গ্লোবাল স্টার্টআপ র‍্যাংকিংয়ে তৃতীয় স্থানে ভারত, শীর্ষে কে জানুন

ভারতের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম (Global startup ecosystem) ২০২৫ সালের শুরুতে শক্তিশালী বৃদ্ধি দেখিয়েছে এবং ২.৫ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ২১০০০ কোটি টাকা) তহবিল সংগ্রহ করে বিশ্বে তৃতীয়…

India Ranks Third in Global Startup Ecosystem

ভারতের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম (Global startup ecosystem) ২০২৫ সালের শুরুতে শক্তিশালী বৃদ্ধি দেখিয়েছে এবং ২.৫ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ২১০০০ কোটি টাকা) তহবিল সংগ্রহ করে বিশ্বে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। ট্র্যাক্সনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমেরিকা এবং যুক্তরাজ্যের পরেই ভারতের অবস্থান। এই সময়ে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হিসেবে দিল্লি বেঙ্গালুরুকে ছাড়িয়ে মোট তহবিল সংগ্রহে শীর্ষে উঠে এসেছে, যা ভারতের স্টার্টআপ ল্যান্ডস্কেপে নতুন গতিপথ তৈরি করেছে।

   

দিল্লি বনাম বেঙ্গালুরু: তহবিলের লড়াই

ট্র্যাক্সনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেঙ্গালুরুতে স্টার্টআপ চুক্তির সংখ্যা বেশি থাকলেও দিল্লি মোট তহবিলের পরিমাণে এগিয়ে গেছে। এর পিছনে প্রধান কারণ হল দিল্লির শক্তিশালী আইপিও (ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং) প্রস্থান। দিল্লি-ভিত্তিক প্রযুক্তি সংস্থাগুলো ভারতের মোট স্টার্টআপ তহবিলের ৪০ শতাংশ দখল করেছে, যেখানে বেঙ্গালুরুর অংশ ২১.৬৪ শতাংশ। এই পরিবর্তন ভারতের স্টার্টআপ মানচিত্রে একটি নতুন গতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়।
ট্র্যাক্সনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নেহা সিং মানি কন্ট্রোলকে বলেন, “ভারত আজ স্টার্টআপ কার্যকলাপ এবং তহবিল সংগ্রহের দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম বড় ইকোসিস্টেমে পরিণত হয়েছে।” তিনি আরও জানান, ভারত এখন ইউনিকর্ন (১ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যায়নের স্টার্টআপ) এবং পরিপক্ক স্টার্টআপ সংখ্যার দিক থেকেও বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

Advertisements

তহবিলের প্রবণতা: লেট-স্টেজ বৃদ্ধি, আর্লি-স্টেজ হ্রাস

ট্র্যাক্সনের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে লেট-স্টেজ তহবিল (পরিপক্ক স্টার্টআপগুলোর জন্য) বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে আর্লি-স্টেজ বিনিয়োগ (নতুন স্টার্টআপগুলোর জন্য) কমেছে। নেহা সিং এই প্রবণতার কারণ হিসেবে ২০২৪ সালে আইপিও বাজারের উল্লেখযোগ্য উত্থানকে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, “গত বছর অনেক ভেঞ্চার-সমর্থিত কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে পাবলিক হয়েছে। এটি সাফল্যের গল্প তৈরি করেছে এবং আরও পরিপক্ক স্টার্টআপগুলোকে আইপিও বাজারে প্রবেশের পথ দেখিয়েছে।”

এই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে ভারতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) তহবিল বেশিরভাগ অ্যাপ্লিকেশনের দিকে মনোনিবেশ করছে, অবকাঠামোর তুলনায়। এছাড়া, কুইক কমার্স সেক্টর দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ব্লিঙ্কিট, জেপটো এবং সুইগি ইনস্টামার্টের সাফল্যের দ্বারা চালিত হচ্ছে।

মার্জার ও অধিগ্রহণে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি

প্রতিবেদনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে—২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে মার্জার এবং অধিগ্রহণ (এমএন্ডএ) চুক্তির সংখ্যা তীব্রভাবে বেড়েছে। এই সময়ে ৩৮টি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি ভারতের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের পরিপক্কতা এবং বিনিয়োগকারীদের কৌশলগত আগ্রহের প্রতিফলন।

