২০২৫-এ সোনা চাহিদা ১৫% কমল, বলছে WGC

ভারতের সোনার চাহিদা (India Gold Demand) ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ কমে ১১৮.১ টনে দাঁড়িয়েছে, যদিও মূল্য ২২ শতাংশ বেড়ে ৯৪,০৩০ কোটি…

Gold Prices Hold Steady Ahead of RBI MPC Outcome; Check City-Wise Rates"

ভারতের সোনার চাহিদা (India Gold Demand) ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ কমে ১১৮.১ টনে দাঁড়িয়েছে, যদিও মূল্য ২২ শতাংশ বেড়ে ৯৪,০৩০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এই তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব স্বর্ণ পরিষদ (ডব্লিউজিসি) তাদের সাম্প্রতিক ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে। ডব্লিউজিসি’র পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ভারতের সোনার চাহিদা ৭০০ থেকে ৮০০ টনের মধ্যে থাকবে। সোনার দাম ২০২৫ সালের শুরু থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে, যা ১০ গ্রামে ১,০০,০০০ টাকার মানসিক সীমার কাছাকাছি পৌঁছেছে, ফলে ভোক্তাদের ক্রয় আচরণে প্রভাব পড়েছে।

উচ্চ দামের প্রভাব

   

ডব্লিউজিসি’র ভারতীয় শাখার সিইও সচিন জৈন বলেন, “উচ্চ দাম সাধ্যের উপর প্রভাব ফেলেছে। তবে, অক্ষয় তৃতীয়ার মতো শুভ দিন এবং আসন্ন বিয়ের মরসুমের কারণে সোনার সাংস্কৃতিক গুরুত্ব ক্রয়ের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব বজায় রেখেছে।” অক্ষয় তৃতীয়া ভারতে একটি অত্যন্ত শুভ দিন হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে সোনা কেনার ঐতিহ্য বহু যুগ ধরে চলে আসছে। এই দিনে সোনার ক্রয় সম্পদ এবং সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়। তবে, রেকর্ড দামের কারণে ভোক্তারা হালকা ওজনের এবং ছোট আকারের গহনার দিকে ঝুঁকছেন, এমনকি কেউ কেউ দাম কমার আশায় ক্রয় স্থগিত রাখছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান দামের মাত্রা কিছু ভোক্তাকে সতর্কতা অবলম্বন করতে প্ররোচিত করলেও, অক্ষয় তৃতীয়ার সাংস্কৃতিক তাৎপর্য এবং সোনার নির্ভরযোগ্য সম্পদ হিসেবে মর্যাদা ক্রয়ের ইতিবাচক গতি বজায় রাখবে। বিয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত চাহিদা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে, কারণ এটি একটি অপরিহার্য ক্রয় হিসেবে বিবেচিত হয়।

গহনার চাহিদায় হ্রাস

২০২৫ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে গহনার চাহিদা ২৫ শতাংশ কমে ৭১.৪ টনে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৯৫.৫ টন। এটি ২০২০ সালের পর সর্বনিম্ন পরিমাণ, যদিও মূল্যের দিক থেকে এটি বছরে ৩ শতাংশ বেশি। উচ্চ দামের কারণে ভোক্তারা গহনা ক্রয়ে সংযমী হয়েছেন। তবে, আর্থিক বাজারের অনিশ্চয়তার মধ্যে সোনার নিরাপদ সম্পদ হিসেবে ভূমিকা আরও স্পষ্ট হয়েছে।

বিনিয়োগের চাহিদায় বৃদ্ধি

বিনিয়োগের চাহিদা অপেক্ষাকৃত স্থিতিস্থাপক ছিল, যা ৭ শতাংশ বেড়ে ৪৬.৭ টনে পৌঁছেছে, গত বছরের ৪৩.৬ টনের তুলনায়। সোনার বার এবং মুদ্রার চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে সোনার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা প্রতিফলিত করে। ডব্লিউজিসি’র তথ্য অনুযায়ী, সোনার ইটিএফ (এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং ডিজিটাল সোনার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও বাড়ছে।

