বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ভারতে কড়া বার্তা পীযূষ গয়ালের

বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়াল (Piyush Goyal) শুক্রবার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন যে, ভারত কখনোই কোনো সময়সীমার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি…

Piyush Goyal Slams EU Over FTA Talks

বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়াল (Piyush Goyal) শুক্রবার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন যে, ভারত কখনোই কোনো সময়সীমার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করবে না। ভারতের স্বার্থ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে এবং যখন কোনো চুক্তি সম্পূর্ণভাবে ভারতের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করবে, তখনই সেই চুক্তি করা হবে।

মন্ত্রীর এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এল যখন শোনা যাচ্ছিল, জুলাই ৯-এর আগেই ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে। এই তারিখটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৯০ দিনের শুল্ক স্থগিতাদেশের শেষ দিন হিসেবে ধরা হচ্ছে।

   

একটি সাংবাদিক বৈঠকে পীযূষ গয়াল বলেন, “ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন হোক, নিউজিল্যান্ড, ওমান, যুক্তরাষ্ট্র, চিলি বা পেরু—বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি তখনই হয়, যখন উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক হয়। ভারতের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে, জাতীয় স্বার্থকে সবার উপরে রেখে যদি কোনো চুক্তি হয়, তখনই আমরা সম্মত হই।”

তিনি আরও বলেন, “ভারত কখনোই কোনো চুক্তি সময়সীমার ভিত্তিতে করে না। চুক্তি যখন পরিপক্ক হবে, সম্পূর্ণভাবে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করবে, তখনই তা মেনে নেওয়া হবে।”

এরই মধ্যে পিটিআই সূত্রে জানা গেছে, একটি ভারতীয় প্রতিনিধি দল সম্প্রতি ওয়াশিংটন থেকে ফিরেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিল দলটি। এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধান আলোচক রাজেশ আগরওয়াল, যিনি বাণিজ্য মন্ত্রকের বিশেষ সচিব পদে আছেন।

একজন সরকারি কর্মকর্তা পিটিআইকে জানিয়েছেন, “ভারতীয় দলটি ওয়াশিংটন থেকে ফিরে এসেছে। আলোচনা চলবে। কৃষি ও অটো সেক্টরের কিছু বিষয় এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।”

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের এপ্রিলের ২ তারিখে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ অতিরিক্ত প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করেছিল। তবে ৯০ দিনের জন্য এই শুল্ক স্থগিত রাখা হয়েছিল। সেই সঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রের ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক এখনো বলবৎ রয়েছে।

ভারতের পক্ষ থেকে এই ২৬ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চায় ভারতের বাজারে তাদের কিছু শিল্প পণ্য, অটোমোবাইল (বিশেষত ইলেকট্রিক গাড়ি), মদ, এবং পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের ওপর শুল্ক ছাড়।

Advertisements

ভারতও পাল্টা চাহিদা রেখেছে। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শ্রম-নির্ভর খাতগুলির জন্য শুল্ক ছাড় প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে—টেক্সটাইল, রত্ন ও গয়না, চামড়ার পণ্য, গার্মেন্টস, প্লাস্টিক, কেমিক্যাল, চিংড়ি, তেলবীজ, আঙুর এবং কলা।

দুই দেশের মধ্যে চলমান আলোচনার লক্ষ্য হলো একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির (Bilateral Trade Agreement – BTA) প্রথম ধাপের আলোচনা সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ শেষ করা। এই চুক্তির মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি বাড়িয়ে ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে ভারতের রপ্তানি বাজারে বড়সড় সুযোগ তৈরি হবে। বিশেষ করে কৃষিপণ্য ও শ্রমনির্ভর পণ্যগুলির ক্ষেত্রে নতুন রপ্তানি সম্ভাবনা তৈরি হবে। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় পণ্যের প্রবেশাধিকার সহজতর হবে।

তবে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ী ভারতের বাজারে বিদেশি ইলেকট্রিক গাড়ি বা শিল্প পণ্য প্রবেশ করলে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কৃষি ক্ষেত্রেও শর্ত আরোপের মাধ্যমে ভারতীয় কৃষকদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে।

পীযূষ গয়াল বারবার বলেছেন, “জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে কোনো আপস হবে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত যে কোনো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আলোচনায় দেশের স্বার্থকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে।”

অতএব, আপাতত নিশ্চিতভাবে বলা যায় না, কবে এই চুক্তি চূড়ান্ত হবে। তবে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট—শুধুমাত্র সময়সীমার চাপে কোনো চুক্তি করা হবে না।

সবমিলিয়ে, ভারতের অবস্থান শক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে, জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে এবং উভয় দেশের বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যেই আলোচনা এগিয়ে চলবে।