চিনের তুলনায় তিন গুণ বেশি iPhone রফতানি ভারতের

India iPhone export: এপ্রিল ২০২৫-এ এক অভূতপূর্ব মাইলফলক স্পর্শ করল ভারত। সরকারি ও আন্তর্জাতিক ট্রেড ডেটা অনুযায়ী, ওই মাসে ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয়েছে প্রায়…

India Surpasses China in iPhone Exports to US

India iPhone export: এপ্রিল ২০২৫-এ এক অভূতপূর্ব মাইলফলক স্পর্শ করল ভারত। সরকারি ও আন্তর্জাতিক ট্রেড ডেটা অনুযায়ী, ওই মাসে ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয়েছে প্রায় ৩০ লক্ষ (৩ মিলিয়ন) iPhone, যেখানে চিন রফতানি করেছে মাত্র ৯ লক্ষ (৯০০,০০০) ইউনিট। এই পরিসংখ্যান স্পষ্টতই দেখায়, মার্কিন বাজারে iPhone রফতানির দৌড়ে চিনের তুলনায় প্রায় তিন গুণ এগিয়ে রয়েছে ভারত।

এটি শুধু পরিসংখ্যানগত সাফল্য নয়, বরং বিশ্বের প্রযুক্তি উৎপাদন ও সরবরাহ চেইনের ক্ষেত্রে ভারতের একটি বড় কৌশলগত জয় বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

   

কেন এই পরিবর্তন?
গত কয়েক বছর ধরেই Apple-এর মতো বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলি চিন নির্ভরতা কমিয়ে অন্যান্য বিকল্প উৎপাদন কেন্দ্র খোঁজার পথে হাঁটছে। এর পেছনে প্রধানত রয়েছে:

  • 1. চিন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধ
  • 2. চিনে কোভিড-পরবর্তী কড়া লকডাউন ও উৎপাদন ব্যাঘাত
  • 3. চিনের উচ্চ উৎপাদন খরচ
  • 4. বৈশ্বিক জিও-পলিটিক্যাল উদ্বেগ

এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকার প্রস্তাবিত “Make in India” ও “Production Linked Incentive (PLI)” স্কিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। ফলস্বরূপ, Foxconn, Pegatron ও Wistron-এর মতো Apple-এর বড় বড় উৎপাদন পার্টনাররা ভারতের মাটিতে আইফোন তৈরির উপর জোর দিতে শুরু করে।

ভারতের উত্থান: উৎপাদনের কেন্দ্র থেকে রফতানির শক্তিতে রূপান্তর
২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো ভারত iPhone উৎপাদন শুরু করেছিল। তখন সংখ্যাটি ছিল খুবই সীমিত এবং মূলত দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা পূরণের জন্য। কিন্তু আজ, ২০২৫-এ দাঁড়িয়ে ভারত শুধু উৎপাদনেই নয়, বরং বিশ্বের অন্যতম প্রধান iPhone রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে।

Apple-এর জন্য এটি শুধু ব্যয়বহুল চিনের বিকল্প নয়, বরং একটি দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত বিনিয়োগ। সারা দেশে Apple-এর চুক্তিভিত্তিক উৎপাদন কারখানায় কয়েক লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতামত

Advertisements

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ অরিন্দম মুখার্জির মতে, “চিনের তুলনায় ভারতের এই রফতানি সাফল্য ভবিষ্যতে Apple-এর দীর্ঘমেয়াদী উৎপাদন কৌশলের অভিমুখ নির্ধারণ করবে। এটি প্রমাণ করে যে ভারত এখন কেবলমাত্র ‘বাজার’ নয়, বরং ‘উৎপাদন হাব’ হিসেবেও সফল।”

আন্তর্জাতিক বাজারে আইফোনের সরবরাহ ব্যবস্থার ভারসাম্য রক্ষায় ভারত এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

অর্থনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এই উত্থান ভারতের অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। শুধুমাত্র মোবাইল ফোন রফতানি থেকেই চলতি বছরে কয়েক বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতে পারে বলে ধারণা করছেন অর্থনীতিবিদরা। পাশাপাশি, উচ্চমানের প্রযুক্তি ও দক্ষ শ্রমশক্তির উন্নয়নের দিকেও নজর দিচ্ছে সরকার।

ভারতের ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী পাঁচ বছরে মোবাইল রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ১০০ বিলিয়ন ডলার ছোঁয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

ভারতের iPhone রফতানিতে চিনকে ছাপিয়ে যাওয়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এটি শুধু বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের দিক পরিবর্তন করছে না, বরং ভারতের প্রযুক্তি খাতে আত্মনির্ভরতার পথে অগ্রসর হওয়ার নিদর্শনও বটে।
চিনের ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে ভারত এখন প্রযুক্তির আকাশে নিজস্ব পতাকা ওড়াতে প্রস্তুত।