ভারতের অর্থনৈতিক অবকাঠামোতে আরেকটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির সাক্ষী হয়েছে। দেশের বিদেশি মুদ্রা সঞ্চয় (India Forex Reserves) এখন $৬৯৮.১৯ বিলিয়ন-এ পৌঁছেছে, যা গত ২৫ জুলাই পর্যন্তের হিসাব অনুযায়ী $২.৭ বিলিয়ন বৃদ্ধি দেখিয়েছে। এই অসামান্য বৃদ্ধি মোদী সরকারের অর্থনৈতিক নীতির একটি জয়ের পরিচয় হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। বিদেশি মুদ্রা সঞ্চয়ে এই উন্নতি বর্তমানে বিশ্বে চতুর্থ স্থানে ভারতকে রাখেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক বাজারে প্রভাব বাড়ার একটি পরিচায়ক।
বৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) জানিয়েছে যে এই বৃদ্ধি মূলত বিদেশি মুদ্রা সম্পদ ($১.৩১ বিলিয়ন), স্বর্ণ রিজার্ভ এবং বিশেষ অঙ্কের অধিকার (SDRs) এর মূল্যবৃদ্ধির কারণে ঘটেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি এবং পরিষেবা রপ্তানি, বিদেশি সরাসি বিনিয়োগ (FDI) এবং বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ অর্থনৈতিক নীতির ফলেই এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে। ২০১৪ সালে যখন মোদী সরকার ক্ষমতায় এসেছিল, তখন বিদেশি মুদ্রা সঞ্চয় ছিল মাত্র $৩০৫ বিলিয়ন। দশ বছরের কম সময়ে এই সঞ্চয় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে $৬৯৮ বিলিয়ন-এ পৌঁছানো সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার একটি শক্ত প্রমাণ।
টাকার মূল্যহ্রাস ও তথ্য পর্যালোচনা
যদিও টাকার মূল্য এখন $১-এর কাছে ₹৮৭.২০-এ রয়েছে, যা ২০১৪-এর ₹৬০.৯৫ থেকে উল্লেখযোগ্য হ্রাস নির্দেশ করে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এটি সাময়িক ঝুঁকি। তবে, রিয়েল ভ্যালুতে গণনা করলে গত ১০.৫ বছরে বিদেশি মুদ্রা সঞ্চয়ে প্রায় $৪০০ বিলিয়ন-এর বৃদ্ধি ঘটেছে, যা বার্ষিক গড়ে $১০ বিলিয়ন। এই হিসাবে, টাকার মূল্যহ্রাসের প্রভাব বিবেচনা করেও ভারতের অর্থনৈতিক প্রগতি অস্বীকারযোগ্য নয়।
সরকারের উদ্যোগ ও আন্তর্জাতিক প্রশংসা
বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পিয়ুষ গোয়েল গত ফেব্রুয়ারিতে জানিয়েছিলেন যে ভারতের বিদেশি মুদ্রা সঞ্চয় এখন ১০ বছরের বাহ্যিক বাণিজ্যিক চাহিদা পূরণ করার ক্ষমতা রাখে। তিনি বলেছেন, “ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, উৎপাদন, বিনিয়োগ, ভিত্তিভূমি উন্নয়ন এবং ব্যবহার-ভিত্তিক উন্নয়নের গল্প বিশ্বের দ্রুততম বৃদ্ধিমান অর্থনীতিকে গড়ে তুলছে।” আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) এর একটি ২০২৩-এর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে $৬০০ বিলিয়ন-এর বেশি রিজার্ভ রাখা উদীয়মান অর্থনীতির জন্য বৈশ্বিক ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়ক। ভারতের বর্তমান রিজার্ভ এই মানদণ্ড অতিক্রম করায় দেশটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
সমালোচনা ও চ্যালেঞ্জ
তবে এই সাফল্যের মধ্যেও কিছু সমালোচনা রয়েছে। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন যে টাকার মূল্যহ্রাস এবং বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা ভারতের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকে কিছুটা ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ব্যবহারকারী মজা করে বলেছেন, “$৬৯৮ বিলিয়ন রিজার্ভ? ভালো কথা, অন্তত এই দেশে কেউ তো টাকা বাঁচাচ্ছে!” অন্যদিকে, কেউ কেউ এই বৃদ্ধিকে “মৃত অর্থনীতি” হিসেবে উপহাস করেছেন, যা সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। তবে, এই সমালোচনার মুখে সরকারের পক্ষে তাদের নীতির ফলাফল প্রকাশ করা গুরুত্বপূর্ণ।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
সরকার এখন রিজার্ভের ব্যবহারে বুদ্ধিমত্তা অবলম্বনের পরিকল্পনা করছে। কিছু বিশেষজ্ঞ সুপারিশ করেছেন যে স্বর্ণ কেনার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, যা ভারতের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে আরও শক্তিশালী করবে। এছাড়া, RBI-এর মুদ্রা বাজারে হস্তক্ষেপ দিয়ে টাকার মূল্য স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা চলমান রয়েছে।
ভারতের বিদেশি মুদ্রা সঞ্চয়ে এই নতুন রেকর্ড মোদী সরকারের অর্থনৈতিক সফলতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। যদিও টাকার মূল্যহ্রাস এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো কিছু চিন্তার কারণ হতে পারে, তবুও $৬৯৮.১৯ বিলিয়ন-এর রিজার্ভ ভারতকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করছে। এই সাফল্য অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও স্থিতিশীলতার দিকে একটি মজবুত পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা ভারতকে বিশ্বের দ্রুততম বৃদ্ধিমান অর্থনীতির মর্যাদায় আরও শক্তিশালী করবে।