ভারতের প্রতিরক্ষা (India Defence) খাতকে সামনে রেখে বিশাল এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছে গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠান জেপি মর্গান। প্রতিরক্ষা খাতে মূলধনী ব্যয় বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের উপর জোর এবং দ্রুত বাড়তে থাকা প্রতিরক্ষা রফতানির ফলে এই প্রবৃদ্ধি সম্ভব বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিরক্ষা খাতে নীতি এবং মানসিকতার পরিবর্তন
গত এক দশকে সরকার নীতি এবং পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে প্রতিরক্ষা উত্পাদনের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করেছে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা শিল্প নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
জেপি মর্গান তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে এই খাত এখনও দীর্ঘমেয়াদি বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। “স্টকগুলির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে সাম্প্রতিক বাজার সংশোধন এই খাতে বিনিয়োগের জন্য একটি আকর্ষণীয় সুযোগ তৈরি করেছে,” মন্তব্য করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
জিওপলিটিকাল চাপ এবং প্রতিরক্ষা ব্যয়ে পরিবর্তন
জিওপলিটিকাল পরিস্থিতি এবং অতীতের তুলনায় কম প্রতিরক্ষা ব্যয়ের কারণে বর্তমানে মূলধনী ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর আগে প্রতিরক্ষা খাতে মূলধনী ব্যয় তুলনামূলক কম ছিল, কারণ আমদানি নির্ভরতার কারণে অভ্যন্তরীণ উত্পাদন কম গুরুত্ব পেয়েছিল।
সরকারের হিসাব অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরে প্রতিরক্ষা খাতে মূলধনী ব্যয় ৮৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৫০ বিলিয়ন ডলার হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এটি খাতটির রাজস্ব বৃদ্ধিকে বার্ষিক ১২-১৫ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়াবে।
অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাওয়া
সরকার প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের নকশা, উন্নয়ন এবং উৎপাদনে স্বনির্ভরতার জন্য একাধিক নীতি এবং সংস্কার প্রণয়ন করেছে। ইতিমধ্যে প্রতিরক্ষা এবং মহাকাশ খাতে বিশাল বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং একাধিক প্রতিরক্ষা হাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন নামীদামি সংস্থা ভারতের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি শেয়ার করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
প্রতিরক্ষা রফতানিতে রেকর্ড বৃদ্ধি
২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ভারতের প্রতিরক্ষা রফতানি রেকর্ড ২১,০৮৩ কোটি টাকা (প্রায় ২.৬৩ বিলিয়ন ডলার) স্পর্শ করেছে, যা পূর্ববর্তী অর্থবর্ষের তুলনায় ৩২.৫ শতাংশ বেশি। গত দশকে প্রতিরক্ষা রফতানি ৩১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩-২৪ সালে ভারতের মোট প্রতিরক্ষা উত্পাদনের মূল্যও ১৭ শতাংশ বেড়ে ১,২৬,৮৮৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা খাত বর্তমানে একটি নতুন যুগের সূচনা করছে, যেখানে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, নীতি পরিবর্তন এবং রফতানির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এই খাত ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতি এবং কৌশলগত শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।