ভারতের সোলার পিভি মডিউল উৎপাদন (India Solar Energy) ক্ষমতা ২০৩০ সালের মধ্যে বর্তমান ৮০ গিগাওয়াট (জিডব্লিউ) থেকে বেড়ে ১২৫ গিগাওয়াটে পৌঁছবে। এছাড়াও, সোলার সেল উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমানে ২৫ গিগাওয়াট থেকে শীঘ্রই ৪০ গিগাওয়াটে উন্নীত হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নবায়নযোগ্য জ্বালানি মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী। তিনি এই কথা বলেছেন গুজরাটের নবসারি জেলার দেগামে ওয়ারি এনার্জিস লিমিটেডের একটি অত্যাধুনিক ৫.৪ গিগাওয়াট সোলার সেল উৎপাদন কারখানার উদ্বোধনের সময়।
মন্ত্রী জোশী জানান, ২০১৪ সালে ভারতে সোলার পিভি মডিউল উৎপাদন প্রায় শূন্যের কাছাকাছি ছিল। তিনি বলেন, “আজ ওয়ারির মতো কোম্পানিগুলি ৮০ গিগাওয়াট সোলার পিভি মডিউল উৎপাদন করছে। ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের মোট সোলার পিভি উৎপাদন ক্ষমতা ১২৫ গিগাওয়াটে পৌঁছে যাবে। একইভাবে, ২০১৪ সালে সোলার সেল উৎপাদন শূন্য ছিল। কিন্তু আজ আমরা ২৫ গিগাওয়াট উৎপাদন করছি এবং খুব শীঘ্রই ৪০ গিগাওয়াটের লক্ষ্যে পৌঁছে যাব। আমরা পলিসিলিকন থেকে মডিউল পর্যন্ত সমন্বিত সোলার উৎপাদনের চিন্তাভাবনা নিয়ে এগিয়ে চলেছি, যা সম্পূর্ণ ভারতে উৎপাদিত হবে।”
ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদক
ভারত বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। জোশী জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে বর্তমান ২২০ গিগাওয়াট থেকে ৫০০ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি ক্ষমতার লক্ষ্য অর্জিত হবে। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থাকলে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ভারত গ্রিন অ্যামোনিয়ার জন্য বিশ্বের বৃহত্তম বিড প্রকাশ করেছে এবং ইলেক্ট্রোলাইজার ও গ্রিন হাইড্রোজেন উৎপাদনের জন্য ৫০ শতাংশ রপ্তানি অর্ডার বুক করা হয়েছে।
জোশী বলেন, “দশ বছর আগে আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির মানচিত্রে কোথাও ছিলাম না। প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে অনেক কিছু অর্জিত হয়েছে। ভারত প্রকৃতির শক্তিকে কাজে লাগানোর মূল বিষয়ে ফিরে এসেছে এবং কেবল অংশগ্রহণকারী নয়, বরং গ্লোবাল নবায়নযোগ্য জ্বালানির নেতা হিসেবে উঠে এসেছে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিশ্বের ১৭ শতাংশ জনসংখ্যা ভারতে থাকা সত্ত্বেও, ভারতের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বিশ্বের মোট নির্গমনের ৪ শতাংশেরও কম। তবে, প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, ভারত সূর্য এবং বায়ুর শক্তি কাজে লাগিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে নিরাপদ করবে।
আমদানি থেকে স্বনির্ভরতার দিকে
মন্ত্রী জোশী উল্লেখ করেন, “একসময় সোলার পিভি মডিউল চীন এবং অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা হতো। কিন্তু আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, আমরা যখন মডেল এবং উৎপাদকদের অনুমোদিত তালিকা তৈরি করেছি, তখন আমরা প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ (পিএলআই) এবং ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ডিং স্কিমের আওতায় হাজার হাজার কোটি টাকা প্রদান করেছি। এটি পিএম সূর্যঘর যোজনা, পিএম কুসুমের মতো কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পগুলির জন্য স্থানীয়ভাবে সোলার উপাদান উৎপাদনের জন্য করা হয়েছে।” তিনি জানান, সরকারের প্রতিশ্রুতি হলো পলিসিলিকন থেকে মডিউল এবং গ্রিন অ্যামোনিয়া থেকে মিথানল পর্যন্ত সবকিছু ভারতে উৎপাদিত হবে এবং ভারত বিশ্বের নেতা হয়ে উঠবে।
