ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ (India Forex Reserves) গত ১১ এপ্রিল শেষ হওয়া সপ্তাহে ১.৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়ে ৬৭৭.৮৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) শুক্রবার প্রকাশিত সাপ্তাহিক তথ্য অনুযায়ী, এটি টানা ষষ্ঠ সপ্তাহ যেখানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। এর আগের সপ্তাহে, অর্থাৎ ৪ এপ্রিল শেষ হওয়া সপ্তাহে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১০.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেড়ে ৬৭৬.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছিল।
১১ এপ্রিল শেষ হওয়া সপ্তাহের তথ্য অনুযায়ী, রিজার্ভের একটি প্রধান উপাদান, বৈদেশিক মুদ্রার সম্পদ, ৮৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়ে ৫৭৪.৯৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। ডলারের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকাশিত এই বৈদেশিক মুদ্রার সম্পদে ইউরো, পাউন্ড এবং ইয়েনের মতো অ-মার্কিন মুদ্রার মূল্য বৃদ্ধি বা হ্রাসের প্রভাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া, রিজার্ভের সোনার অংশটি ৬৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বেড়ে ৭৯.৯৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। বিশ্বব্যাপী ভূ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি সোনাকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে গ্রহণ করছে, যা এই বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
তবে, স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস (এসডিআর) ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কমে ১৮.৩৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) ভারতের রিজার্ভ পজিশন ৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বেড়ে ৪.৫০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। পূর্ববর্তী সপ্তাহগুলিতে মুদ্রার মূল্যায়ন এবং রুপির অস্থিরতা কমাতে আরবিআই-এর বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে হস্তক্ষেপের কারণে রিজার্ভে হ্রাসের প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। তবে, গত ছয় সপ্তাহে এই প্রবণতা উল্টে গেছে।
এর আগে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বকালের সর্বোচ্চ ৭০৪.৮৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছিল। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের এই শক্তিশালী অবস্থান ভারতীয় রুপিকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী করেছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। সম্প্রতি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির ফলে রুপির মানও উন্নত হয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির শক্তিশালী ভিত্তি প্রতিফলিত করে এবং রুপির অস্থিরতার সময়ে এটি স্থিতিশীল করতে আরবিআই-কে আরও সুযোগ প্রদান করে। শক্তিশালী রিজার্ভ আরবিআই-কে স্পট এবং ফরোয়ার্ড মুদ্রা বাজারে হস্তক্ষেপ করার মাধ্যমে রুপির মূল্য হ্রাস রোধে আরও ডলার ছাড়তে সক্ষম করে। বিপরীতভাবে, রিজার্ভ হ্রাস পেলে আরবিআই-এর বাজারে হস্তক্ষেপের সুযোগ কমে যায়, যা রুপির মানকে সমর্থন করা কঠিন করে তোলে।
এদিকে, ভারতের পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি গত ফেব্রুয়ারিতে তিন বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন ১৪.০৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে, যা জানুয়ারিতে ছিল ২২.৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি স্থিতিশীল থাকলেও আমদানি হ্রাস পাওয়ায় এই ঘাটতি কমেছে। এটি বিশ্ব বাজারে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও ভারতের বৈদেশিক খাতের শক্তিশালীকরণের ইঙ্গিত দেয়।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের এই ধারাবাহিক বৃদ্ধি ভারতের অর্থনীতির উপর আস্থা বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে, বিশ্ব অর্থনীতিতে চলমান অনিশ্চয়তার মধ্যে এই বৃদ্ধি ভারতের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। রিজার্ভের এই শক্তিশালী অবস্থান ভারতকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া, রুপির মান স্থিতিশীল রাখার জন্য আরবিআই-এর কৌশলগত পদক্ষেপগুলি দেশের অর্থনীতির স্থিতিস্থাপকতা প্রদর্শন করছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির ফলে ভারতের আমদানি ব্যয় মেটানোর ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের বাণিজ্য ভারসাম্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
ভবিষ্যতে, ভারতের অর্থনীতি যদি এই গতিপথ ধরে এগিয়ে যায়, তবে এটি দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে আরও শক্তিশালী করবে। তবে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকিগুলি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন, কারণ এগুলি দীর্ঘমেয়াদে রিজার্ভ এবং রুপির মানের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
সামগ্রিকভাবে, ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের এই ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের অর্থনৈতিক শক্তি এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনার একটি উজ্জ্বল চিত্র তুলে ধরছে।