ভারতের খুচরো মূল্যস্ফীতি এপ্রিল মাসে নেমেছে ৩.১৬ শতাংশে

India Retail Inflation: ভারতের খুচরা মুদ্রাস্ফীতি, যা কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) এর উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়, এপ্রিল ২০২৫-এ ৩.১৬ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি জুলাই…

India Retail Inflation

India Retail Inflation: ভারতের খুচরা মুদ্রাস্ফীতি, যা কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) এর উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়, এপ্রিল ২০২৫-এ ৩.১৬ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি জুলাই ২০১৯-এর পর সর্বনিম্ন মুদ্রাস্ফীতির হার। মঙ্গলবার প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতির তীব্র হ্রাস এই পতনের প্রধান কারণ। মার্চ ২০২৫-এর তুলনায় এপ্রিলে মুদ্রাস্ফীতি ১৮ বেসিস পয়েন্ট কমেছে, যা ভারতীয় অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত।

এপ্রিল ২০২৫-এ খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি
অল ইন্ডিয়া কনজিউমার ফুড প্রাইস ইনডেক্স (সিএফপিআই) এর ভিত্তিতে এপ্রিল ২০২৫-এ খাদ্য মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ১.৭৮ শতাংশ (অস্থায়ী), যা অক্টোবর ২০২১-এর পর সর্বনিম্ন। মার্চ ২০২৫-এর তুলনায় এপ্রিলে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ৯১ বেসিস পয়েন্ট কমেছে। গ্রামীণ এলাকায় খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ১.৮৫ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ১.৬৪ শতাংশ হয়েছে। সবজি, ডাল এবং শস্যের দাম হ্রাসের ফলে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

   

এপ্রিল ২০২৫-এ সিপিআই এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ
আনন্দ রাঠি গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং নির্বাহী পরিচালক সুজন হাজরা বলেছেন, “ভারতের সিপিআই মুদ্রাস্ফীতি এপ্রিল ২০২৫-এ ছয় বছরের সর্বনিম্ন ৩.১৬ শতাংশে পৌঁছেছে। সবজি, ডাল এবং শস্যের দাম কমার কারণে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি অক্টোবর ২০২১-এর পর সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন, নরম খাদ্য এবং অপরিশোধিত তেলের দাম মুদ্রাস্ফীতিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (আরবিআই) ৪ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার নিচে রাখতে সাহায্য করবে। এটি আসন্ন মনিটারি পলিসি কমিটি (এমপিসি) বৈঠকে রেপো রেট কমানোর সম্ভাবনা তৈরি করেছে। তবে, তিনি সতর্ক করে বলেন, সেবা খাতের মুদ্রাস্ফীতি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় কোর মুদ্রাস্ফীতির উপর কিছু চাপ থাকতে পারে। সামগ্রিকভাবে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় নীতির ফোকাস এখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে স্থানান্তরিত হবে। এটি সুদের হার হ্রাসের সঙ্গে কর্পোরেট উপার্জন এবং ভারতীয় ইকুইটি মার্কেটের জন্য ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করবে।

গ্রামীণ এবং শহরাঞ্চলের মুদ্রাস্ফীতি
এপ্রিল ২০২৫-এ গ্রামীণ এলাকায় সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি মার্চের ৩.২৫ শতাংশ থেকে কমে ২.৯২ শতাংশে এবং খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ২.৮২ শতাংশ থেকে কমে ১.৮৫ শতাংশে পৌঁছেছে। শহরাঞ্চলে সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি সামান্য কমে ৩.৪৩ শতাংশ থেকে ৩.৩৬ শতাংশে এবং খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়ে ২.৪৮ শতাংশ থেকে ১.৬৪ শতাংশে নেমেছে।

অন্যান্য খাতে, আবাসন মুদ্রাস্ফীতি মার্চের ৩.০৩ শতাংশ থেকে কমে এপ্রিলে ৩.০০ শতাংশে এসেছে। শিক্ষা খাতের মুদ্রাস্ফীতি ৩.৯৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪.১৩ শতাংশে পৌঁছেছে, যা গ্রামীণ এবং শহরাঞ্চল উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। স্বাস্থ্য খাতের মুদ্রাস্ফীতি প্রায় স্থিতিশীল, মার্চের ৪.২৬ শতাংশ থেকে এপ্রিলে ৪.২৫ শতাংশে রয়েছে। পরিবহন এবং যোগাযোগ মুদ্রাস্ফীতি ৩.৩৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩.৭৩ শতাংশে এবং জ্বালানি ও আলোর মুদ্রাস্ফীতি ১.৪২ শতাংশ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে ২.৯২ শতাংশে পৌঁছেছে। এই হারগুলি গ্রামীণ এবং শহরাঞ্চলের সম্মিলিত পরিসংখ্যানের প্রতিনিধিত্ব করে।

Advertisements

এপ্রিল ২০২৫-এ সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতির রাজ্য
এপ্রিল মাসে কেরালায় সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতি রেকর্ড করা হয়েছে, যা ৫.৯৪ শতাংশ। এরপরে রয়েছে কর্ণাটক (৪.২৬ শতাংশ) এবং জম্মু ও কাশ্মীর (৪.২৫ শতাংশ)। এই রাজ্যগুলিতে মুদ্রাস্ফীতির হার জাতীয় গড়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি, যা স্থানীয় অর্থনৈতিক অবস্থা এবং ভোক্তা ব্যয়ের ধরণের পার্থক্য নির্দেশ করে।

অর্থনৈতিক প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
মুদ্রাস্ফীতির এই হ্রাস ভোক্তাদের জন্য সুখবর, কারণ এটি ক্রয় ক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি আরবিআই-এর ৪ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার নিচে থাকায়, সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা বেড়েছে, যা ঋণগ্রহীতাদের জন্য সুবিধাজনক হবে। তবে, কিছু বিশ্লেষক সতর্ক করে বলেছেন, দুর্বল চাহিদার কারণে মুদ্রাস্ফীতি কম হতে পারে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

এক্স-এ পোস্ট অনুসারে, এপ্রিলের মুদ্রাস্ফীতি ৩.১৬ শতাংশে নেমে আসায় জীবনযাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গত ছয় বছরে সবচেয়ে সস্তা হয়েছে। এটি ভারতীয় অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এবং আরবিআই-এর প্রবৃদ্ধি-পন্থী মুদ্রানীতির কার্যকারিতার ইঙ্গিত দেয়।

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় ভারত সরকার এবং আরবিআই এখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিকে মনোযোগ দিতে পারে। তবে, সেবা খাতের ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং কিছু রাজ্যে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির হার নীতিনির্ধারকদের জন্য নজরদারির বিষয় হিসেবে থাকবে। আগামী মাসগুলিতে মুদ্রাস্ফীতির প্রবণতা এবং আরবিআই-এর নীতিগত সিদ্ধান্ত ভারতের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।