India Sees Tourism Boom: ভারত আজ বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। কোটি কোটি টাকা নিয়ে লক্ষ লক্ষ বিদেশি পর্যটক ভিড় জমাচ্ছেন ভারতের বিভিন্ন শহর ও পর্যটন কেন্দ্রে। সরকারের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে ভারতে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা পৌঁছেছে ৯.৬৬ মিলিয়নে, অর্থাৎ প্রায় ৯৬ লাখ ৬০ হাজার। এই পর্যটকদের ভ্রমণ থেকে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ ২.৭ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি।
এই সংখ্যাগুলো শুধু পরিসংখ্যান নয়, বরং ভারতীয় পর্যটন খাতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিশা দেখাচ্ছে। ২০২৩ সালে যেখানে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৯.৫২ মিলিয়ন এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয় ছিল ২.৩১ লক্ষ কোটি টাকা, সেখানে ২০২৪ সালে তা আরও বেড়ে গেছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, বিশ্বজুড়ে ভ্রমণপিপাসুরা ভারতের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন আগের চেয়েও বেশি।
এই বিপুল পর্যটন বৃদ্ধির পেছনে কাজ করছে একাধিক কারণ। ভারতের সংস্কৃতি, ইতিহাস, আধ্যাত্মিকতা ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য আগেও ছিল, তবে বর্তমান সরকারের উদ্যোগে তা আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে। বিশেষ করে আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে সরকার যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তা বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারতের ভিসা নীতিতে একাধিক শিথিলতা আনা হয়েছে। ‘ই-ট্যুরিস্ট ভিসা’ চালু হওয়ার ফলে এখন বিশ্বের অধিকাংশ দেশের নাগরিকেরা সহজেই ভারতে আসতে পারছেন। পাশাপাশি, বিমানবন্দর, রেল স্টেশন ও হোটেল পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণে সরকারের বিনিয়োগও পর্যটকদের অভিজ্ঞতাকে আরও আনন্দদায়ক করে তুলেছে।
ধর্মীয় পর্যটনের ক্ষেত্রেও ভারত নতুন এক দিগন্তে পা রেখেছে। বারাণসী, অযোধ্যা, মথুরা, রামেশ্বরম, বুদ্ধগয়া, হেমকুণ্ড সাহিব, অমৃতসর, পুনে কিংবা যোগতীর্থ ঋষিকেশ—এই সব জায়গাগুলোতে বিদেশি পর্যটকদের ভিড় দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর পাশাপাশি, কাশ্মীর, লাদাখ, কেরালা, গোয়া, আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর স্থানগুলোও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
এছাড়াও ভারতের ‘মেডিক্যাল ট্যুরিজম’ বা চিকিৎসা পর্যটনও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। তুলনামূলকভাবে কম খরচে উচ্চমানের চিকিৎসা সুবিধা পাওয়ার জন্য বহু বিদেশি নাগরিক ভারতে আসছেন। এতে করে দেশের স্বাস্থ্য খাতও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে।
অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই পর্যটন প্রবাহ দেশের জন্য এক বিশাল আশীর্বাদ। পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে কেবল সরকার নয়, উপকৃত হচ্ছেন স্থানীয় হোটেল, রেস্টুরেন্ট, গাড়ি পরিষেবা, পর্যটন গাইডসহ হাজার হাজার মানুষ। কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে গ্রামীণ এলাকাতেও, যেখানে পর্যটনের প্রভাবে হস্তশিল্প, লোকসংস্কৃতি ও স্থানীয় পণ্য বিকাশ পাচ্ছে।
ভারত সরকারের ‘ডেকো ইন্ডিয়া’ ও ‘ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া’ ক্যাম্পেইনের সফলতা এবং জি-২০ সম্মেলনসহ আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের কার্যকলাপও এই উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ভারত এখন শুধু ইতিহাস ও সংস্কৃতির দেশ নয়, বরং একটি আধুনিক পর্যটন হাব। লক্ষ লক্ষ বিদেশি পর্যটক এবং কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মধ্য দিয়ে ভারতীয় পর্যটন খাত এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। আগামী দিনে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা।