পাকিস্তানের সঙ্গে আমদানি বন্ধ করল ভারত,রফতানির চাপে জর্জরিত

পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনার পর ভারতের (India) কূটনৈতিক কড়া অবস্থান আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের (Pakistan) বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে ভারত সরকার। সেই…

India-Pakistan on Jammu and Kashmir

পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনার পর ভারতের (India) কূটনৈতিক কড়া অবস্থান আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের (Pakistan) বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে ভারত সরকার। সেই প্রেক্ষিতেই এবার স্থগিত করা হয়েছে বহুল চর্চিত সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি। পাশাপাশি পাকিস্তান থেকে ‘সৈন্ধব লবণ’ বা ‘সন্দক নুন’ আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। আর এই সিদ্ধান্তের ফলেই এবার বড় ধাক্কা খেয়েছে পাকিস্তানের অর্থনীতি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সন্দক নুনের অন্যতম প্রধান উৎপাদক দেশ হল পাকিস্তান। আর এতদিন পর্যন্ত ভারতের বাজারই ছিল সেই নুনের অন্যতম বড় ক্রেতা। ফলে, ভারতের আমদানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের জন্য কার্যত একটি বড় অর্থনৈতিক ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

   

জানা গিয়েছে, পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত খেওড়া (Khewra) লবণ খনি থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে সৈন্ধব লবণ উত্তোলন করা হয়। এই খনিই পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম লবণ খনি হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রায় ৩০টিরও বেশি লবণ প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট রয়েছে। এখান থেকেই মূলত প্রাকৃতিক রক সল্ট (Rock Salt) বা খনিজ লবণ উত্তোলন ও রফতানি করা হয়।

২০২৪ সালে পাকিস্তান প্রায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টন রক সল্ট রফতানি করেছিল বিভিন্ন দেশে। যার আনুমানিক আর্থিক মূল্য ছিল প্রায় ১২০ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ভারতের অংশ ছিল উল্লেখযোগ্য — অন্তত ২৫ শতাংশের কাছাকাছি।

কিন্তু ভারত সেই আমদানি এককথায় বন্ধ করে দেওয়ায়, পাকিস্তান পড়েছে বিশাল চাপে। লবণ বিক্রি না হওয়ায় ব্যবসা থমকে গিয়েছে বলে দাবি করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সরকারের তরফ থেকেও নতুন নতুন রফতানি বাজার খোঁজার চেষ্টা শুরু হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে এত বড় একটি আমদানি বাজারের পরিবর্ত বিকল্প খুঁজে পাওয়া যে খুবই কঠিন, তা মানছেন পাকিস্তানের রফতানিকারকেরাও।

Advertisements

তবে পাকিস্তানের লবণ ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে এখনই খুব একটা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন না। তাদের দাবি, “আমরা এর বিকল্প পথ খুঁজছি। ভারতীয় বাজার বন্ধ হলেও নতুন জায়গা খুঁজে নেব।” কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি যে তার চেয়ে অনেক কঠিন, তা বোঝাচ্ছেন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষকেরা।

অনেকে বলছেন, “যেভাবে ভারত একের পর এক কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করছে, তাতে পাকিস্তানের রফতানি নির্ভর অর্থনীতি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। বিশেষত সন্দক নুনের মতো পণ্য, যেটি ভারতের বাজারের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল ছিল, তা এখন বিপাকে।”

এই মুহূর্তে পাকিস্তানে অর্থনৈতিক মন্দা, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি সহ একাধিক সংকট একসঙ্গে চলছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় রফতানি পণ্যের একটি বাজার হারানো দেশটির জন্য আরও দুর্ভাগ্যের বার্তা এনে দিয়েছে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, সৈন্ধব লবণ আমদানি বন্ধ করে ভারত যে এক কূটনৈতিক চাপ তৈরি করল, তা পাকিস্তানের অর্থনীতিকে নতুন করে ঝাঁকুনি দিল। আগামী দিনে এই প্রভাব কতটা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে ইসলামাবাদের। তবে এখনই তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা।