নয়াদিল্লি: বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ চাল রফতানিকারক দেশ হিসেবে ভারতের অবস্থান আরও শক্তিশালী হতে চলেছে। কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রফতানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (APEDA)-এর চেয়ারম্যান অভিষেক দেব জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরে দেশটি ২৬টি নতুন আন্তর্জাতিক বাজারে চাল রফতানির লক্ষ্য স্থির করেছে।
এই তালিকায় রয়েছে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ব্রিটেন, মেক্সিকো, সৌদি আরব, ভিয়েতনাম, ইরাক, মার্কিন আমেরিকা, মালয়েশিয়া, চীন, ফ্রান্স, সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE), ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, বেলজিয়াম, জার্মানি, কেনিয়া এবং জাপানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাজার।
ছটপুজোয় পরিযায়ী বিহারীদের ‘বড় বার্তা’ দিলেন প্রশান্ত কিশোর
অভিষেক দেব শুক্রবার জানান, সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের চাল রফতানি বেড়েছে ৩৩.১৮ শতাংশ, যার মোট মূল্য ৯২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই বৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ শতাংশে মোট রফতানি মূল্য ৫.৬৩ বিলিয়ন ডলার। এপিডিএ-র তরফে জানানো হয়েছে, ভারত বর্তমানে ১৭২টিরও বেশি দেশে চাল রফতানি করে, এবং নতুন বাজার খুলে দিয়ে সরকার এই সংখ্যা আরও বাড়াতে চায়।
এই প্রেক্ষিতে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে “ভারত ইন্টারন্যাশনাল রাইস কনফারেন্স (BIRC) ২০২৫”, যা আয়োজিত হবে নয়াদিল্লির ভারত মণ্ডপমে। এই দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করছে ইন্ডিয়ান রাইস এক্সপোর্টার্স ফেডারেশন (IREF), এপিডিএ-র সহযোগিতায়।
চেয়ারম্যান অভিষেক দেব বলেন, “এই সম্মেলন উৎপাদক, রফতানিকারক, আমদানিকারক, নীতিনির্ধারক, অর্থনৈতিক সংস্থা, লজিস্টিক বিশেষজ্ঞ, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং পরিষেবা প্রদানকারীদের একত্র করবে। লক্ষ্য একটাই বিশ্ব চাল বাণিজ্যে স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং স্থিতিশীলতা বাড়ানো।”
বাণিজ্য মন্ত্রকের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই কনফারেন্স থেকে প্রায় ১.৮০ লক্ষ কোটি টাকার নতুন চাল আমদানির বাজার উন্মোচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি ২৫,০০০ কোটি টাকার রফতানি সমঝোতা চুক্তি (MoU) স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই সম্মেলনে যোগ দেবেন ৩,০০০-এরও বেশি কৃষক ও কৃষক উৎপাদক সংগঠন (FPO), ৮০টিরও বেশি দেশের প্রায় ১,০০০ বিদেশি ক্রেতা, এবং ২,৫০০ রফতানিকারক, মিলার ও সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিনিধিরা।
ভারতের কৃষি উৎপাদনেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ২০২৪-২৫ সালে প্রায় ৪৭ মিলিয়ন হেক্টর জমি থেকে ১৫০ মিলিয়ন টন চাল উৎপাদন হয়েছে, যা বিশ্বের মোট চাল উৎপাদনের প্রায় ২৮ শতাংশ। ২০১৪-১৫ সালে যেখানে গড় ফলন ছিল প্রতি হেক্টরে ২.৭২ টন, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.২ টনে। এই উন্নতি সম্ভব হয়েছে উন্নত জাতের বীজ, আধুনিক চাষপদ্ধতি এবং সেচব্যবস্থার প্রসারের কারণে।
২০২৪-২৫ সালে ভারত ২০.১ মিলিয়ন মেট্রিক টন চাল রফতানি করেছে, যার মোট মূল্য প্রায় ১২.৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এবং এর মাধ্যমে পৌঁছেছে ১৭২টিরও বেশি দেশে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের এই সাফল্য কেবলমাত্র কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির নয়, বরং বাণিজ্যিক কূটনীতি এবং কৃষকদের আর্থিক স্বনির্ভরতারও প্রতিফলন। ভারতীয় চাল এখন বিশ্ববাজারে মান, পরিমাণ এবং বিশ্বাসযোগ্যতার প্রতীক হয়ে উঠছে।


