রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ও বিদেশি সম্পত্তির সঠিক ঘোষণা নিয়ে সতর্ক বার্তা

আয়কর দফতর সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, অর্থবর্ষ ২০২৪-২৫ (মূল্যায়ন বছর ২০২৫-২৬)-এর আয়কর রিটার্ন (Income Tax Return) জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩১ জুলাই থেকে বাড়িয়ে ১৫…

CBDT Targets Crypto Tax Evasion, Probes Undeclared Income

আয়কর দফতর সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, অর্থবর্ষ ২০২৪-২৫ (মূল্যায়ন বছর ২০২৫-২৬)-এর আয়কর রিটার্ন (Income Tax Return) জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩১ জুলাই থেকে বাড়িয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর করা হয়েছে। এই বাড়তি সময়ের মধ্যে সকল করদাতাকে তাদের বাকি কর পরিশোধ এবং রিটার্ন ফাইলিং সম্পূর্ণ করতে বলা হয়েছে।

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, আয়কর রিটার্নে নিজের আয় এবং শেয়ার সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য দিতে হবে। এর পাশাপাশি, যেকোনো বিদেশি সম্পত্তি, শেয়ার বা আয়ও স্পষ্টভাবে জানানো বাধ্যতামূলক। বিদেশি সম্পদ প্রকাশের মাধ্যমে শুধু কর ফাঁকি রোধ হয় না, বরং আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা বজায় থাকে।

   

বিদেশি সম্পত্তি কোথায় ঘোষণা করতে হবে
যেসব করদাতা ভারতের ‘রেসিডেন্ট এবং অর্ডিনারি রেসিডেন্ট’ (Resident and Ordinary Resident বা ROR) হিসাবে বিবেচিত, তাদের জন্য বিদেশি সম্পত্তি ও আয় ঘোষণা করা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে, আয়কর রিটার্নের ‘শিডিউল এফএ’ (Schedule FA – Foreign Assets) অংশে এই তথ্য জানাতে হবে।

বিদেশি শেয়ার বা সম্পদ প্রকাশের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে হবে। যেমন, বিদেশি কোম্পানির দেশের নাম এবং কোড, কোম্পানির ঠিকানা, সম্পত্তির ধরণ, অধিগ্রহণের তারিখ, মোট বিনিয়োগের পরিমাণ, অর্জিত আয় (যদি থাকে), এবং মালিকানার ধরন (ডাইরেক্ট বা বেনিফিশিয়াল)।

কোন ITR ফর্মে ঘোষণা করতে হবে
সব ITR ফর্মে বিদেশি সম্পত্তির ঘোষণা দেওয়া যায় না। শুধুমাত্র ITR-2 এবং ITR-3 ফর্মে এই তথ্য জানানো যায়। সুতরাং, যার বিদেশি সম্পত্তি বা শেয়ার রয়েছে, তারা ভুলভাবে ITR-1 বা ITR-4 ফর্ম ব্যবহার করতে পারবেন না।

বিদেশি শেয়ার কেন ঘোষণা করা জরুরি
বর্তমানে বহু ভারতীয় বিনিয়োগকারী আন্তর্জাতিক শেয়ার বাজারে, বিশেষ করে আমেরিকার স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করছেন। এটি বিনিয়োগকারীদের বৈচিত্র্য বৃদ্ধির পাশাপাশি বিশ্ববাজারে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়। তবে, বিদেশি শেয়ার হোল্ডিং-এর ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যদি কেউ এই সম্পদ ঘোষণা না করে, তাহলে ‘কালো টাকা (অপ্রকাশিত বিদেশি আয় ও সম্পত্তি) ও কর আরোপ আইন, ২০১৫’-এর আওতায় কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে পারেন। এই আইনের অধীনে বড় অঙ্কের জরিমানা ও কারাদণ্ডের ব্যবস্থাও রয়েছে।

আয়কর দফতর স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, ‘‘যদি কোনো করদাতা বিদেশি সম্পত্তি ও আয়ের তথ্য গোপন করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। করদাতাদের সঠিকভাবে ঘোষণা দিয়ে আইন মেনে চলা উচিত, না হলে আইনি ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।’’

Advertisements

সঠিক ঘোষণা কীভাবে সাহায্য করে
বিদেশি আয় ও সম্পত্তির সঠিকভাবে ঘোষণা করা মানে করদাতার আইন মেনে চলার এবং সৎ থাকার প্রতীক। আন্তর্জাতিক আয়ের ঘোষণা করলে ডাবল ট্যাক্সেশন অ্যাভয়েডেন্স এগ্রিমেন্ট (DTAA)-এর সুবিধা নেওয়া যায়। এর ফলে বিদেশে যে কর দেওয়া হয়েছে, তা ভারতে পুনরায় দিতে হয় না। এতে করে করদাতার মোট করের বোঝা হ্রাস পায়।

এছাড়া, বিদেশি সম্পত্তি ও আয় প্রকাশ করে করদাতা ভারতের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখেন। সঠিক পরিমাণ কর প্রদান করলে সরকারের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ থাকে, যা পরিকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং অন্যান্য জনসেবা উন্নত করতে কাজে লাগে।

শাস্তি এবং জরিমানার বিধান
বিদেশি সম্পত্তি গোপন করলে কেবল অর্থদণ্ডই নয়, জেল পর্যন্ত হতে পারে। আইন অনুযায়ী, অপ্রকাশিত বিদেশি সম্পত্তির ১২০% পর্যন্ত জরিমানা এবং সর্বাধিক ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। সুতরাং, বিনিয়োগকারীদের সতর্কভাবে এগিয়ে চলা উচিত এবং সঠিকভাবে রিটার্ন ফাইল করা উচিত।

বর্তমানে করদাতাদের মধ্যে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের প্রবণতা অনেক বেড়েছে। এই বিনিয়োগের সঠিক হিসাব রাখার পাশাপাশি শিডিউল এফএ-তে সঠিক তথ্য দিয়ে রিটার্ন ফাইল করা সকলের জন্য আবশ্যক।

করদাতাদের মনে রাখা উচিত, এই বছর আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়িয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বাকি কর পরিশোধ এবং সব ধরনের সম্পদ ও আয় সঠিকভাবে ঘোষণার মাধ্যমে যে শুধু আইন মেনে চলা যায়, তা নয়; বরং নিজের কর দায়িত্বও সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব।