নয়াদিল্লিতে শুরু ‘ভারত ইন্টারন্যাশনাল রাইস কনফারেন্স ২০২৫’, বিশ্ব চাল বাণিজ্যে ভারতের নেতৃত্বে নতুন দিগন্ত

India Global Rice Trade Leadership

নয়াদিল্লিতে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে দুই দিনের ‘ভারত ইন্টারন্যাশনাল রাইস কনফারেন্স (BIRC) ২০২৫’, যা বৈশ্বিক চাল বাণিজ্যে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও নেতৃত্বকে আরও জোরদার করার উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন ৮০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধি, যার মধ্যে রয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ চাল আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, কৃষি বিজ্ঞানী, নীতিনির্ধারক ও উদ্যোক্তারা। ইভেন্টটির আয়োজন করেছে ইন্ডিয়ান রাইস এক্সপোর্টার্স ফেডারেশন (IREF)।

Advertisements

বৈশ্বিক চাল বাণিজ্যে ভারতের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি:

IREF-এর এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, BIRC ২০২৫-এর মূল লক্ষ্য হলো একটি সহযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম গঠন করা, যা বিশ্ব চাল বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ রূপরেখা নির্ধারণ করবে এবং ভারতের অবস্থানকে বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য চাল সরবরাহকারী হিসেবে আরও সুদৃঢ় করবে।
এ উদ্যোগের মাধ্যমে কৃষক, রপ্তানিকারক ও উদ্ভাবকদের স্বার্থ একত্রিত করে দেশের অর্থনীতিতে নতুন মূল্য সংযোজনের পাশাপাশি টেকসই কৃষি অনুশীলনকে উৎসাহিত করা হবে।

   

ভারতের রপ্তানি লক্ষ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: India Global Rice Trade Leadership

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে IREF-এর জাতীয় সভাপতি প্রেম গার্গ জানান,
“এই সম্মেলনের লক্ষ্য ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর বাজার থেকে প্রায় ১.৮০ লক্ষ কোটি টাকার নতুন আমদানি বাজার অর্জন করা এবং প্রায় ২৫,০০০ কোটি টাকার রপ্তানি চুক্তি (MoU) স্বাক্ষর করা।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু রপ্তানি বৃদ্ধি নয়, বরং ভারতীয় চালকে বিশ্বের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও উচ্চমানের চাল ব্র্যান্ডে রূপান্তরিত করা।”

আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নতুন অধ্যায়:

সম্মেলনে মায়ানমারের বাণিজ্য উপমন্ত্রী ইউ মিন মিন বক্তব্য রাখেন এবং ভারত-মায়ানমারের ঐতিহাসিক চাল সংস্কৃতি ও কৃষিভিত্তিক সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন,
“জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা ও সরবরাহ শৃঙ্খলের চ্যালেঞ্জের এই যুগে দেশগুলোকে প্রতিযোগিতা নয়, বরং সহযোগিতার পথে এগোতে হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “খাদ্য নিরাপত্তা আজ একটি যৌথ দায়িত্ব। ভারতের প্রযুক্তি ও মায়ানমারের সম্ভাবনাকে একত্র করলে দক্ষিণ এশিয়ায় দৃঢ় খাদ্য নিরাপত্তা কাঠামো তৈরি সম্ভব।”

Advertisements

ভারতীয় কৃষকদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি:

সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ১৭ জন ভারতীয় কৃষককে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের দ্বারা সম্মাননা প্রদান, যারা চাল উৎপাদনে গুণমান, উদ্ভাবন ও স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
সম্মানিত কৃষকরা এসেছেন উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা, ছত্তিশগড়, জম্মু ও কাশ্মীর, মণিপুর, আসাম, বিহার, কেরালা ও মহারাষ্ট্র থেকে।
তারা চাষ করেন ভারতের বিশেষ ও দেশজ প্রজাতি যেমন গোবিন্দভোগ, কালাজিরা-কোরাপুট, টাইপ-৩ দেরাদুনী বাসমতী, জিরাফুল, মুষ্কবুদি, চাক-হাও (কালো চাল), জোহা রাইস, কাতারনি, কাইপাড, পলক্কাডান মাট্টা, ইন্দ্রাণী ইত্যাদি।

টেকসই কৃষি ও বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা:

দুই দিনের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে থাকছে বিভিন্ন থিম্যাটিক সেশন, বাণিজ্য বৈঠক ও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা, যেখানে চাল রপ্তানির নতুন দিক, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, কৃষক সহযোগিতা এবং বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তার কৌশল নিয়ে আলোচনা হবে।
BIRC ২০২৫ ভারতের চাল শিল্পকে শুধু অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগত ও টেকসই উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।