বিশ্বের অন্তর্দেশীয় মাছ উৎপাদনে (Fish Production) শীর্ষে উঠে এসেছে ভারত। ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী অন্তর্দেশীয় মাছ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১.১৩ কোটি মেট্রিক টন, যার মধ্যে ভারত একাই উৎপাদন করেছে ১৯ লক্ষ মেট্রিক টন মাছ। এই রেকর্ড সাফল্যের মাধ্যমে ভারত পিছনে ফেলেছে তার প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ, চীন, মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়াকে।
মৎস্য উৎপাদনের এই বিশাল অগ্রগতি ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও গ্রামীণ জীবনের উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সরকারের সঠিক নীতি, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, এবং মৎস্যজীবীদের সচেতনতা ও পরিশ্রমের ফলে এই উন্নতি সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শীর্ষ উৎপাদক দেশগুলো
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) প্রকাশিত তথ্যানুসারে, ২০২২ সালে অন্তর্দেশীয় মাছ উৎপাদনে শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে রয়েছে—
- 🥇 ভারত – ১৯ লক্ষ মেট্রিক টন
- 🥈 বাংলাদেশ – ১৩ লক্ষ মেট্রিক টন
- 🥉 চীন – ১২ লক্ষ মেট্রিক টন
- মিয়ানমার – ৯ লক্ষ মেট্রিক টন
- ইন্দোনেশিয়া – ৫ লক্ষ মেট্রিক টন
এই তথ্য স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দেয় যে ভারত শুধু এশিয়ায় নয়, বরং বিশ্বপরিসরেই এখন অন্তর্দেশীয় মৎস্য খাতে এক অগ্রণী শক্তি।
কেন এই সাফল্য?
ভারতে অন্তর্দেশীয় মাছ চাষে সাফল্যের পেছনে রয়েছে বিভিন্ন কৌশলগত পরিকল্পনা ও উদ্যোগ। বিভিন্ন রাজ্যে যেমন অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, আসাম ও তেলেঙ্গানায় মাছ চাষ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পুকুর, জলাশয়, হ্যাচারি এবং আধুনিক বায়োফ্লক পদ্ধতির ব্যবহার এই উৎপাদন বৃদ্ধির পেছনে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছে।
ভারত সরকার “ব্লু রেভল্যুশন” এবং “প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা” (PMMSY) এর মাধ্যমে মৎস্য খাতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সহায়তা, প্রশিক্ষণ, এবং আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহ করা হয়েছে মৎস্যজীবীদের মধ্যে।
খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্ব
বিশ্বের ৮০০ কোটিরও বেশি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাছ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন উৎস। অন্তর্দেশীয় মাছ চাষ তুলনামূলকভাবে কম খরচে ও কম জায়গায় করা যায়, তাই এটি গ্রামীণ জনগণের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য আয়ের উৎস হিসেবেও কাজ করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে ভারত খুব শীঘ্রই মাছ রপ্তানির ক্ষেত্রেও বিশ্বে অন্যতম শীর্ষ স্থানে পৌঁছে যেতে পারবে।
বাংলাদেশ ও চীনের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশও অন্তর্দেশীয় মাছ উৎপাদনে শক্তিশালী অবস্থানে থাকলেও ভারতের এই অগ্রগতি তাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। চীন, যদিও বহুদিন ধরেই বিশ্বে সামগ্রিক মাছ উৎপাদনে শীর্ষে ছিল, এখন অন্তর্দেশীয় খাতে ভারতের দাপটে একটু পিছিয়ে পড়েছে।
ভারতের এই সাফল্য শুধু অর্থনৈতিক নয়, একটি কৌশলগত ও পরিবেশবান্ধব অগ্রগতি হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে টেকসই মাছ চাষ ও জলের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ভারত ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে একটি মডেল হিসেবে উঠে আসছে।
শত্রুদের পিছনে ফেলে এবার মাছ চাষেও ভারত দেখিয়ে দিল, সঠিক পরিকল্পনা ও কার্যকরী বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব।