India Office Market: ভারতের শীর্ষস্থানীয় রিয়েল এস্টেট পরামর্শক সংস্থা সিবিআরই সাউথ এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, তাদের “২০২৫ ইন্ডিয়া মার্কেট আউটলুক” শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনে ভারতের রিয়েল এস্টেট খাতের মূল প্রবণতা এবং ভবিষ্যৎ প্রকল্পগুলো তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের অফিস সেক্টর ২০২৫ সালে তার শক্তিশালী বৃদ্ধির ধারা বজায় রাখবে।
বৃদ্ধির পিছনে প্রধান কারণ
সিবিআরই সাউথ এশিয়া জানিয়েছে, “এই বৃদ্ধি মূলত শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি, দৃঢ় কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা, সহজলভ্য প্রতিভার ভাণ্ডার এবং সরকারের অনুকূল নীতির দ্বারা চালিত হবে। বিশেষ করে এসইজেড (স্পেশাল ইকোনমিক জোন) ডিনোটিফিকেশন নিয়মে শিথিলতা ব্যবসায়ীদের আস্থা বাড়িয়েছে, যা তাদের রিয়েল এস্টেট পোর্টফোলিও সম্প্রসারণে উৎসাহিত করছে।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে অফিস সেক্টরে সুস্থ সরবরাহ বৃদ্ধি দেখা গেছে এবং ২০২৫ সালে এই গতি অব্যাহত থাকবে। এর পিছনে রয়েছে নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলোর শক্তিশালী পাইপলাইন। নতুন সরবরাহের প্রায় ৬০-৬৫ শতাংশ শীর্ষ শহরগুলোতে সমন্বিত টেক পার্কের অংশ হবে, যা উচ্চমানের বিনিয়োগ-যোগ্য সম্পত্তি হিসেবে সম্পন্ন হবে। বিকাশকারীরা এখন সম্পূর্ণ সুবিধাযুক্ত এবং সবুজ-প্রত্যয়িত সম্পত্তির দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন, যা ব্যবসায়ীদের ক্রমবর্ধমান পছন্দের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
প্রধান শহর ও টিয়ার-২ শহরের সম্ভাবনা
বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ, দিল্লি-এনসিআর এবং মুম্বইয়ের মতো প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রগুলো এখনও অত্যন্ত আকর্ষণীয় থাকলেও, চেন্নাই এবং পুনে-র মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো আরও গতি পাবে। এর কারণ হল কৌশলগতভাবে অবস্থিত মানসম্পন্ন সরবরাহ, প্রতিভার সহজলভ্যতা এবং ব্যবসায়ীদের প্রধান শহরের বাইরে বৈচিত্র্য আনার কৌশল। এই প্রবণতা টিয়ার-২ শহরগুলোতেও ইজারা কার্যকলাপকে উদ্দীপিত করবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সিবিআরই-এর শীর্ষ কর্তার মন্তব্য
সিবিআরই-এর চেয়ারম্যান ও সিইও (ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা) অংশুমান ম্যাগাজিন বলেন, “ভারতের অফিস সেক্টর ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে রেকর্ড-ব্রেকিং ইজারা পারফরম্যান্স দেখিয়েছে এবং ২০২৫ সালে এই গতি অব্যাহত থাকবে। ভারতের প্রচুর দক্ষ প্রতিভার ভাণ্ডার বহুজাতিক সংস্থাগুলোকে তাদের গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টার (জিসিসি) স্থাপন বা সম্প্রসারণের জন্য এবং দেশীয় উদ্যোগগুলোকে তাদের অফিসের উপস্থিতি বাড়াতে আকর্ষণ করছে। বছরের মধ্যে উচ্চমানের বিনিয়োগ-যোগ্য সম্পত্তির একটি শক্তিশালী পাইপলাইন সম্পন্ন হবে, যা সম্পূর্ণ সুবিধাযুক্ত এবং সবুজ-প্রত্যয়িত স্থানের প্রবাহ নিশ্চিত করবে। এটি ব্যবসায়ীদের ক্রমবর্ধমান পছন্দের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।”
বাংলার প্রেক্ষাপটে অফিস সেক্টর
পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষ করে কলকাতায়, অফিস সেক্টর গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সল্টলেক সেক্টর ফাইভ এবং নিউ টাউনের মতো এলাকাগুলো আইটি এবং জিসিসি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। যদিও বেঙ্গালুরু বা দিল্লির মতো বড় শহরের তুলনায় কলকাতার অফিস স্পেস এখনও পিছিয়ে আছে, তবে এই প্রতিবেদন বাংলার জন্যও সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে। কলকাতার সাশ্রয়ী জীবনযাত্রা, দক্ষ জনশক্তি এবং উন্নত অবকাঠামো বহুজাতিক সংস্থাগুলোকে আকর্ষণ করতে পারে।
প্রতিবেদনে টিয়ার-২ শহরগুলোর সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা বাংলার দুর্গাপুর, শিলিগুড়ি এবং আসানসোলের মতো শহরগুলোর জন্য সুখবর। এই শহরগুলোতে যদি সরকার এবং বিকাশকারীরা মানসম্পন্ন অফিস স্পেস এবং সবুজ-প্রত্যয়িত প্রকল্পে বিনিয়োগ করে, তবে এগুলো ভবিষ্যতে ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
অফিস সেক্টরের প্রধান প্রবণতা
প্রতিবেদনে কয়েকটি মূল প্রবণতা তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমত, বিকাশকারীরা এখন সম্পূর্ণ সুবিধাযুক্ত (যেমন জিম, ক্যাফেটেরিয়া, পার্কিং) এবং পরিবেশবান্ধব অফিস স্পেস তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, শীর্ষ শহরগুলোতে টেক পার্কের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে, যা আইটি এবং প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর জন্য আদর্শ। তৃতীয়ত, ব্যবসায়ীরা এখন প্রধান শহরের বাইরে বৈচিত্র্য আনার দিকে ঝুঁকছে, যা ছোট শহরগুলোর জন্য সুযোগ তৈরি করছে।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
অফিস সেক্টরের এই বৃদ্ধি ভারতের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। নতুন অফিস স্পেস তৈরির ফলে কর্মসংস্থান বাড়বে, বিশেষ করে নির্মাণ, আইটি এবং সুবিধা ব্যবস্থাপনা খাতে। বাংলার জন্য এটি অতিরিক্ত সুবিধা নিয়ে আসতে পারে, কারণ রাজ্যের তরুণ জনশক্তি এই সুযোগের অংশ হতে পারে। এছাড়া, সবুজ-প্রত্যয়িত ভবনগুলো পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখবে, যা বাংলার মতো জনবহুল রাজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারি নীতির ভূমিকা
সরকারের অনুকূল নীতি, যেমন এসইজেড নিয়মে শিথিলতা, এই বৃদ্ধির পিছনে বড় ভূমিকা পালন করছে। এটি ব্যবসায়ীদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিনিয়োগকে উৎসাহিত করেছে। বাংলা সরকারও যদি অনুরূপ নীতি গ্রহণ করে, তবে কলকাতা এবং অন্যান্য শহরগুলো অফিস সেক্টরে আরও এগিয়ে যেতে পারে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
২০২৫ সালে অফিস সেক্টরের এই গতি অব্যাহত থাকলে ভারত বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়িক কেন্দ্রগুলোর একটিতে পরিণত হতে পারে। বেঙ্গালুরু, দিল্লি এবং হায়দ্রাবাদের পাশাপাশি কলকাতার মতো শহরগুলো যদি এই সুযোগ কাজে লাগায়, তবে ভারতের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। সিবিআরই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বছর প্রায় ৫০-৬০ মিলিয়ন বর্গফুট নতুন অফিস স্পেস সম্পন্ন হবে, যা ব্যবসায়ীদের চাহিদা পূরণ করবে।
ভারতের অফিস সেক্টর ২০২৫ সালে শক্তিশালী বৃদ্ধির পথে রয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং প্রতিভার শক্তির প্রমাণ। বাংলার জন্যও এটি একটি সুযোগ, যদি রাজ্য সঠিক পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে এই প্রবৃদ্ধির অংশ হয়। সবুজ, সুবিধাযুক্ত এবং প্রযুক্তি-ভিত্তিক অফিস স্পেস ভারতের ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক ল্যান্ডস্কেপকে নতুন মাত্রা দেবে।