ভারতের ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার মেরুদণ্ড ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস (UPI Payments) আগস্ট ২০২৫-এ একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক অর্জন করেছে। ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (এনপিসিআই)-এর তথ্য অনুযায়ী, এই মাসে ইউপিআই ২০.০১ বিলিয়ন লেনদেন সম্পন্ন করেছে, যা প্রথমবারের মতো মাসিক ২০ বিলিয়ন লেনদেনের সীমা অতিক্রম করেছে।
এই পরিমাণ জুলাই মাসের ১৯.৪৭ বিলিয়ন লেনদেনের তুলনায় ২.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। লেনদেনের মূল্যের দিক থেকে, আগস্টে ইউপিআই-এর মাধ্যমে ২৪.৮৫ লক্ষ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা জুলাইয়ের ২৫.০৮ লক্ষ কোটি টাকার তুলনায় সামান্য কম।
গত বছরের আগস্টের তুলনায় লেনদেনের পরিমাণ ৩৪ শতাংশ এবং মূল্য ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অভূতপূর্ব সাফল্য ভারতের ডিজিটাল অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান শক্তি এবং ইউপিআই-এর জনপ্রিয়তার প্রমাণ।
এনপিসিআই-এর তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে গড়ে প্রতিদিন ৬৪৫ মিলিয়ন লেনদেন হয়েছে, যার মোট মূল্য প্রায় ৮০,১৭৭ কোটি টাকা। এই মাসে ইউপিআই ২ আগস্ট প্রথমবারের মতো এক দিনে ৭০০ মিলিয়ন লেনদেন অতিক্রম করে এবং পরবর্তীতে একদিনে রেকর্ড ৭২১ মিলিয়ন লেনদেন সম্পন্ন করে।
উৎসবের মরসুমের শুরু এবং ভোক্তাদের ব্যয় বৃদ্ধির ফলে এই লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ওয়ার্ল্ডলাইনের চিফ ডেলিভারি অ্যান্ড অপারেশনস অফিসার রামকৃষ্ণন রামমূর্তি বলেন, “উৎসবের মরসুমের শুরু এবং ভোক্তা ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিফলন ইউপিআই-এর লেনদেন বৃদ্ধিতে দেখা যাচ্ছে। ইউপিআই ডিজিটাল পেমেন্টের প্রাথমিক বিকল্প হিসেবে তার অবস্থান শক্তিশালী করছে।”
ইউপিআই-এর এই সাফল্য শুধু শহরাঞ্চলেই সীমাবদ্ধ নয়, গ্রামীণ ভারতেও এর প্রভাব লক্ষণীয়। স্পাইস মানির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও দিলীপ মোদি বলেন, “৩৪ শতাংশ বার্ষিক বৃদ্ধি এবং ধারাবাহিক মাসিক প্রবৃদ্ধি দেখায় যে, ডিজিটাল পেমেন্ট শুধু শহুরে প্রবণতা নয়, গ্রামীণ ভারতেও এটি জীবনযাত্রার অংশ হয়ে উঠেছে।” তিনি আরও জানান, ইউপিআই-এর এই বিপুল পরিমাণ লেনদেন অপ্রাতিষ্ঠানিক সম্প্রদায়ের জন্য ক্রেডিট, বীমা এবং সঞ্চয় পণ্যের দ্বার উন্মোচন করতে পারে।
২০১৬ সালে এনপিসিআই দ্বারা চালু হওয়া ইউপিআই ভারতের ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থায় বিপ্লব এনেছে। এই প্ল্যাটফর্মটি পিয়ার-টু-পিয়ার (P2P) এবং পিয়ার-টু-মার্চেন্ট (P2M) লেনদেনের জন্য একটি সহজ এবং তাৎক্ষণিক সমাধান প্রদান করে। ২০২৫ সালে ইউপিআই-এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০০ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে, এবং এটি এখন বিশ্বের বৃহত্তম রিয়েল-টাইম পেমেন্ট সিস্টেমগুলির মধ্যে একটি।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের তথ্য অনুযায়ী, ইউপিআই ২০২৫ সালে ভিসাকে ছাড়িয়ে ডিজিটাল পেমেন্টে শীর্ষে উঠেছে, যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৬৪০ মিলিয়ন লেনদেন হয়।
ইউপিআই-এর এই বৃদ্ধি সত্ত্বেও, মার্চেন্ট ডিসকাউন্ট রেট (MDR) প্রবর্তন নিয়ে বিতর্ক চলছে। ফিনটেক সংস্থা এবং পেমেন্ট কোম্পানিগুলি বড় মার্চেন্ট এবং উচ্চ মূল্যের লেনদেনে নামমাত্র MDR চালুর জন্য সরকারের কাছে আবেদন করছে। এটি প্ল্যাটফর্মের টেকসইতা নিশ্চিত করবে বলে তারা মনে করেন।
যদিও সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ইউপিআই-এর ভর্তুকি ৪,৫০০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১,৫০০ কোটি টাকা করেছে, তবু MDR চালুর অনুমোদন দেয়নি। সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) এই দাবির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে।
ইউপিআই-এর বৈশ্বিক প্রসারও লক্ষণীয়। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, ফ্রান্স, মরিশাস এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ সাতটি দেশে ইউপিআই চালু হয়েছে। ২০২৪ সালে শ্রীলঙ্কায় লঙ্কাপে-এর সঙ্গে ইউপিআই-এর সংযোগ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে, যা ভারতীয় পর্যটকদের ৪.৫ লক্ষের বেশি স্থানে পেমেন্ট করতে সহায়তা করছে। এছাড়া, ২০২৫ সালে সাইপ্রাসে ইউপিআই সেবা চালুর জন্য ইউরোব্যাঙ্কের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
কোথাও গলিত লোহার বৃষ্টি, কোথাও মৃত্যুর অন্ধকার ছায়া… ৫টি সবচেয়ে বিপজ্জনক গ্রহ যেখানে জীবন অসম্ভব
ইউপিআই-এর এই অভূতপূর্ব সাফল্য ভারতের ক্যাশলেস অর্থনীতির দিকে যাত্রাকে ত্বরান্বিত করছে। মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলি ইউপিআই গ্রহণে শীর্ষে রয়েছে। আগামী দিনে ইউপিআই-এর লক্ষ্য প্রতিদিন ১০০ কোটি লেনদেন অর্জন করা, যা বর্তমান বৃদ্ধির হারে ২০২৬ সালের মধ্যে সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।