ভারতের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা
জোশী বলেন, “ভারতের জ্বালানি চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। ২০৩২ সালের মধ্যে আমাদের দেশের জ্বালানি চাহিদা দ্বিগুণ হবে। ১৮,১০০টি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। ভারত তার বিশ্বাসযোগ্যতা এবং মানবসম্পদের প্রাপ্যতার কারণে বিশ্বের উৎপাদন কেন্দ্র হয়ে উঠছে। গত ৬০ বছরে ভারতের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ২৬৯ গিগাওয়াট, কিন্তু গত ১০ বছরে তা বেড়ে ৪৫৯ গিগাওয়াটে পৌঁছেছে।”
গুজরাটের ভূমিকা
এই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল প্রধানমন্ত্রী মোদীকে গুজরাটকে ‘উন্নয়নের রোল মডেল এবং গ্রোথ ইঞ্জিন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “ব্যবসা করার সুবিধা, জনমুখী নীতি এবং অবকাঠামোগত সুবিধার কারণে গুজরাট শিল্পপতি এবং উদ্ভাবকদের পছন্দের রাজ্য হয়ে উঠেছে। আমরা এই ঐতিহ্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছি এবং আরও বড় এবং উদীয়মান শিল্পকে আকর্ষণ করতে আত্মনির্ভর গুজরাট নীতি প্রকাশ করেছি।” তিনি জানান, এই নীতির আওতায় ৪৩,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগে ১৮৩টি ইউনিট কার্যকর হয়েছে।
ভারতের নবায়নযোগ্য জ্বালানির যাত্রা
ভারতের এই অগ্রগতি প্রধানমন্ত্রী মোদীর দূরদৃষ্টি এবং নেতৃত্বের ফল। এক দশক আগে ভারত নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি দেখাতে পারেনি। কিন্তু আজ ভারত শুধুমাত্র তৃতীয় বৃহত্তম উৎপাদকই নয়, বরং ৫০০ গিগাওয়াটের লক্ষ্য পূরণের পথে এগিয়ে চলেছে। সোলার মডিউল এবং সেল উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন ভারতকে বিশ্ব বাজারে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাবে।
প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ এবং অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যা আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় শিল্পকে শক্তিশালী করছে। গ্রিন হাইড্রোজেন এবং গ্রিন অ্যামোনিয়ার মতো ক্ষেত্রে ভারতের অগ্রগতি দেশটিকে পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ক্ষেত্রে বিশ্ব নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
গুজরাটের শিল্পায়ন
গুজরাট ভারতের সোলার উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি নেতৃস্থানীয় রাজ্য হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ওয়ারি এনার্জিসের মতো কোম্পানিগুলি এই রাজ্যে তাদের কারখানা স্থাপন করছে, যা গুজরাটের অবকাঠামো এবং শিল্পবান্ধব নীতির প্রতি আস্থা প্রকাশ করে। মুখ্যমন্ত্রী প্যাটেলের মতে, গুজরাটের এই সাফল্য প্রধানমন্ত্রী মোদীর দৃষ্টিভঙ্গির ফল।
ভারতের সোলার মডিউল উৎপাদন ক্ষমতা ১২৫ গিগাওয়াটে পৌঁছানোর লক্ষ্য কেবল একটি সংখ্যা নয়, বরং দেশের পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ভবিষ্যৎ এবং স্বনির্ভরতার প্রতীক। প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে ভারত কেবল নিজের জ্বালানি চাহিদা পূরণ করছে না, বরং বিশ্বকে একটি টেকসই ভবিষ্যতের পথ দেখাচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াটের লক্ষ্য পূরণ ভারতকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে একটি অগ্রণী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।