ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকা বাণিজ্য আলোচনার (Tariff) ষষ্ঠ রাউন্ড স্থগিত করা হয়েছে। এই আলোচনার জন্য মার্কিন প্রতিনিধি দলের নয়াদিল্লি সফরও বাতিল করা হয়েছে। এই স্থগিতকরণ এমন এক সময়ে ঘটছে যখন আমেরিকা ভারতীয় পণ্যের উপর ২৭ আগস্ট থেকে অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।
যা ভারতের উপর মোট শুল্ককে ৫০%-এ নিয়ে যাবে। এই অতিরিক্ত শুল্ক ভারতের রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল এবং সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের কারণে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে আরোপ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এই আলোচনা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি (বিটিএ) চূড়ান্ত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যার প্রথম ধাপ ২০২৫ সালের শরৎকালের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছিল। উভয় দেশের লক্ষ্য বর্তমান ১৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা। তবে, এই স্থগিতকরণ এবং অতিরিক্ত শুল্কের ঘোষণা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
আমেরিকা ভারতের কৃষি ও দুগ্ধ খাতে বৃহত্তর বাজার প্রবেশাধিকারের দাবি জানিয়ে আসছে, যা ভারত প্রত্যাখ্যান করেছে। ভারতের মতে, এই খাতগুলি ছোট ও প্রান্তিক কৃষক এবং গবাদি পশুপালকদের জীবিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এবং এই বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া সম্ভব নয়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে স্পষ্টভাবে বলেন, “ভারত কৃষক, মৎস্যজীবী এবং গবাদি পশুপালকদের স্বার্থের উপর কোনো আপস করবে না।” তিনি দেশীয় উৎপাদন এবং ভারতীয় পণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছেন।
আমেরিকা ৭ আগস্ট থেকে ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫% শুল্ক আরোপ করেছে, এবং ২৭ আগস্ট থেকে অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। এই শুল্ক ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল, অটো পার্টস এবং অন্যান্য রপ্তানি খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। তবে, ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ভারতের মার্কিন রপ্তানি ২১.৬৪% বৃদ্ধি পেয়ে ৩৩.৫৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
আমদানি ১২.৩৩% বেড়ে ১৭.৪১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল, যার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১২.৫৬ বিলিয়ন ডলার।
এই শুল্ক আরোপের পিছনে ভারতের রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল এবং সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই শুল্ককে ভারতের উপর চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছেন। তবে, ভারত জানিয়েছে, অর্থনৈতিক কারণে রাশিয়ার তেল ক্রয় বন্ধ করা সম্ভব নয়।
সরকারী সূত্র জানায়, রাশিয়ার তেল আমদানি ভারতের জন্য অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে সেকেন্ডারি শুল্ক স্থগিত করা হতে পারে, তবে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
এই স্থগিতকরণ ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য একটি ধাক্কা, কারণ তারা শুল্ক থেকে মুক্তির আশা করছিলেন। কেরালা সরকার ইতিমধ্যেই কৃষি খাতে সম্ভাব্য ক্ষতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, বিশেষ করে নারকেল, রাবার, লঙ্কা, এলাচ, চা এবং কফির মতো ফসলের ক্ষেত্রে। তারা বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের আগে রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে পরামর্শের দাবি জানিয়েছে।
বাংলায় কবে শুরু হবে SIR? এবার স্পষ্ট করে জানিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন
এই পরিস্থিতি ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্কের জটিলতা এবং ভূ-রাজনৈতিক বিষয়গুলির প্রভাব তুলে ধরে। উভয় দেশই আলোচনা পুনরায় শুরু করার জন্য নতুন তারিখ নির্ধারণের চেষ্টা করছে, তবে বর্তমান উত্তেজনা এবং শুল্কের হুমকি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পথে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। ভারত জাতীয় স্বার্থ এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং আগামী দিনে এই আলোচনার দিকে সবার নজর থাকবে।