India Pakistan Tensions: ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কর্পোরেট আয় প্রকাশ এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক তথ্যের মাঝে একটি ছুটি-সংক্ষেপিত সপ্তাহে ভারতীয় শেয়ারবাজারগুলিতে ব্যাপক ওঠানামা দেখা যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে জম্মু-কাশ্মীরের পাহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জন প্রাণ হারানোর পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনা বিনিয়োগকারীদের মনোভাবকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
এছাড়া, বৈদেশিক বিনিয়োগকারী (FII) কার্যকলাপ এবং বৈশ্বিক বাজার প্রবণতাও বাজারের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য যে, ‘মহারাষ্ট্র দিবস’ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার, ১ মে শেয়ারবাজার বন্ধ থাকবে।
গাড়ি বিক্রির পরিসংখ্যান ও বাণিজ্য নীতির উপর নজর
নতুন মাসের শুরুতে স্বাভাবিকভাবেই অটো বিক্রির পরিসংখ্যান বাজারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। পাশাপাশি, বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতি সংক্রান্ত আপডেটও বাজারের গতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারে। পিটিআই সূত্রে জানা গেছে, শুল্ক বা ট্যারিফ বিষয়ক নতুন ঘোষণা বা পরিবর্তন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াতে পারে।
ম্যাক্রোইকোনমিক ডেটার অপেক্ষায় বাজার
চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত হতে চলেছে মার্চ মাসের শিল্প উৎপাদন সূচক (IIP) এবং এইচএসবিসি ম্যানুফ্যাকচারিং PMI-এর তথ্য, যা দেশের শিল্প ও উৎপাদন খাতের শক্তি নিরূপণে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দেবে। বাজাজ ব্রোকিং রিসার্চের মতে, এই তথ্যগুলি বাজারের চেহারায় বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
কর্পোরেট ফলাফল: নজরদারিতে রিলায়েন্স, বাজাজ ফিনান্স ও অন্যান্য সংস্থাগুলি
চলতি সপ্তাহে একাধিক বড় কর্পোরেট সংস্থা তাদের জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিক ফলাফল প্রকাশ করতে চলেছে। বিশেষত, ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড (BPCL), ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (IOC), বাজাজ ফিনান্স, টিভিএস মোটর এবং আল্ট্রাটেক সিমেন্টের মতো সংস্থাগুলির ফলাফল বাজারের দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ হবে।
মোতিলাল ওসওয়াল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের গবেষণা প্রধান সিদ্ধার্থ খেমকা বলেছেন, “ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের সাম্প্রতিক উন্নয়ন আগামী দিনে বাজারে অস্থিরতা বাড়াতে পারে। পাশাপাশি, চলতি ত্রৈমাসিকের ফলাফল প্রকাশের কারণে স্টক ও সেক্টরভিত্তিক আলাদা আন্দোলনও দেখা যাবে।”
এদিকে, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে তাদের নিট মুনাফা ২.৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯,৪০৭ কোটি টাকায়, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮,৯৫১ কোটি টাকা ছিল। খুচরা বাণিজ্য খাতে স্টোর রেশনালাইজেশন এবং টেলিকম সেগমেন্টে উন্নত মার্জিনের কারণে তেলের ও পেট্রোকেমিক্যাল ব্যবসায় দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও সংস্থাটি ভাল ফলাফল দেখাতে পেরেছে।
বাজারের প্রতিরোধ ক্ষমতা ও লাভ তোলা প্রবণতা
গত সপ্তাহে বাজার ভূ-রাজনৈতিক চাপের মধ্যেও দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছে। বিএসই সেনসেক্স ৬৫৯.৩৩ পয়েন্ট বা ০.৮৩ শতাংশ এবং এনএসই নিফটি ১৮৭.৭ পয়েন্ট বা ০.৭৮ শতাংশ বেড়েছে। তবে সপ্তাহের শেষ দিন, শুক্রবার, লাভ তুলে নেওয়ার প্রবণতার কারণে সেনসেক্স ৫৮৮.৯০ পয়েন্ট বা ০.৭৪ শতাংশ এবং নিফটি ২০৭.৩৫ পয়েন্ট বা ০.৮৬ শতাংশ পতন ঘটায়।
জিওজিট ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের প্রধান বিনিয়োগ কৌশলবিদ ভি কে বিজয়কুমার বলেন, “এফআইআই কার্যকলাপে একটি সুস্পষ্ট পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত আটদিন ধরে তারা ভারতীয় শেয়ারবাজারে ধারাবাহিকভাবে ক্রেতা ছিল।” তিনি আরও বলেন, “এই পরিবর্তনটি এমন একটি সময়ে ঘটেছে যখন ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের মধ্যে চাপ বেড়েছে।”
আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় তথ্যের গুরুত্ব
আগামী ২৮ এপ্রিল মার্চ মাসের শিল্প উৎপাদন (IIP) বছরের তুলনায় বৃদ্ধির হার প্রকাশিত হবে, যা ভারতের উৎপাদন খাতের অবস্থা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করবে। একইসঙ্গে, বৈশ্বিকভাবে শুল্ক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত নতুন আপডেটও বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়াতে পারে। বাজাজ ব্রোকিং-এর মতে, এপ্রিল ২৮ থেকে মে ২ পর্যন্ত সময়কালে এইসব তথ্য বাজারের আবহাওয়া নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা নিতে পারে।
সব মিলিয়ে, একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সপ্তাহের মুখোমুখি হতে চলেছে ভারতীয় শেয়ারবাজার, যেখানে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যু উভয়ই বিনিয়োগকারীদের মেজাজ গড়ে তুলবে।