India Bangladesh trade relations: সম্প্রতি বাংলাদেশে কিছু রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলের পক্ষ থেকে ভারতীয় পণ্যের বয়কটের ডাক দেওয়ার প্রেক্ষাপটে ভারত এক কড়া বাণিজ্যিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা বাংলাদেশি রপ্তানির ওপর তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
শনিবার ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক (RMG) এখন থেকে শুধুমাত্র কলকাতা ও নাভা-শেভা সমুদ্রবন্দর দিয়ে ভারত প্রবেশ করতে পারবে। পাশাপাশি প্লাস্টিক সামগ্রী, কাঠের আসবাব, কার্বোনেটেড পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফল-স্বাদযুক্ত পানীয়, তুলা এবং তুলার বর্জ্যসহ একাধিক ভোগ্যপণ্য আর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে না। এই নতুন বিধিনিষেধ অবিলম্বে কার্যকর হয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পণ্য বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধাক্কা আনবে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বড় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে, যার মধ্যে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য ভারতে যায়। এর ৯৩ শতাংশই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করত।
ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই নিষেধাজ্ঞা মূলত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর পণ্যের ওপর ধারাবাহিক নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়া। দীর্ঘদিন ধরেই ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সব স্থলবন্দর ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানির সুযোগ দিলেও বাংলাদেশ ভারতের সুতো, চালসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে আসছে।
The Directorate General of Foreign Trade (DGFT), Ministry of Commerce and Industry, has issued a notification imposing port restrictions on the import of certain goods such as Readymade garments, processed food items etc., from Bangladesh to India. However, such said port… pic.twitter.com/7Ba9ixokt6
— ANI (@ANI) May 17, 2025
সম্প্রতি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতীয় সুতা রপ্তানি ১৩ এপ্রিল থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হিলি ও বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে চাল প্রবেশও ১৫ এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে। একই সঙ্গে ভারতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে কঠোর চেকিং ও অতিরিক্ত ট্রানজিট চার্জ আরোপ করায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর শিল্প বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অবনতি শুরু হয় শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর। ২০২৪ সালের আগস্টে বিশাল বিরোধী আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। তার অনুপস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা থামাতে ব্যর্থ হয়, যা দুই দেশের সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করে
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের একতরফা সুবিধা গ্রহণের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ভারত এবার স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বাজার বাংলাদেশি পণ্যের জন্য উন্মুক্ত থাকলেও, বাংলাদেশ ভারতীয় পণ্যের জন্য একাধিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রেখেছে। এতে স্থানীয় উৎপাদন শিল্পের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ভারতের এই নতুন কৌশল মূলত ‘আত্মনির্ভর ভারত’ নীতির অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্থানীয় শিল্প ও কৃষকদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য এই বিধিনিষেধ অত্যন্ত সময়োপযোগী বলেই মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা।
এই পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ভারতীয় পক্ষের ভাষায়, এটি কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নয়, বরং সমতা ও পারস্পরিক স্বার্থ সংরক্ষণের একটি পদক্ষেপ। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় কী ধরনের জবাব আসে, তা ভবিষ্যতের কূটনৈতিক পরিস্থিতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
ভারত এমন সময়ে এই পদক্ষেপ নিল যখন উভয় দেশের জনগণের একাংশ পারস্পরিক পণ্যের ওপর নির্ভরশীল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পুনঃপ্রতিষ্ঠা এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি। তবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা নতুন সমীকরণ তৈরি করতে চলেছে — যেখানে একতরফা সুবিধা আর গ্রহণযোগ্য নয়।