২০২৫ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ক্ষমতাশালী ৫০টি রাষ্ট্রের তালিকায় ভারত (India) ১২ নম্বরে রয়েছে। এই তালিকা প্রণয়ন করেছে আমেরিকার একটি বিশিষ্ট সংস্থা, ইউএস নিউজ এন্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক শক্তি, রাজনৈতিক প্রভাব, সামরিক ক্ষমতা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ভিত্তিতে এই র্যাঙ্কিং প্রকাশ করে। তবে এই তালিকায় ভারতের ১২ নম্বরের অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন মতামত প্রকাশিত হচ্ছে। কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন যে ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক এবং সামরিক উন্নতি বিবেচনা করলে এই র্যাঙ্কিংয়ে ভারত আরও উপরে থাকার কথা ছিল। আসুন এই বিষয়টি বিস্তারিতভাবে নিয়ে জানি।
ভারতের শক্তির মাপকাঠি
ভারতের অর্থনৈতিক শক্তি বিবেচনা করলে ২০২৫ সালে এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে গণ্য হচ্ছে, যার মোট জিডিপি প্রায় ৩.৫ ট্রিলিয়ন ডলার (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, আইএমএফ, ২০২৪)। তাছাড়া ভারতের সামরিক ক্ষমতা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য, যেখানে এর কাছে প্রায় ৪,৮৫০টি যুদ্ধ ট্যাঙ্ক এবং ১০,০০০-এর বেশি আর্টিলারি ইউনিট রয়েছে (গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার, ২০২৫)। এছাড়া ভারতের মিসাইল ও স্পেস প্রোগ্রাম বিশ্বে সম্মানজনক অবস্থানে রয়েছে, যেমন চন্দ্রায়ন মিশনের মাধ্যমে চাঁদে পতাকা ফিরোয়ালার কীর্তি। তবে এই তালিকায় ভারতের ১২ নম্বরে অবস্থানের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার দিকটি কমজোর হতে পারে, যা ব্রিটেন (৪র্থ স্থান) বা জার্মানি (৫ম স্থান) এর মতো দেশগুলোর তুলনায় ভারতকে পিছিয়ে রাখে।
তালিকার শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র
তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র, যার জিডিপি প্রায় ২৫ ট্রিলিয়ন ডলার এবং সামরিক ব্যয় ৮৭৭ বিলিয়ন ডলার (এসআইপিআরআই, ২০২৪)। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন, যার অর্থনীতি ১৮ ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি এবং নৌবাহিনীর শক্তি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তৃতীয় স্থানে রাশিয়া রয়েছে, যা তার ভৌগোলিক স্ট্রাটেজি এবং সামরিক ক্ষমতার জন্য পরিচিত। এই তালিকায় ইউক্রেন (১৪ নম্বর) এবং তুরস্ক (১৭ নম্বর) এর মতো দেশগুলোর র্যাঙ্কিংও বিতর্কের কারণ হয়েছে, কারণ ইউক্তরাষ্ট্রের ৬১ বিলিয়ন ডলারের সাহায্য (সিআরএস রিপোর্ট, ২০২৪) ইউক্রেনকে ভৌগোলিক স্ট্রাটেজি নিয়ে এগিয়ে রাখছে, যদিও এর জিডিপি মাত্র ১৮৮ বিলিয়ন ডলার।
ভারতের সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া
ভারতের ১২ নম্বরের অবস্থান নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে মনে করছেন যে ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি বিবেচনায় এটি ব্রিটেনের মতো দেশের উপরে থাকার যোগ্য ছিল, যেখানে ব্রিটেনের মাত্র ২টি যুদ্ধ ট্যাঙ্ক রয়েছে। এই প্রসঙ্গে একজন ব্যবহারকারী বলেছেন, “ভারতের জিডিপি, সামরিক শক্তি এবং গ্লোবাল সাউথের নেতৃত্ব বিবেচনায় এটি অন্তত শীর্ষ ৫-এ থাকা উচিত ছিল।” তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে ভারতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং নেটোর মতো শক্তিশালী সংঘের সঙ্গে সম্পর্কের অভাব এটিকে পিছিয়ে রাখতে পারে।
ভারতের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
ভারতের জন্য আশার কথা হলো এটি জি২০-এর মেজবান দেশ হিসেবে বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং গ্লোবাল সাউথের নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারের সেমিকন্ডাক্টর করিডোর প্রকল্প এবং চন্দ্র মিশনের মতো উদ্যোগ ভারতকে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে শক্তিশালী করে তুলছে। আইএমএফ-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৬ সালে ভারত জাপানকে ছাড়িয়ে চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হতে পারে। এছাড়া চীনের সঙ্গে বাড়তি চাপের মধ্যে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বাড়াচ্ছে, যা ভবিষ্যতে এর র্যাঙ্কিং উন্নত করতে পারে।
ভারতের ১২ নম্বরের অবস্থান বিভিন্ন দিক থেকে বিশ্লেষণের বিষয়। এটি তার অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তির পরিচয় দিচ্ছে, তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে আরও উন্নতি করলে ভবিষ্যতে এটি শীর্ষ ৫-এ উঠতে পারে। বিশ্বের পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারতের ভূমিকা ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, এবং এই শক্তি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও শক্তিশালী হবে।