সুপারসনিক ব্রহ্মোস: ইন্দোনেশিয়া কিনবে ভারতের মিসাইল সিস্টেম

India and Indonesia near finalizing BrahMos supersonic cruise missile deal, boosting indigenous defence exports. Negotiations complete barring Russian nod, following successful Philippines export and wartime success.

ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য এক সোনার সুযোগ এগিয়ে আসছে। ভারত এবং ইন্দোনেশিয়া সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল ব্রহ্মোসের (BrahMos Missile) বিক্রয় চুক্তির দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে, যা দেশীয় প্রতিরক্ষা রপ্তানির জন্য এক বড় ধাক্কা হবে। প্রতিরক্ষা সূত্র জানিয়েছে, আলোচনার প্রায় সব প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেছে এবং শুধু রাশিয়ার পক্ষ থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষা রয়েছে।

Advertisements

এই চুক্তির আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে চলছে, এবং এ বছরের জানুয়ারিতে ইন্দোনেশিয়ার শীর্ষ রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের দিল্লি সফরের সময় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সম্প্রতি ভারতের প্রতিরক্ষা স্টাফের প্রধান জেনারেল অনিল চৌহানের ইন্দোনেশিয়া সফরও এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে। এছাড়া, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি প্রবোয়ো সুবিয়ান্তোর জানুয়ারিতে ভারতে রাষ্ট্রিয় সফর ভারত-ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে সামরিক সহযোগিতাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে ভারতের আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা উদ্যোগকে নতুন উজ্জ্বলতা দেবে, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতের প্রভাব বাড়াবে।

   

ব্রহ্মোস মিসাইল সিস্টেমটি ভারতের গর্ব, যা ভারত এবং রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে তৈরি। এর নামকরণ হয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদী এবং মস্কভা নদীর নামের সমন্বয়ে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল, যার গতি ২.৮-৩ ম্যাক (প্রায় ৩,০০০ কিমি/ঘণ্টা) এবং রেঞ্জ ২৯০-৫০০ কিলোমিটার। এটি জাহাজ, সাবমেরিন, যুদ্ধবিমান এবং ল্যান্ড-বেসড লঞ্চার থেকে ছোড়া যায়, যা এটিকে বহুমুখী করে তোলে। মিসাইলের ওজন ৩০০০ কেজি এবং এতে ২০০-৩০০ কেজি ওয়ারহেড রয়েছে, যা শত্রুর জাহাজ বা ভূমি লক্ষ্যকে ধ্বংস করতে সক্ষম। এই বছরের মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে ব্রহ্মোসের যুদ্ধক্ষেত্রে সফলতা প্রমাণিত হয়েছে, যা এর কার্যকারিতাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে। এই সাফল্যের পর ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোর আগ্রহ বেড়েছে, যারা দক্ষিণ চীন সাগরের মতো অঞ্চলে তাদের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতে চায়।

এই চুক্তির পটভূমিতে ভারতের ফিলিপাইনসের সাথে ব্রহ্মোস রপ্তানির সাফল্য উল্লেখযোগ্য। কয়েক বছর আগে ৩,৫০০ কোটি রুপয়ের চুক্তিতে ভারত ফিলিপাইনসকে মিসাইল এবং সম্পর্কিত সিস্টেম সরবরাহ করেছে, যা ডেলিভারি সম্পন্ন হয়েছে। এটি ছিল ব্রহ্মোসের প্রথম রপ্তানি, যা আন্তর্জাতিকভাবে ফিলিপাইনসের আঞ্চলিক স্বার্থ রক্ষার জন্য এক ধাপ ছিল। ইন্দোনেশিয়ার চুক্তির মূল্য এখনও প্রকাশিত হয়নি, কিন্তু এটি ফিলিপাইনসের মতোই বড় হতে পারে, যা ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানিকে ২০২৫-এর লক্ষ্যমাত্রার দিকে এগিয়ে নেবে। রাশিয়ার অনুমোদনের অপেক্ষা রয়েছে কারণ ব্রহ্মোসের টেকনোলজিতে রাশিয়ার অংশীদারিত্ব রয়েছে, কিন্তু ভারতের নেতৃত্বে এই প্রকল্পটি আত্মনির্ভর ভারতের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

Advertisements

ভারত-ইন্দোনেশিয়া সম্পর্কের এই চুক্তি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতের কৌশলগত অবস্থানকে মজবুত করবে। ইন্দোনেশিয়া, এশিয়ান দেশগুলোর সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে, চীনের প্রভাবের মুখোমুখি এই অঞ্চলে ব্রহ্মোসের মতো অস্ত্র তার প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বাড়াবে। জেনারেল চৌহানের সফরে উভয় দেশের মধ্যে যৌথ সামরিক মহড়া এবং প্রশিক্ষণের আলোচনাও হয়েছে, যা সহযোগিতাকে আরও গভীর করবে। ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি হলো বিশ্বকে ব্রহ্মোসের মতো উন্নত অস্ত্র সরবরাহ করে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা প্রচার করা। এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি বাজার আরও বিস্তৃত হবে, যা অর্থনীতিতে নতুন চাকরি এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের সুযোগ তৈরি করবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এএনআই ডিজিটালের পোস্টে হাজার হাজার লাইক এসেছে, ফ্যানেরা #BrahMosExport এবং #IndiaIndonesiaTieUp ট্যাগ দিয়ে উদযাপন করছেন। একজন ইউজার লিখেছেন, “ব্রহ্মোসের গর্জন এখন এশিয়ায়!” এই উন্নয়ন ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পকে বিশ্বমঞ্চে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে, যা আত্মনির্ভরতার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবে। ভারত মাতা কি জয় হো—এই জয় আকাশ-সমুদ্রপথে নতুন ইতিহাস গড়বে!