বাংলার প্রেক্ষাপটে স্টার্টআপের সম্ভাবনা

পশ্চিমবঙ্গে স্টার্টআপ কার্যকলাপ এখনও দিল্লি বা বেঙ্গালুরুর মতো শহরের তুলনায় পিছিয়ে থাকলেও, এই রাজ্যে সম্ভাবনার অভাব নেই। কলকাতা এবং শিলিগুড়ির মতো শহরগুলোতে প্রযুক্তি-ভিত্তিক স্টার্টআপ এবং কুইক কমার্সের উত্থান দেখা যাচ্ছে। বাংলার তরুণ উদ্যোক্তারা এআই, শিক্ষা প্রযুক্তি (এডটেক) এবং স্বাস্থ্য প্রযুক্তি (হেলথটেক) খাতে কাজ শুরু করেছেন। তবে, তহবিল এবং অবকাঠামোর অভাব এখনও এখানকার স্টার্টআপগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

ভারতের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে তৃতীয় স্থান অর্জন বাংলার উদ্যোক্তাদের জন্যও অনুপ্রেরণার। রাজ্য সরকার যদি স্টার্টআপ নীতি এবং বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ায়, তবে কলকাতা ভবিষ্যতে দেশের শীর্ষ স্টার্টআপ কেন্দ্রগুলোর একটিতে পরিণত হতে পারে।

বিশ্বে শীর্ষে আমেরিকা

ট্র্যাক্সনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা। সিলিকন ভ্যালি, নিউ ইয়র্ক এবং লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো শহরগুলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় তহবিল সংগ্রহ করে এবং ইউনিকর্ন সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য, যেখানে লন্ডন একটি প্রধান স্টার্টআপ হাব হিসেবে কাজ করছে। ভারত এই দুই দেশের পরেই তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে, যা দেশের উদ্যোক্তা শক্তি এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার প্রমাণ।

ভারতের স্টার্টআপ সেক্টরের ভবিষ্যৎ

ভারতের স্টার্টআপ খাতে কয়েকটি প্রধান প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রথমত, এআই অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ছে, যা শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং বাণিজ্যে নতুন সমাধান নিয়ে আসছে। দ্বিতীয়ত, কুইক কমার্সের উত্থান গ্রাহকদের দ্রুত সেবা প্রদানের প্রতিযোগিতাকে তীব্র করেছে। তৃতীয়ত, আইপিও এবং এমএন্ডএ-এর মাধ্যমে স্টার্টআপগুলো পরিপক্কতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
নেহা সিংয়ের মতে, ভারতের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের এই বৃদ্ধি দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের পথে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত। তবে, তিনি এও বলেন যে আর্লি-স্টেজ স্টার্টআপগুলোর জন্য তহবিল বাড়ানো এবং সরকারি নীতির সমর্থন আরও জোরদার করা প্রয়োজন।

বাংলার সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

বাংলার স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কলকাতায় কিছু উল্লেখযোগ্য স্টার্টআপ দেখা গেলেও, বেঙ্গালুরু বা দিল্লির মতো তহবিল এবং অবকাঠামো এখানে সীমিত। তবে, রাজ্যের শিক্ষিত তরুণ জনশক্তি এবং ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল অর্থনীতি স্টার্টআপ বৃদ্ধির জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি প্রদান করতে পারে।

স্থানীয় উদ্যোক্তারা মনে করেন, সরকারি নীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সমর্থন বাড়লে বাংলা ভারতের স্টার্টআপ মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কুইক কমার্স এবং এডটেকের মতো খাতে বাংলার সম্ভাবনা অনেক।

ভারতের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম বিশ্বে তৃতীয় স্থানে পৌঁছে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক অর্জন করেছে। আমেরিকা এবং যুক্তরাজ্যের পরে এই অবস্থান ভারতের উদ্ভাবনী শক্তি এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার প্রমাণ। দিল্লির উত্থান এবং বেঙ্গালুরুর শক্তিশালী উপস্থিতি দেখায় যে ভারতের স্টার্টআপগুলো কেবল বড় শহরেই নয়, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলার জন্যও এটি একটি সুযোগ, যদি সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়।