ভারতীয় প্রতিরক্ষা খাতে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা দেশের আকাশপথে আত্মনির্ভরতার নতুন যুগের সূচনা করবে। ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রায় ৬৫,৪০০ কোটি রুপয়ের (প্রায় ৭.৪৪ বিলিয়ন ডলার) বিশাল বিনিয়োগ করে ভারত ১,১০০টি দেশীয় ফাইটার জেট ইঞ্জিন তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে। এই উদ্যোগ আমদানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে ভবিষ্যতের যুদ্ধবিমানগুলোকে দেশীয় শক্তির সাথে চালিত করবে, যেমন তেজস এমকেআর২, অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট (এএমসিএ) এবং উন্নত অন্যান্য ফাইটার জেট। এটি শুধু প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়, বরং আত্মনির্ভর ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির এক জ্বলন্ত প্রমাণ, যা ভারতকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এরোস্পেস শক্তিতে পরিণত করবে। সাম্প্রতিক খবরে জানা গেছে, ভারতীয় বিমান বাহিনী (আইএএফ) ২০৩৫ নাগাদ ৪২টি স্কোয়াড্রনের ফ্লিট গড়তে প্রায় ৪৫০টি নতুন যুদ্ধবিমান যোগ করবে, যাদের অনেকগুলো দেশীয় ইঞ্জিনে চালিত হবে।
এই পরিকল্পনার নেতৃত্ব দেবেন গ্যাস টারবাইন রিসার্চ এস্টাবলিশমেন্ট (জিটিআরই), যার ডিরেক্টর এস.ভি. রামানা মুর্থি। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এটি একটি ‘মিশন-মোড’ অ্যাপ্রোচের মাধ্যমে চালিত হবে, যাতে সরকারি ল্যাব, বেসরকারি শিল্প এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে যৌথ কাজ হয়। ভারতের দেশীয় কাবেরি ইঞ্জিন প্রোগ্রাম, যা অতীতে বিলম্বের কারণে সমস্যায় পড়েছিল, এখন নতুন উদ্যম নিয়ে পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। এই ইঞ্জিনের ডেরিভেটিভ ভার্সন ভারতের অনডোম্যান্ড কমব্যাট এরিয়াল ভেহিকেল (ইউসিএভি)-কে চালিত করতে পারে, যা ম্যানড ফাইটারের বাইরেও এর কার্যকারিতা বাড়াবে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই), সাফরান এবং রোলস-রয়েসের মতো কোম্পানিগুলোর সাথে টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট হবে, কিন্তু মূল ফোকাস থাকবে দেশীয় উৎপাদনে। এই উদ্যোগের ফলে ভারতের প্রতিরক্ষা আমদানি নির্ভরতা কমে বিশ্ববাজারে তার ক্রেডিবিলিটি বাড়বে।
প্রতিরক্ষা খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিনিয়োগ শুধু ইঞ্জিন তৈরি নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ ইকোসিস্টেম গড়ার লক্ষ্য রাখে। ১,১০০টি ইঞ্জিনের উৎপাদন পরবর্তী দশকে ভারতের এরোস্পেস শিল্পকে বিপ্লবী পরিবর্তন আনবে। তেজস এমকেআর১-এর সাফল্যের পর এমকেআর২ এবং এএমসিএ-এর মতো প্রকল্পগুলো দেশীয় ইঞ্জিনে চালিত হয়ে উঠলে আইএএফ-এর যুদ্ধক্ষমতা বহুগুণ বাড়বে। এটি চীনের দ্রুত সামরিকীকরণের মুখোমুখি ভারতের জন্য একটি কৌশলগত সুবিধা তৈরি করবে। অতীতে ফাইটার জেট ইঞ্জিন আমদানির উপর নির্ভরতা ভারতের একটি দুর্বলতা ছিল, কিন্তু এখন আত্মনির্ভর ভারতের অধীনে এই খাতে বিপ্লব ঘটছে। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, এই প্রকল্পটি হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (এইচএএল) এবং অন্যান্য পাবলিক সেক্টর ইউনিটের সাথে যৌথভাবে চালানো হবে, যা লক্ষ লক্ষ চাকরির সৃষ্টি করবে এবং যুবকদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর ভাইরাল হয়েছে। মেঘ আপডেটস-এর পোস্টে ১,২৮০টিরও বেশি লাইক এসেছে, যেখানে লোকেরা #MakeInIndia এবং #AtmanirbharBharat ট্যাগ দিয়ে উদযাপন করছেন। একজন ইউজার লিখেছেন, “এবার ভারতীয় আকাশে দেশীয় ইঞ্জিনের গর্জন শুনব!” অন্যরা বলছেন, “২০৩৫ দূর মনে হচ্ছে না, কারণ কাবেরির পুনরুজ্জীবন এখনই শুরু হয়েছে।” এই উদ্যোগ ভারতকে বিশ্বের মাত্র কয়েকটি দেশের সাথে যুক্ত করবে যারা নিজস্ব ফাইটার জেট ইঞ্জিন তৈরি করতে পারে। এটি শুধু সামরিক শক্তি বাড়াবে না, বরং অর্থনীতিতে নতুন গতি আনবে এবং বিশ্ববাজারে রপ্তানির পথ খুলে দেবে। ভারত মাতা কি জয় হো—এই জয় আকাশপথে নতুন ইতিহাস লিখবে!


