আফ্রিকার সঙ্গে রেকর্ড অঙ্কের বাণিজ্য ভারতের

ভারত ও আফ্রিকার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক (India-Africa trade) এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত ও আফ্রিকার মধ্যে বাণিজ্য স্থির হয়েছে প্রায়…

India-Africa Trade Hits Record $100 Billion in 2024-25

ভারত ও আফ্রিকার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক (India-Africa trade) এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত ও আফ্রিকার মধ্যে বাণিজ্য স্থির হয়েছে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারে, যা পূর্বের তুলনায় একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি নির্দেশ করে। এই রেকর্ডমূলক অঙ্কটি ভারতের প্রতারণার প্রসারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং এটি দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির আফ্রিকার প্রতি গভীর আকর্ষণ ও নতুন বাজারে প্রবেশের পরিচয় দেয়। ভারতের প্রযুক্তি, শিল্প ও শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদিত পণ্যের রপ্তানি এবং আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদের আমদানি এই বাণিজ্য সম্পর্কের মূল ভিত্তি হয়ে উঠেছে।

বাণিজ্যের বৃদ্ধির পটভূমি
এই বাণিজ্য সঙ্ঘের মূল উৎস হলো ভারতের শিল্প ও প্রযুক্তি খাতের উন্নতি। বিশেষ করে, বিহারের মারহোয়া রেলওয়ে লোকোমোটিভ কারখানা থেকে গিনি দেশে ১৫০টি লোকোমোটিভ রপ্তানির চুক্তি এই বছরের জুন মাসে সম্পন্ন হয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৩,০০০ কোটি টাকা। এই লোকোমোটিভগুলো সিমান্দু আয়রন ওর প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট, যা আফ্রিকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভারতের অবদানের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এই লোকোমোটিভগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি যেমন বিতরণকৃত শক্তি বেতার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (DPWCS) ও আগুন সনাক্তকরণ ব্যবস্থা সংযুক্ত রয়েছে, যা এদের ব্যবহারিকতা ও নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেয়।

   

এই রপ্তানি ব্যবস্থার পাশাপাশি, ভারত আফ্রিকা থেকে তেল, স্বর্ণ, হীরক ও কৃষি পণ্য আমদানি করছে, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে আরও শক্তিশালী করছে। কমার্স মিনিস্ট্রির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভারতের আফ্রিকায় মোট বিনিয়োগ ৭৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যা এই অঞ্চলে ভারতের প্রভাব বাড়ার একটি স্পষ্ট সূচক।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ভারতের কৌশল
এই বাণিজ্য সঙ্ঘের পটভূমিতে বিশ্ববাজারে ভারতের অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ। ২৭ আগস্ট, ২০২৫ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০% শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি প্রভাবিত করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ভারত আফ্রিকার দিকে দৃষ্টি নিয়ে গভীরভাবে কাজ করছে, যা একটি বৈচিত্র্যময় বাণিজ্য কৌশলের অংশ। বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা ও নতুন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) এর মাধ্যমে এই চাপ কাটিয়ে উঠতে হবে।

আফ্রিকার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর মাধ্যমে ভারত চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৈশ্বিক শক্তির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চায়। আফ্রিকায় চীনের প্রভাব বাড়ছে, তবে ভারত এখানে নিজের স্থান নিশ্চিত করতে তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক সহায়তার মাধ্যমে কাজ করছে। ২০২৩ সালে গ্লোবাল সাউথ সম্মেলনে ৪৭টি আফ্রিকান দেশের অংশগ্রহণ এবং ১৮তম ভারত-আফ্রিকা সম্মেলনে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের আলোচনা এর প্রমাণ।

Advertisements

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রী পিয়ূষ গোয়েলের মতে, ভারত আফ্রিকায় গাড়ি, দুগ্ধ পণ্য রপ্তানি করতে পারে এবং স্বর্ণ, হীরক ও কৃষি পণ্য আমদানি করতে পারে। এই বিনিময় ব্যবস্থা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে। তবে, দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য ভারতকে আফ্রিকায় সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (FDI) বাড়াতে হবে, যা বর্তমানে ৭৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।

এই বাণিজ্য সম্পর্কের মাধ্যমে ভারত আফ্রিকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে এবং একই সঙ্গে নিজের অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী করছে। বিশেষজ্ঞদেরtr মতে, আগামী দশকেও এই সম্পর্ক আরও গভীর হতে পারে, যদি ভারত আফ্রিকার স্থানীয় প্রয়োজন এবং বাজারের চাহিদা বিবেচনা করে কাজ করে।

ভারত ও আফ্রিকার মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য একটি নতুন যুগের সূচনা। এটি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কথা বলে না, বরং দুই মহাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও কৌশলগত সহযোগিতার প্রতিচ্ছবি। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক চাপের মুখে ভারতের এই পদক্ষেপ বৈশ্বিক বাজারে এর স্থান নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আগামী দিনে এই সম্পর্ক কীভাবে গড়ে উঠবে, তা নির্ভর করবে ভারতের কৌশল এবং আফ্রিকার সহযোগিতার উপর।