আমদানি ও পুনর্ব্যবহার

জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে সোনার আমদানি ৮ শতাংশ বেড়ে ১৬৭.৪ টনে পৌঁছেছে। তবে, পুনর্ব্যবহার ৩২ শতাংশ কমে ২৬ টনে নেমেছে, কারণ রেকর্ড দামের কারণে ভোক্তারা তাদের সোনা ধরে রেখেছেন। গড় ত্রৈমাসিক সোনার দাম এই বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ছিল ১০ গ্রামে ৭৯,৬৩৩.৪ টাকা, যা ২০২৪ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে ছিল ৫৫,২৪৭.২ টাকা।

Advertisements

বিশ্বব্যাপী সোনার চাহিদা

বিশ্বব্যাপী সোনার চাহিদা ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে ১ শতাংশ বেড়ে ১,২০৬ টনে পৌঁছেছে, যা ২০১৯ সালের পর প্রথম ত্রৈমাসিকে সর্বোচ্চ। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলোর ক্রয় এবং বিনিয়োগের চাহিদা বৃদ্ধি এই বৃদ্ধির প্রধান কারণ। ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ২০২৪ সালে ৭৩ টন সোনা কিনেছে, যা ২০২৩ সালের ১৬ টনের তুলনায় চার গুণ বেশি।

অক্ষয় তৃতীয়ার গুরুত্ব

অক্ষয় তৃতীয়া ভারতের সোনার বাজারে একটি বিশেষ উৎসব। এই দিনে সোনা কেনা সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। সচিন জৈন বলেন, “অক্ষয় তৃতীয়ার সময় সোনার বাজারে উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়। যদিও উচ্চ দামের কারণে কিছু ভোক্তা ছোট গহনা কিনছেন, তবুও বিয়ের মতো অপরিহার্য ক্রয়ে চাহিদা স্থিতিশীল রয়েছে।” বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দামের অস্থিরতা কমলে গহনার চাহিদা পুনরুদ্ধার হতে পারে।

ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস

ডব্লিউজিসি’র ২০২৫ সালের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ভারতের সোনার চাহিদা ৭০০-৮০০ টনের মধ্যে থাকবে। সচিন জৈন বলেন, “২০২৪ সাল সোনার ব্যবসার জন্য একটি ঐতিহাসিক বছর ছিল। ২০২৫ সালে দামের স্থিতিশীলতা থাকলে চাহিদা আরও শক্তিশালী হবে।” তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক বাজেটে ব্যক্তিগত নিষ্পত্তিযোগ্য আয় বৃদ্ধি এবং সাধারণ নির্বাচনের পর স্থিতিশীলতা সোনার বাজারের জন্য ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করবে।

বিনিয়োগের কৌশল

উচ্চ দামের কারণে বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে এগোনোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দামের সংশোধনের সময় ধাপে ধাপে বিনিয়োগ করা বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে। সোনার ইটিএফ, ডিজিটাল সোনা এবং সোভারেন গোল্ড বন্ডের মতো বিকল্প বিনিয়োগের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এই বিকল্পগুলো শারীরিক সোনার তুলনায় সহজ এবং সাশ্রয়ী।

ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব

সাম্প্রতিক পাহাড়গাম সন্ত্রাসী হামলার মতো ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাগুলো সোনার নিরাপদ সম্পদ হিসেবে চাহিদা বাড়িয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তানের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে একটি ডসিয়ার প্রকাশ করেছে, যা আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়িয়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের সোনার প্রতি আকৃষ্ট করছে।

২০২৫ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে সোনার চাহিদা কমলেও, এর সাংস্কৃতিক ও আর্থিক গুরুত্ব অক্ষয় তৃতীয়ার মতো শুভ দিনে ক্রয়কে সমর্থন করছে। বিনিয়োগের চাহিদা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ক্রয় সোনার বাজারের শক্তি প্রদর্শন করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দামের স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক ইতিবাচকতা ২০২৫ সালে সোনার চাহিদাকে শক্তিশালী করবে। অক্ষয় তৃতীয়ার এই শুভ মুহূর্তে সোনা কেনার ঐতিহ্য ভারতীয়দের মধ্যে আর্থিক নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক মূল্যের সমন্বয় ঘটাচ্ছে।