম সবসময়ই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর বিষয়। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন কমে যাওয়া এবং দাম বৃদ্ধির আশঙ্কায় সরকার রপ্তানির উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। ২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৩ মে পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ছিল। এরপর মে মাসে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলেও ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করা হয়। পরবর্তীতে, ২০২৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বরে এই শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়। তবে, এই শুল্কের কারণে ভারতীয় পেঁয়াজ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে এবং কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন।

   

মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে, যেখানে এশিয়ার বৃহত্তম পেঁয়াজের বাজার লাসালগাঁও অবস্থিত, কৃষকরা এই নিষেধাজ্ঞা এবং শুল্কের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানিয়ে আসছিলেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, দেশীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে গেলেও রপ্তানির সুযোগ না থাকায় তাঁরা লোকসানের মুখে পড়ছেন। এই পরিস্থিতিতে সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত কৃষকদের জন্য একটি আশার আলো হয়ে এসেছে।

কেন এই সিদ্ধান্ত?

সরকারের এই পদক্ষেপের পিছনে প্রধান কারণ হল চলতি বছরের রবি ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি। কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে রবি পেঁয়াজের উৎপাদন ২২৭ লাখ মেট্রিক টন হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা গত বছরের ১৯২ লাখ মেট্রিক টনের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি। রবি ফসল ভারতের মোট পেঁয়াজ উৎপাদনের ৭০-৭৫ শতাংশের জন্য দায়ী এবং এটি অক্টোবর-নভেম্বরে খরিফ ফসল আসা পর্যন্ত বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। এই বাড়তি উৎপাদনের ফলে দেশীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে, যা কৃষকদের আয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তাই, রপ্তানি শুল্ক তুলে নিয়ে কৃষকদের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান বলেছেন, “কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা এবং তাঁদের উৎপাদিত পেঁয়াজ বিশ্ব বাজারে পৌঁছে দেওয়া মোদী সরকারের প্রতিশ্রুতি। এই শুল্ক প্রত্যাহারের ফলে কৃষকরা তাঁদের পরিশ্রমের ফল ভালোভাবে পাবেন।” তিনি আরও জানিয়েছেন যে, পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করায় এবং কৃষকদের ক্ষতি হতে শুরু করায় সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বাজারে প্রভাব

এই সিদ্ধান্তের ফলে পেঁয়াজের দামের উপর কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতে, রবি ফসলের আগমনের ফলে মণ্ডি এবং খুচরা বাজারে দাম ইতিমধ্যেই নরম হয়েছে। গত এক মাসে সর্বভারতীয় গড় খুচরা দাম ১০ শতাংশ কমেছে, এবং মণ্ডির গড় মূল্য ৩৯ শতাংশ কমেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২১ মার্চ, ২০২৫-এ লাসালগাঁও এবং পিম্পলগাঁও বাজারে পেঁয়াজের মূল্য ছিল যথাক্রমে ১৩৩০ টাকা এবং ১৩২৫ টাকা প্রতি কুইন্টাল, যা মাসের শুরুতে ২২৭০ টাকার তুলনায় অনেক কম।

রপ্তানি শুল্ক তুলে নেওয়ার ফলে ভারতীয় পেঁয়াজ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক হবে। বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, নেপাল এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো দেশগুলি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য নির্ভরশীল। শুল্ক তুলে নেওয়ায় রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে এবং কৃষকরা ভালো দাম পাবেন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে (১৮ মার্চ পর্যন্ত) ভারত ১১.৬৫ লাখ টন পেঁয়াজ রপ্তানি করেছে, এবং মাসিক রপ্তানি সেপ্টেম্বরের ০.৭২ লাখ টন থেকে জানুয়ারিতে ১.৮৫ লাখ টনে বেড়েছে। এই প্রবণতা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

কৃষকদের জন্য স্বস্তি

পেঁয়াজ চাষীদের জন্য এই সিদ্ধান্ত একটি বড় স্বস্তি। মহারাষ্ট্রের কৃষক সংগঠন কিষাণ সভা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও বলেছে যে, এটি দেরিতে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের মতে, দীর্ঘমেয়াদী রপ্তানি নীতি না থাকায় কৃষকরা বারবার ক্ষতির মুখে পড়েন। তাঁরা সরকারের কাছে অনিয়মিত নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে একটি স্থায়ী নীতির দাবি জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, সরকারের দাবি, এই সিদ্ধান্ত কৃষকদের ন্যায্য মূল্য এবং ভোক্তাদের জন্য সাশ্রয়ী দামের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে। ২০২৩ সাল থেকে শুরু হওয়া উৎপাদন হ্রাস এবং আন্তর্জাতিক দাম বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জের পর এই পদক্ষেপ একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাড়তি উৎপাদন এবং রপ্তানির সুযোগ বাজারে স্থিতিশীলতা আনবে। তবে, দেশীয় চাহিদা এবং আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে আবারও নিষেধাজ্ঞা বা শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আপাতত, কৃষকরা আশাবাদী যে তাঁদের পরিশ্রমের ফল তাঁরা পাবেন, এবং ভোক্তারা সাশ্রয়ী মূল্যে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।

এই সিদ্ধান্তের পূর্ণ প্রভাব বোঝার জন্য ১ এপ্রিলের পর বাজারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। তবে, এটা স্পষ্ট যে, সরকার কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছে। এই পরিবর্তন কীভাবে বাস্তবায়িত হয়, তা সময়ই বলে দেবে।

- Advertisement -
Business Desk
Business Desk
Stay informed about the latest business news and updates from Kolkata and West Bengal on Kolkata 24×7
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular