কলকাতা, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫: ভারতের রাজ্যগুলোর আর্থিক অবস্থা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। ভারতের নিয়ন্ত্রক ও মহালেখা পরীক্ষক (CAG) প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৬টি রাজ্য রাজস্ব উদ্বৃত্ত (CAG Revenue) অর্জন করতে সফল হয়েছে, যেখানে ১২টি রাজ্য রাজস্ব ঘাটতি (রেভিনিউ ডেফিসিট) এর মুখোমুখি হয়েছে। এই তালিকায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো, উদ্বৃত্ত রাজস্বে শীর্ষে তিনটি গেরুয়া রাজ্য—উত্তর প্রদেশ, গুজরাট এবং ওড়িশা—অবস্থান করছে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ এই তালিকায় নেই।
উত্তর প্রদেশ এই তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে, যেখানে রাজস্ব উদ্বৃত্ত ৩৭,০০০ কোটি টাকা। এই অর্থনৈতিক সাফল্যের পিছনে বিশেষজ্ঞরা মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের শাসনকালে করদান্য সংগ্রহে দক্ষতা এবং কেন্দ্রীয় সাহায্যের সঠিক ব্যবহারকে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন। গুজরাট দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ১৯,৮৬৫ কোটি টাকা উদ্বৃত্তের সঙ্গে, যেখানে ওড়িশা ১৯,৪৫৬ কোটি টাকা উদ্বৃত্তের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। ওড়িশার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই রাজ্যের ঋণ-জিডিপি অনুপাত দেশের সবচেয়ে কম (৮.৪৫%)।
অপরদিকে, রাজস্ব ঘাটতির তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। বাংলা ২৭,২৯৫ কোটি টাকা ঘাটতির সঙ্গে চতুর্থ স্থানে রয়েছে, যেখানে প্রথম পাঁচটি ঘাটতির রাজ্য হলো আন্ধ্রপ্রদেশ (৪৩,৪৮৮ কোটি টাকা), তামিলনাড়ু (৩৬,২১৫ কোটি টাকা), রাজস্থান (৩১,৪৯১ কোটি টাকা), পশ্চিমবঙ্গ এবং পঞ্জাব (২৬,০৪৫ কোটি টাকা)। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলার ঘাটতির পেছনে বেতন, পেনশন, সহায়তা এবং সুদের মতো নির্দিষ্ট ব্যয় বাড়ার কারণ রয়েছে। এছাড়া, রাজ্যের ঋণ বোঝা বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৩ সাল থেকে তিন গুণ বেড়ে ৫৯.৬ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা অর্থনৈতিক চাপ বাড়িয়ে তুলেছে।
এই তথ্য নিয়ে রাজনৈতিক পরিসরেও আলোচনা শুরু হয়েছে। গেরুয়া রাজ্যগুলোর সাফল্যের পেছনে কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তা এবং শাসন কার্যকলাপের দক্ষতাকে জোর দেওয়া হচ্ছে, যেখানে বাংলার ঘাটতি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলো থেকে কর আদায় করে উত্তর ভারতের রাজ্যগুলো উন্নতি করছে, তবে এই তথ্য সিদ্ধান্তের জন্য আরও গভীর বিশ্লেষণের প্রয়োজন।
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে, রাজ্য সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা এবং ব্যয় ব্যবস্থাপনার উন্নতি ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া সম্ভব নয়। জনগণের মধ্যে এই তথ্য নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, এবং রাজ্যের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা এখন রাজনৈতিক আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। সিএজির রিপোর্ট ঘোষণা করে দিয়েছে যে, রাজ্যের আর্থিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন, নতুবা দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার সামনা করতে হতে পারে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন
২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।
