দীপাবলির আগে সোনার বাজারে আগুন, জিএসটি-শুল্কে দামে রেকর্ড বৃদ্ধি

ভারতে উৎসবের মরশুম মানেই সোনার বাজারে চাঙ্গা ভাব। ধনতেরাস ও দীপাবলিতে সোনা কেনা যেন এক ঐতিহ্য ও বিনিয়োগ—দুইয়ের মেলবন্ধন। তবে উৎসবের উজ্জ্বলতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে…

India Gold Price Analysis

ভারতে উৎসবের মরশুম মানেই সোনার বাজারে চাঙ্গা ভাব। ধনতেরাস ও দীপাবলিতে সোনা কেনা যেন এক ঐতিহ্য ও বিনিয়োগ—দুইয়ের মেলবন্ধন। তবে উৎসবের উজ্জ্বলতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে কর কাঠামো ও বাজারের প্রভাব, যা সরাসরি ভোক্তাদের পকেটে চাপ ফেলে। বর্তমান মরশুমে জিএসটি ও আমদানি শুল্কের প্রভাব বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়, ভারতীয় ক্রেতারা আদৌ “বাস্তব” দামে সোনা কিনছেন কি না।

Advertisements

জিএসটি সংস্কার: প্রক্রিয়া সহজ, খরচ একই:

জিএসটি কাউন্সিল সোনা ও গয়নার উপর ৩% কর ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় মূলত কর প্রক্রিয়া সহজ করতে। কিন্তু এতে ভোক্তাদের উপর অতিরিক্ত চাপ কমেনি। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি আহমেদাবাদে সোনার দাম ১০ গ্রামে ১,২১,৫০০ টাকা ছুঁয়েছে, যার উপর জিএসটি বাবদ প্রায় ৩,৬৪৫ টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়েছে। এর সঙ্গে ৫% ‘মেকিং চার্জ’ বা নির্মাণ খরচের উপর জিএসটি যুক্ত হওয়ায় খরচ আরও বাড়ছে। ফলে কর কাঠামো সহজ হলেও, ভোক্তাদের মোট ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেনি।

বিজ্ঞাপন

আমদানি শুল্ক হ্রাস, সীমিত স্বস্তি: India Gold Price Analysis

সোনা পাচার রোধ ও আন্তর্জাতিক দামের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য সরকার আমদানি শুল্ক ১৫% থেকে কমিয়ে ৬% করেছে। তত্ত্ব অনুযায়ী এতে খুচরা দামে ছাড় পাওয়ার কথা, কিন্তু বাস্তবে দাম সর্বোচ্চ স্তরে রয়ে গেছে। আহমেদাবাদে বছরওয়ারি সোনার দাম ৫৫% বেড়ে ১০ গ্রামে ১,২১,৫০০ টাকাতে পৌঁছেছে। শুল্ক কমলেও খুচরা বিক্রেতারা উৎসবের বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয়ে রাখছেন, ফলে ভোক্তাদের সুবিধা খুব একটা হচ্ছে না।

উৎসবের চাহিদা ও ভোক্তার বদলে যাওয়া অভ্যাস:

দীপাবলিতে সোনা কেনা মূলত বিনিয়োগ ও ঐতিহ্যের প্রতীক। তবে ক্রয়ের ধরণে পরিবর্তন এসেছে। দুর্গাপুজো ও দশহরার সময় ভারী সোনার গয়না কেনার হার আহমেদাবাদে ৩৩% কমেছে; এর বদলে হালকা গয়না, সোনার কয়েন ও রূপোর দিকে ঝুঁকেছেন ক্রেতারা। পাশাপাশি, সোনার ইটিএফ, সার্বভৌম গোল্ড বন্ড (SGB) ও ইলেকট্রনিক গোল্ডে বিনিয়োগ বেড়েছে—যেখানে নির্মাণ খরচ, বিশুদ্ধতার ঝুঁকি বা সংরক্ষণের সমস্যা নেই।

বাজার ও নীতিগত ইঙ্গিত:

উৎসবের মরশুমে সোনার চাহিদা সরকারকে কর ও আমদানি নীতি নিয়ে সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখতে বাধ্য করে। জিএসটি সহজীকরণ ও আমদানি শুল্ক হ্রাস সঠিক পথে পদক্ষেপ হলেও, দাম কমার প্রভাব পুরোপুরি ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। উৎসবের মৌসুমে চাহিদার জোয়ার ও আন্তর্জাতিক দামের অস্থিরতা সোনার বাজারকে আরও ব্যয়বহুল করে তুলছে।

শেষ কথা:

এই দীপাবলিতে সোনা কেনা শুধুই ঐতিহ্য নয়, অর্থনীতিরও বড় পরীক্ষা। কর কাঠামো ও বাজার নিয়ন্ত্রণের প্রকৃত প্রভাব ভোক্তার পকেট পর্যন্ত পৌঁছানোই এখন নীতিনির্ধারকদের বড় চ্যালেঞ্জ।