আয়কর (আই-টি) বিভাগ ই-ফাইলিং পোর্টালে ই-পে ট্যাক্স পরিষেবার (Online Tax Payment) সঙ্গে যুক্ত ব্যাঙ্কগুলির তালিকা আপডেট করেছে। সম্প্রতি, তামিলনাড় মার্কেন্টাইল ব্যাঙ্ক (৫ মার্চ ২০২৫-এ যুক্ত) এবং আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাঙ্ক (২৭ নভেম্বর ২০২৪-এ যুক্ত) এই তালিকায় নতুন সংযোজন হিসেবে এসেছে। এর আগে ২৬ জুন ২০২৪-এ ধনলক্ষ্মী ব্যাঙ্কও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এই সংযোজনের ফলে এখন মোট ৩০টি ব্যাঙ্ক ই-ফাইলিং পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে কর প্রদানের জন্য উপলব্ধ রয়েছে।
এই তালিকায় থাকা কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যাঙ্কের মধ্যে রয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই), এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অফ বরোদা, বন্ধন ব্যাঙ্ক, ফেডারেল ব্যাঙ্ক, আইডিবিআই ব্যাঙ্ক, ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্ক, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক, ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক, কর্ণাটক ব্যাঙ্ক, ডিসিবি ব্যাঙ্ক, জম্মু ও কাশ্মীর ব্যাঙ্ক এবং করুর বৈশ্য ব্যাঙ্ক। এছাড়াও তালিকায় রয়েছে ক্যানারা ব্যাঙ্ক, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক, সাউথ ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক, আরবিএল ব্যাঙ্ক, ইউকো ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অফ মহারাষ্ট্র, সিটি ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক, পাঞ্জাব অ্যান্ড সিন্ধ ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, ধনলক্ষ্মী ব্যাঙ্ক, আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাঙ্ক এবং তামিলনাড় মার্কেন্টাইল ব্যাঙ্ক।
এই আপডেটের মাধ্যমে আয়কর বিভাগ করদাতাদের জন্য অনলাইন কর প্রদানের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ এবং সুবিধাজনক করে তুলেছে। তামিলনাড় মার্কেন্টাইল ব্যাঙ্কের সংযোজন বিশেষ করে তামিলনাড়ু অঞ্চলের গ্রাহকদের জন্য সুবিধা বাড়াবে, যেখানে এই ব্যাঙ্কের শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে। একইভাবে, আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাঙ্ক এবং ধনলক্ষ্মী ব্যাঙ্কের অন্তর্ভুক্তি ব্যাঙ্কিং বিকল্পগুলির পরিসরকে আরও বিস্তৃত করেছে।
ই-ফাইলিং পোর্টালে ই-পে ট্যাক্স পরিষেবা কীভাবে কাজ করে?
ই-ফাইলিং পোর্টালে ই-পে ট্যাক্স পরিষেবা সরাসরি কর প্রদানের প্রক্রিয়াকে সরলীকৃত করেছে। এই পরিষেবার মাধ্যমে করদাতারা একটি চালান (সিআরএন) তৈরি করতে পারেন, অনুমোদিত ব্যাঙ্কগুলির মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারেন এবং তাঁদের পেমেন্টের ইতিহাস ট্র্যাক করতে পারেন। এছাড়াও, এই পরিষেবা বিভিন্ন কর-সংক্রান্ত লেনদেনের জন্য ফর্ম ২৬কিউবি, ২৬কিউসি, ২৬কিউডি এবং ২৬কিউই ফাইল করার সুবিধা প্রদান করে। এই সিস্টেমে করদাতারা একটি একক প্ল্যাটফর্ম থেকে তাঁদের কর পরিশোধের সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন, যা সময় এবং শ্রম উভয়ই সাশ্রয় করে।
ই-পে ট্যাক্স পরিষেবার মাধ্যমে করদাতারা তাঁদের আয়কর, টিডিএস (ট্যাক্স ডিডাক্টেড অ্যাট সোর্স), এবং অন্যান্য সরাসরি কর সহজে পরিশোধ করতে পারেন। এই পরিষেবা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিরাপদ এবং রিয়েল-টাইম পেমেন্টের সুবিধা দেয়, যাতে করদাতাদের আর ব্যাঙ্কে গিয়ে লাইনে দাঁড়াতে না হয়। প্রতিটি চালান তৈরির সময় একটি অনন্য চালান রেফারেন্স নম্বর (সিআরএন) প্রদান করা হয়, যা পেমেন্ট প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ এবং ট্র্যাকযোগ্য করে তোলে।
আয়কর প্রদানের জন্য পেমেন্ট মোডগুলি কী কী?
