মশলা রফতানিতে রেকর্ড গড়ল ভারত, বাড়ছে বৈদেশিক চাহিদা ও রাজস্ব

বিশ্বের বৃহত্তম মশলা উৎপাদক দেশ হিসেবে ভারতের (India Spice Exports) সুনাম নতুন কিছু নয়। তবে চলতি অর্থবর্ষে মশলা রফতানিতে যে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে, তা দেশের…

India Sets Record in Spice Exports

বিশ্বের বৃহত্তম মশলা উৎপাদক দেশ হিসেবে ভারতের (India Spice Exports) সুনাম নতুন কিছু নয়। তবে চলতি অর্থবর্ষে মশলা রফতানিতে যে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে, তা দেশের কৃষি ও রফতানি ক্ষেত্রের জন্য এক বড় সাফল্য বলেই মনে করছে শিল্প মহল। বাণিজ্য মন্ত্রকের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এপ্রিল থেকে জুন—এই তিন মাসে ভারতের মশলা রফতানিতে ৬.২% বৃদ্ধি হয়েছে। মোট রফতানির পরিমাণ পৌঁছেছে ১,১৫৬.৪১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি।

এপ্রিল-মে মাসে ঊর্ধ্বগতি, জুনে সামান্য পতন
চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে মশলা রফতানিতে যেমন ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে, তেমনই জুন মাসে তা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। জুনে রফতানি কমে হয়েছে ৩১২.৮৫ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের জুন মাসের তুলনায় ২.২৬% কম (৩২০.০৭ মিলিয়ন ডলার)। তবে এপ্রিল-মে মাসে রফতানি ৯.৭% বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছেছিল ৮৪৩.৬ মিলিয়ন ডলারে, যেখানে আগের বছর একই সময়ে তা ছিল ৭৬৮.৮২ মিলিয়ন ডলার।

   

কোন কোন মশলার চাহিদা বেশি?
এই বৃদ্ধির পেছনে মূল অবদান রেখেছে ওলিওরেসিন, স্পাইস অয়েল, স্পাইস মিক্স, শুকনো লঙ্কা ও বীজজাত মশলা। অল ইন্ডিয়া স্পাইস এক্সপোর্টার্স ফোরামের চেয়ারম্যান ইমানুয়েল নাম্বুসেরিল জানান, “ভ্যালু অ্যাডেড পণ্যের চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি কিছু আন্তর্জাতিক বাজারে আমদানির উপর শুল্ক বাড়ার আশঙ্কায় আগেভাগেই কেনাকাটা করে নিচ্ছে অনেক ক্রেতা। এর ফলে রফতানি বেড়েছে।”

বিশেষত, আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলিতে চিলি, হলুদ, জিরে, ধনে এবং আদা-র চাহিদা বেড়ে গেছে। রান্নার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও ওষুধ শিল্পেও মশলার ব্যবহারের পরিমাণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মহল।

রেকর্ড উচ্চতায় বার্ষিক রফতানি
২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ভারত রফতানি করেছে ১৭.৯৯ লক্ষ টন মশলা ও মশলা-জাত পণ্য, যা গত বছরের ১৫.৪০ লক্ষ টনের তুলনায় প্রায় ১৭% বেশি। আর ডলারে পরিণত করলে এই রফতানির মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪৭২২.৬৫ মিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩-২৪ সালের তুলনায় ৬% বেশি। রুপি মূল্যে এই পরিমাণ হয়েছে ₹৩৯,৯৯৪.৪৮ কোটি, যেখানে আগের বছর তা ছিল ₹৩৬,৯৫৮.৮০ কোটি।

আমেরিকা ও চিন: শীর্ষ ক্রেতা
চিনের পরেই ভারতের মশলার দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা দেশ হল আমেরিকা। চলতি অর্থবর্ষে আমেরিকায় মশলা রফতানি ১৫% বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছেছে ৭১১.১৬ মিলিয়ন ডলারে, যেখানে আগের বছর তা ছিল ৬১৯.২৯ মিলিয়ন ডলার।

Advertisements

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও আশঙ্কা
নাম্বুসেরিল জানান, “আমরা আশা করছি, বছর শেষে মোট রফতানিতে গড়ে ৫% প্রবৃদ্ধি হবে। তবে সেটা নির্ভর করছে আবহাওয়ার অবস্থা ও আন্তর্জাতিক বাজারের স্থিতিশীলতার উপর।” তিনি আরও বলেন, “আগস্ট থেকে আমেরিকা যদি শুল্ক বাড়ায়, তাহলে কিছুটা সমস্যা তৈরি হতে পারে। তবে সঠিক পরিকল্পনা থাকলে সেই প্রভাব সামাল দেওয়া সম্ভব।”

সরকার ও বাণিজ্য মহলের প্রতিক্রিয়া
সরকারি মহল বলছে, এই রফতানি বৃদ্ধির পেছনে কৃষকদের আধুনিক চাষ পদ্ধতি, মশলা প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটগুলির উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক মানের মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অবদান রয়েছে। ভারতীয় মশলার গুণগতমান, সুবাস ও পুষ্টিগুণের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সাফল্য শুধু কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতেই সাহায্য করছে না, বরং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডারকেও সমৃদ্ধ করছে।

ভারতের মশলা রফতানির এই নতুন রেকর্ড নিঃসন্দেহে দেশের কৃষি ও রফতানি ক্ষেত্রে এক ইতিবাচক বার্তা। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের পরিবর্তনশীল নীতি ও সম্ভাব্য শুল্ক বৃদ্ধির ঝুঁকি মাথায় রেখেই ভবিষ্যতের কৌশল ঠিক করতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।