বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধে বিপাকে বহু ভারতীয়

ভারত সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে (India Halts Transshipment) বিপাকে পড়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল বন্দরের বহু শ্রমিক ও ব্যবসায়ী। ২০২০ সালে বাংলাদেশকে ট্রান্সশিপমেন্টের অনুমতি দিয়েছিল ভারত…

India Halts Transshipment to Bangladesh

ভারত সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে (India Halts Transshipment) বিপাকে পড়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল বন্দরের বহু শ্রমিক ও ব্যবসায়ী। ২০২০ সালে বাংলাদেশকে ট্রান্সশিপমেন্টের অনুমতি দিয়েছিল ভারত সরকার, যার ফলে পেট্রাপোল বন্দর হয়ে বাংলাদেশে গার্মেন্টস সামগ্রী সহ বিভিন্ন পণ্য পাঠানো হত। এতে উপকৃত হয়েছিল বহু ট্রান্সপোর্ট সংস্থা, ক্লিয়ারিং এজেন্ট, লেবার ইউনিয়ন এবং স্থানীয় শ্রমজীবীরা।

কিন্তু ২০২৫ সালের ৮ই এপ্রিল ভারত সরকার একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করে দেয়। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর থেকে পেট্রাপোল বন্দরের কার্যক্রমে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। সূত্রের খবর, ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে বন্দরের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কাজ পরিচালিত হত। সেই কাজ বন্ধ হওয়ায় এখন সেই পরিমাণ কর্মসংস্থানও হারিয়ে গেছে।

পেট্রাপোল বন্দরের ক্লিয়ারিং এজেন্টদের সংগঠনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান, “ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশে যাওয়া গাড়িগুলি রোজগার করতো মোটা অঙ্কের টাকা। শ্রমিকরাও প্রতিদিন কাজ পেতেন। এই ব্যবসা বন্ধ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্থানীয় পরিবহণ সংস্থা ও শ্রমজীবীরা। সরকারের এতে কোনও আর্থিক ক্ষতি না হলেও, স্থানীয় স্তরে প্রভাব বিশাল।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা সরকারী নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য। তবে সরকারের উচিত ছিল বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা। হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের জীবিকা সঙ্কটে পড়েছে।”

ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ হওয়ার পেছনে একাধিক কারণ থাকলেও সরকার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও বিশদ বিবরণ প্রকাশ করেনি। তবে কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস এবং ভারতের অভ্যন্তরীণ গার্মেন্টস ব্যবসাকে আরও শক্তিশালী করাই এর পেছনে অন্যতম উদ্দেশ্য হতে পারে।

পেট্রাপোল বন্দরের এক পরিবহণ সংস্থার মালিক জানান, “গত চার বছরে এই ট্রান্সশিপমেন্টের উপর নির্ভর করে আমাদের ব্যবসা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। আমরা নতুন ট্রাক কিনেছি, লোন নিয়েছি। এখন কাজ না থাকায় লোন শোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।”

Advertisements

বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প আন্তর্জাতিক বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পেট্রাপোল হয়ে ভারত থেকে যে কাঁচামাল এবং অন্যান্য উপাদান যেত, তা এই শিল্পের একটি বড় অংশের যোগান দিত। ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ হওয়ায় সেই যোগান ব্যবস্থা ব্যাহত হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যদিও ভারতের গার্মেন্টস শিল্প এতে লাভবান হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।

স্থানীয় শ্রমিক ইউনিয়নের এক সদস্য বলেন, “আমরা দিনে ৫০০-৬০০ টাকা রোজগার করতাম এই কাজ থেকে। এখন ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই বেকার হয়ে গেছেন। আমাদের পরিবারের খরচ চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছে।”

এই পরিস্থিতিতে পেট্রাপোল বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষত, যারা সম্পূর্ণভাবে ট্রান্সশিপমেন্ট নির্ভর ছিলেন, তারা এখন বিকল্প কর্মসংস্থানের সন্ধানে রয়েছেন। অনেকেই সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছেন, যেন পুনরায় ট্রান্সশিপমেন্ট চালু করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হয় অথবা স্থানীয় কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়।

সার্বিকভাবে, এই সিদ্ধান্তের ফলে যেভাবে পেট্রাপোল বন্দরে আর্থিক ও সামাজিক প্রভাব পড়েছে, তা যে দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা বলাই বাহুল্য। এখন দেখার, কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।