ভারতের খুচরা ব্যাবসা ১৯০ লাখ কোটির মাইলফলক ছোঁবে!

ভারতের খুচরা বাজার ২০৩৪ সালের মধ্যে ১৯০ লাখ কোটি টাকারও বেশি হতে পারে, এমনটাই জানিয়েছে একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট। “ভিনিং ইন ভারত অ্যান্ড ইন্ডিয়া: দ্য রিটেইল…

india-retail-market-expected-to-cross-rs-190-lakh-crore-by-2034-report

ভারতের খুচরা বাজার ২০৩৪ সালের মধ্যে ১৯০ লাখ কোটি টাকারও বেশি হতে পারে, এমনটাই জানিয়েছে একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট। “ভিনিং ইন ভারত অ্যান্ড ইন্ডিয়া: দ্য রিটেইল ক্যালিডোস্কোপ” নামক এই গবেষণাপত্রটি যৌথভাবে প্রস্তুত করেছে বোস্টন কনসালটিং গ্রুপ (BCG) এবং রিটেইলারস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (RAI)। রিপোর্টটি নির্দেশ করেছে যে, খুচরা ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন শহরে থাকা ভোক্তাদের বিশেষ চাহিদা চিনে তাদের অনুযায়ী ব্যবসা কিভাবে সম্প্রসারণ করবে তা সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

গবেষণাটি জানাচ্ছে যে, ২০২৪ সালে ভারতের অভ্যন্তরীণ খুচরা বাজারের আকার দাঁড়িয়েছে ৮২ লাখ কোটি টাকা। এটি ২০১৪ সালে ৩৫ লাখ কোটি টাকার বাজার থেকে বেড়ে ৮.৯ শতাংশের বেশি বৃদ্ধির হার অর্জন করেছে। দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান ভোক্তা আধারের বৈচিত্র্যের কারণে এই উল্লম্ফন ঘটেছে।

kolkata24x7-sports-News

   

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে যে, ভারতের ভোক্তা খাতের বৃদ্ধির গতি একটানা ধারা বজায় রেখেছে এবং আগামী ২০২৪ থেকে ২০৩৪ সালের মধ্যে খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি হবে। খুচরা বাজারের সম্প্রসারণের হার সামগ্রিক ভোক্তাদের খরচ বৃদ্ধির থেকে দ্রুত হওয়ায় এটি খুচরা খাতের স্থিতিস্থাপকতা এবং শক্তিশালী গতির প্রতিফলন।

গবেষণাটি খুচরা ব্যবসায়ীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছে: ভোক্তাদের চাহিদার মধ্যে বৈচিত্র্য এবং শহরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে আলাদা চাহিদা চিহ্নিত করতে হবে। কিছু পরিবার যেহেতু আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়ে উঠছে, সেহেতু দাম-পরিপূরক পণ্য এবং মূল্যবোধকে মূল্যায়ন করে ক্রয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই বিষয়ে ব্যবসায়ীদের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ হলো “আকাঙ্ক্ষা” এবং “ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য রাখা”।

গবেষণায় বলা হয়, ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এমন অর্থনীতি হওয়ার পরেও এখানে বড় ধরনের বৈপরীত্য রয়েছে। একটি ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণী, মূল্য সাশ্রয়ী গ্রাহকগণ, ডিজিটালি সচেতন জেন জেড এবং ক্রমবর্ধমান নারী কর্মশক্তি সকলেই নতুন ক্রয় আচরণ তৈরি করতে সাহায্য করছে। এই বৈচিত্র্যকে সঠিকভাবে বোঝার জন্য ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন গ্রুপের উপর লক্ষ্য রাখতে হবে।

গবেষণাটি আরও বলেছে, যে রিটেইলাররা নির্ধারণ করবেন “কোথায় তারা ব্যবসা করতে চান”। কিছু ব্যবসায়ী যেমন দ্রুত পরিবর্তনশীল পোশাক বা বৃহত্তর বাজারের দ্রব্যের ক্ষেত্রে দক্ষতা এবং মূল্য খুঁজে নিতে চাইবেন, আবার কিছু ব্যবসায়ী বিশেষ বাজার খাতে তাদের ব্যবসা বিস্তার করবেন এবং উন্নত ডিজিটাল টুল ব্যবহার করবেন। এতে তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতীয় বাজারে বৈশ্বিক খুচরা ব্যবসায়ীসহ অনেক স্থানীয় ব্র্যান্ড এখন বাড়তি নজর দিচ্ছে। বিশেষত ভারতীয় মধ্যবিত্তের ক্রমবর্ধমান শক্তি এবং ডিজিটালি দক্ষ শ্রেণী নতুন বাজার তৈরি করেছে।

তবে, ভারতীয় খুচরা ব্যবসায়ীদের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্য ও আধুনিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যবসা গড়ে তোলা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেই সঙ্গে ক্রেতাদের চাহিদা, বাজারের উন্নয়ন এবং বৈচিত্র্য বিবেচনা করেও কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

এই প্রতিবেদনের সাপেক্ষে, বিশেষজ্ঞরা জানান যে, রিটেইল ব্যবসায়ীদেরকে আগামী দিনে তাদের কৌশল সমন্বিতভাবে তৈরি করতে হবে এবং তাদের গ্রাহকদের বৈচিত্র্যপূর্ণ চাহিদার মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে হবে।

ভারতের খুচরা বাজার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এটি আগামী কয়েক বছরে আরও বিস্তৃত হতে চলেছে। ভারতীয় খুচরা ব্যবসায়ীরা এই উন্নতির সুযোগ গ্রহণ করে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের অবস্থান মজবুত করতে পারবে। তবে, তাদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ হবে যে তারা কেবলমাত্র আর্থিক শক্তির ওপরই নির্ভর না হয়ে, ভোক্তার আচরণ ও চাহিদা অনুযায়ী ব্যবসায়িক কৌশল তৈরি করবে।

এমনকি ভোক্তাদের আকাঙ্ক্ষা এবং সাশ্রয়ী মূল্যের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারলে ভারতীয় খুচরা খাত বিশ্বব্যাপী একটি উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।