ভারতে চালের রপ্তানি মূল্য নিম্নমুখী

ভারতীয় চালের রপ্তানি মূল্য এবার কমে গেছে এবং এটি জুন ২০২৩-এর পর সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে। এই মূল্যহ্রাসের প্রধান কারণ হলো ম্লান চাহিদা এবং পর্যাপ্ত সরবরাহ।…

india-rice-export-prices-decline

short-samachar

ভারতীয় চালের রপ্তানি মূল্য এবার কমে গেছে এবং এটি জুন ২০২৩-এর পর সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে। এই মূল্যহ্রাসের প্রধান কারণ হলো ম্লান চাহিদা এবং পর্যাপ্ত সরবরাহ। এদিকে, ভিয়েতনাম থেকে চালের চাহিদা এখনো অত্যন্ত উচ্চ, যা ভারতীয় চালের বাজারে চাপ তৈরি করেছে।

   

ভারতের ৫ শতাংশ ভাঙা পারবয়েলড চালের মূল্য বর্তমানে ৪৯০ থেকে ৪১৫ ডলার প্রতি মেট্রিক টন, যা আগের সপ্তাহে ৪১৩-৪২০ ডলার প্রতি মেট্রিক টনের মধ্যে ছিল। একইভাবে, ভারতীয় ৫ শতাংশ ভাঙা সাদা চালের মূল্য বর্তমানে ৩৯০ থেকে ৪০০ ডলার প্রতি মেট্রিক টন হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা ইকোনমিক টাইমস রিপোর্ট করেছে।

নতুন দিল্লির একটি বৈশ্বিক বাণিজ্য সংস্থার ডিলার অনুযায়ী, ভিয়েতনাম আন্তর্জাতিক বাজারে চাল বিক্রির ক্ষেত্রে আক্রমণাত্মক মনোভাব গ্রহণ করেছে এবং এটি অন্যান্য দেশের বাজারে দামের উপর চাপ তৈরি করছে। বুধবার, ভিয়েতনামের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে তারা বাংলাদেশে ১,০০,০০০ টন সাদা চাল রপ্তানির জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে এবং নতুন ও পুরানো বাজারে ভিয়েতনামি চালের চাহিদা বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেবে। সরকারি সংবাদমাধ্যমের সূত্রে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এছাড়া, বৃহস্পতিবার, ভিয়েতনামের ৫ শতাংশ ভাঙা চালের মূল্য ছিল ৩৮৯ ডলার প্রতি মেট্রিক টন, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৩৯৩ ডলার। এই মূল্য হ্রাসের ফলে ভারতীয় চালের বাজারের ওপর চাপ পড়েছে এবং ভিয়েতনামি চালের বাজার আরো প্রবল হয়ে উঠেছে।

ভারতীয় সরকার সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ফলে তারা ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চালু করা ভাঙা চালের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (DGFT) একটি নোটিফিকেশন প্রকাশ করে জানায় যে, ভাঙা চাল রপ্তানি এখন ‘ফ্রি ক্যাটেগরি’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে ভারতীয় চাল রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন এক দিগন্ত খুলে গেছে।

বাংলাদেশের মধ্যে চালের দাম অত্যন্ত বেড়ে গেছে, যদিও কর্তৃপক্ষ বিদেশ থেকে চাল আমদানি বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে, এই প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, চালের দাম কমানোর ক্ষেত্রে তেমন কোনো সাফল্য আসেনি। এর ফলে বাংলাদেশের ভোক্তাদের জন্য চাপ বাড়ছে।

থাইল্যান্ডে, চালের চাহিদা বেশ স্থিতিশীল রয়েছে এবং দাম পরিবর্তন ব্যাপকভাবে এক্সচেঞ্জ রেটের উপর নির্ভরশীল। এতে করে দেশের বাজারে কিছুটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

ভারতের চাল রপ্তানি বাজারে বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা অস্থির হলেও, সরকার কর্তৃক ভাঙা চাল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছে। তবে, ভিয়েতনাম থেকে চালের উচ্চ চাহিদা এবং তাদের আক্রমণাত্মক রপ্তানি নীতির কারণে ভারতের চাল রপ্তানি বাজারে চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, বাংলাদেশের চাহিদা এবং বাংলাদেশের বাজারে দাম বাড়ানোর প্রচেষ্টা ভারতীয় চাল রপ্তানির জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে, যদি ভারত তার উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে পারে এবং নতুন বাজারের সন্ধান পায়।

এছাড়া, ভারতীয় চালের বাজারের জন্য আগামী দিনগুলো কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে যদি আন্তর্জাতিক বাজারে ভিয়েতনামী চালের দাম কমতে থাকে এবং বিশ্বব্যাপী চালের সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। তবে, ভারত যদি তার ভাঙা চাল রপ্তানি আরো বৃদ্ধি করতে পারে, তাহলে তা আন্তর্জাতিক বাজারে তার অবস্থান শক্তিশালী করতে সহায়ক হতে পারে।

ভারতীয় চালের রপ্তানি বাজারে ২০২৩ সালের জুনের পর সর্বনিম্ন দাম পাওয়া গেলেও, বিশ্বের বাজারে ভিয়েতনাম থেকে চালের উচ্চ চাহিদা এবং ভারতের চাল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পদক্ষেপগুলো কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছে। তবে, ভবিষ্যতে এই বাজারে দাম এবং চাহিদার সমন্বয় বজায় রাখতে হলে ভারতকে বেশ কিছু কৌশলগত পদক্ষেপ নিতে হতে পারে।