ভারতের উৎপাদন ও পরিষেবা খাতে রপ্তানি বৃদ্ধির দৃষ্টান্ত

India Export Growth Hits: এপ্রিল মাসে ভারতের বেসরকারি খাতে প্রবৃদ্ধি পৌঁছেছে আট মাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং পণ্য রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির ফলে এই…

India Export Growth Hits

India Export Growth Hits: এপ্রিল মাসে ভারতের বেসরকারি খাতে প্রবৃদ্ধি পৌঁছেছে আট মাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং পণ্য রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির ফলে এই প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে এক সাম্প্রতিক সমীক্ষা। তবে এই ইতিবাচক প্রবণতার মধ্যেও ব্যবসায়িক আস্থায় কিছুটা ম্লানতা দেখা গেছে।

উচ্চ প্রবৃদ্ধির সূচক: PMI তে রেকর্ড
HSBC ফ্ল্যাশ ইন্ডিয়া কম্পোজিট পারচেসিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স (PMI) অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে ভারতের সামগ্রিক উৎপাদন ও পরিষেবা খাতের সংযুক্ত PMI বেড়ে হয়েছে ৬০.০, যা মার্চের ৫৯.৫ থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি আগস্ট মাসের পর সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। উল্লেখ্য, PMI সূচকে ৫০-এর উপরে মান প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে, আর ৫০-এর নিচে মান সংকোচনের লক্ষণ।

   

এই প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি ছিল উৎপাদন খাত। এপ্রিল মাসে উৎপাদন খাতের PMI বেড়ে হয়েছে ৫৮.৪, যা গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পরিষেবা খাতেও চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ PMI দেখা গেছে – মার্চের ৫৮.৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৯.১।

আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির প্রভাব
এই উত্থানের পেছনে অন্যতম কারণ হল আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি। বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে নতুন অর্ডারের পরিমাণ রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। HSBC-এর প্রধান ভারতীয় অর্থনীতিবিদ প্রাঞ্জুল ভান্ডারী জানিয়েছেন, “নতুন রপ্তানি আদেশের প্রবাহ দ্রুতগতিতে বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ৯০ দিনের জন্য স্থগিত হওয়ায় এ প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।”

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল যেসব পণ্যে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেগুলোর বাস্তবায়ন ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। এই সময়সীমা বিশ্ববাজারে ভারতীয় পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে আরও মজবুত করেছে।

চীনের ওপর মার্কিন শুল্কের চাপ বাড়তে থাকায় অনেক আন্তর্জাতিক ক্রেতাই এখন ভারতকে সম্ভাব্য বিকল্প উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করছে। এর ফলে ভারত বৈশ্বিক উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার নতুন সুযোগ পাচ্ছে।

পনেরো বছরের মধ্যে উৎপাদনে সর্বোচ্চ উত্থান
প্রবৃদ্ধির দিক থেকে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল উৎপাদন খাতের রপ্তানি অর্ডারে পনেরো বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। সেবা খাতও একই সঙ্গে অর্ডার ও উৎপাদনে ইতিবাচক প্রবণতা দেখিয়েছে। ফলস্বরূপ, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান উভয় ক্ষেত্রেই অগ্রগতি দেখা গেছে।

ভান্ডারী বলেন, “এই প্রবৃদ্ধি শুধুমাত্র অর্ডার বা উৎপাদনেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং কর্মসংস্থানেও প্রভাব ফেলেছে। উৎপাদক ও পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান উভয়েই কর্মী নিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে।”

কর্মসংস্থানে রেকর্ড:

কোম্পানিগুলো উৎপাদনের চাপ সামাল দিতে নতুন কর্মী নিয়োগে এগিয়ে এসেছে। উৎপাদন খাতে মার্চ ২০০৫ সালের পর থেকে এই প্রথমবার সর্বোচ্চ কর্মী নিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে।

মূল্যস্ফীতি ও মূল্যবৃদ্ধি:

ইনপুট কস্ট বা কাঁচামালের খরচের দিক থেকে মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে। উৎপাদন খাতে কাঁচামালের দাম বেড়েছে, অন্যদিকে পরিষেবা খাতে তা কিছুটা কমেছে। তবে চাহিদা এতটাই শক্তিশালী যে, প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই এই ব্যয় গ্রাহকদের উপর চাপিয়ে দিতে পেরেছে। ফলে বিক্রয়মূল্যও বেড়েছে, বিশেষ করে উৎপাদন খাতে এই মূল্যবৃদ্ধি বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

ব্যবসায়িক আস্থায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া:

যদিও অর্ডার প্রবাহ ও উৎপাদন বাড়ার ফলে উৎপাদকদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, পরিষেবা খাতে ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা সতর্কতা দেখা গেছে। এর ফলে সার্বিক ব্যবসায়িক আস্থা গত আট মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মার্কিন বাণিজ্য নীতি এবং ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে এই আস্থা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নতুন অর্থবছরের শুরুটা শক্তিশালী হলেও ভবিষ্যতে এই গতি বজায় রাখা সহজ নাও হতে পারে।

ভারতের জন্য এটি একটি আশাব্যঞ্জক সূচনা। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের অনিশ্চয়তা, বিশেষ করে মার্কিন শুল্ক নীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা, পরবর্তী প্রান্তিকে ব্যবসায়িক গতিপথ কতটা বজায় থাকবে তা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভারতীয় শিল্প ও পরিষেবা খাত যদি এই গতি ধরে রাখতে পারে, তাহলে তা কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বড় ইতিবাচক বার্তা নিয়ে আসবে।