ই-পে ট্যাক্স পরিষেবার মাধ্যমে করদাতারা তিনটি প্রধান পেমেন্ট মোড ব্যবহার করতে পারেন—নেট ব্যাঙ্কিং, ডেবিট কার্ড এবং ব্যাঙ্ক কাউন্টারে সরাসরি পেমেন্ট। এছাড়াও, যেসব ব্যাঙ্ক সরাসরি কর সংগ্রহের জন্য অনুমোদিত নয়, সেগুলির মাধ্যমে আরটিজিএস/এনইএফটি এবং পেমেন্ট গেটওয়ে (নেট ব্যাঙ্কিং, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড এবং ইউপিআই) ব্যবহার করে কর প্রদান করা যায়। বর্তমানে, ক্যানারা ব্যাঙ্ক, ফেডারেল ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অফ মহারাষ্ট্র এবং স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া পেমেন্ট গেটওয়ে পরিষেবা প্রদান করে। এই বৈচিত্র্যময় পেমেন্ট বিকল্পগুলি করদাতাদের নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী পদ্ধতি বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দেয়।
মূল্যায়ন বছর ২০২৫-২৬-এর জন্য আইটিআর ফাইলিং কবে শুরু হবে?
মূল্যায়ন বছর (এওয়াই) ২০২৫-২৬-এর জন্য আয়কর রিটার্ন (আইটিআর) ফাইলিং শুরু হবে ১ এপ্রিল ২০২৫ থেকে। আয়কর বিভাগ ই-ফাইলিং পোর্টালে অফলাইন ইউটিলিটি এবং অনলাইন ফর্ম উপলব্ধ হলে করদাতাদের অবহিত করবে। যেসব ব্যক্তির অডিটের প্রয়োজন নেই, তাঁদের জন্য রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ হল ৩১ জুলাই ২০২৫। এই সময়সীমার মধ্যে করদাতাদের তাঁদের আয়, ছাড় এবং কর পরিশোধের বিবরণ সঠিকভাবে জমা দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
আয়কর বিভাগের এই উদ্যোগ ডিজিটাল কর ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করেছে। ৩০টি ব্যাঙ্কের তালিকা সম্প্রসারণের ফলে করদাতারা তাঁদের পছন্দের ব্যাঙ্কের মাধ্যমে সহজেই কর পরিশোধ করতে পারবেন। এই পরিষেবা শুধু সময় বাঁচায় না, বরং কর প্রদানের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং নির্ভুলতাও নিশ্চিত করে। বিশেষ করে, ছোট ব্যবসায়ী এবং সাধারণ করদাতাদের জন্য এটি একটি বড় সুবিধা হয়ে উঠেছে।
আয়কর বিভাগের এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ভারতের ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। করদাতাদের উচিত এই সুবিধাগুলি কাজে লাগিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাঁদের কর পরিশোধ এবং রিটার্ন ফাইল করা। তামিলনাড় মার্কেন্টাইল ব্যাঙ্কের মতো আঞ্চলিক ব্যাঙ্কগুলির অন্তর্ভুক্তি প্রমাণ করে যে আয়কর বিভাগ সারা দেশের করদাতাদের চাহিদার প্রতি সংবেদনশীল। এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে আরও ব্যাঙ্ক যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাকেও উন্মুক্ত রেখেছে।