আয়কর রিটার্নে (Income Tax) ভুয়ো ছাড় ও অব্যাহতি দাবি করে বিপুল পরিমাণ রিফান্ড আদায়ের চেষ্টার বিরুদ্ধে বড়সড় পদক্ষেপ নিল আয়কর বিভাগ। সোমবার অর্থাৎ ১৪ জুলাই, ২০২৫ তারিখে আয়কর বিভাগ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, একাধিক রাজ্যে সমন্বিতভাবে বড়মাপের যাচাই অভিযান চালানো হয়েছে। এতে দেখা গেছে, আয়কর আইন, ১৯৬১-এর বিভিন্ন ধারার অধীনে ভুয়া ছাড় ও অব্যাহতির অপব্যবহার করে বহু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বেআইনি সুবিধা নিচ্ছিল।
অভিযানটি মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, দিল্লি, গুজরাত, পাঞ্জাব এবং মধ্যপ্রদেশসহ একাধিক রাজ্যে চালানো হয়েছে। সম্প্রতি পরিচালিত সার্চ এবং সিজার অভিযানে এই চক্রের বিরুদ্ধে শক্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে।
AI-এর সাহায্যে চিহ্নিত দুর্নীতি:
বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তৃতীয় পক্ষের আর্থিক তথ্য, মাঠপর্যায়ের গোয়েন্দা তথ্য এবং আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তির মাধ্যমে এই অপব্যবহারের নেটওয়ার্ক শনাক্ত করা হয়েছে। এসব চক্রের মূল লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কর্মচারী এবং বহুজাতিক কোম্পানির কর্মচারীদের লোভ দেখিয়ে অতিরিক্ত রিফান্ড আদায় করা। পরিবর্তে এই চক্র কমিশন নিত।
বিভাগের মতে, অনেক সময় দেখা গেছে যে, করদাতার অজান্তেই তার নামে জাল ইমেল আইডি ব্যবহার করে আয়কর রিটার্ন ফাইল করা হয়েছে এবং অবৈধ ছাড় দাবি করা হয়েছে। ফলে বহু ব্যক্তি জানতেই পারেননি যে তাদের নামে এমন ভুয়া দাবি করা হচ্ছে।
কোন কোন ধারার অপব্যবহার?
আয়কর বিভাগের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আয়কর আইনের যে ধারাগুলি সবচেয়ে বেশি অপব্যবহার হয়েছে সেগুলি হল:
ধারা ১০(১৩A): হাউস রেন্ট অ্যালাওয়েন্স (HRA)
ধারা ৮০সি: বিনিয়োগ-সংক্রান্ত ছাড়
ধারা ৮০ডি: স্বাস্থ্য বিমা প্রিমিয়াম
ধারা ৮০জি ও ৮০জিজিজিএ: অনুদান সংক্রান্ত ছাড়
ধারা ৮০ই, ৮০ইইবি: শিক্ষালোন ও বৈদ্যুতিক গাড়ির ঋণের সুদ
ধারা ৮০ডিডিবি: জটিল রোগের চিকিৎসা খরচ
বিভাগের ভাষায়, “অনুসন্ধান এবং বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, অনেকেই সঠিক নথি ও প্রমাণ ছাড়া এই ধারাগুলিতে ছাড় দাবি করেছেন। এর ফলে কর ব্যবস্থায় মারাত্মক ফাঁক তৈরি হয়েছে।”
১,০৪৫ কোটি টাকার জালিয়াতি
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে অস্বাভাবিক ছাড় এবং রিফান্ডের ধরণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা গেছে, একাধিক শহরে সক্রিয় একটি সংঘবদ্ধ চক্র প্রায় ১,০৪৫ কোটি টাকার ভুয়া রিফান্ড দাবি করেছে। এর মধ্যে অনেক করদাতাই এই ফাঁদের শিকার হয়েছেন, অনেকে আবার ইচ্ছাকৃতভাবে যুক্ত হয়েছেন।
বিভাগের মতে, এই চক্র ভুয়া নথি তৈরি করে, বিভ্রান্তিকর তথ্য ব্যবহার করে করদাতাদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
সতর্কবার্তা এবং সংশোধনের সুযোগ:
যদিও জালিয়াতির পরিমাণ অনেক বড়, তবুও আয়কর বিভাগ জানিয়েছে যে, ‘Trust Taxpayers First’ নীতির আওতায় করদাতাদের স্বেচ্ছায় সংশোধিত রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এজন্য সন্দেহভাজন করদাতাদের কাছে SMS ও ইমেল পাঠানো হয়েছে। যারা এখনও সংশোধন করেননি, তাদের দ্রুত ভুল শোধরানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “করদাতারা ইচ্ছাকৃতভাবে বা অজান্তে যেভাবেই জড়িত হোন না কেন, তাদেরকে স্বেচ্ছায় সঠিক রিটার্ন জমা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।”
কঠোর ব্যবস্থা:
তবে সংশোধন না করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছে আয়কর বিভাগ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “যারা এখনও ভুয়া দাবির উপর জোর দিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা এবং প্রয়োজনে ফৌজদারি মামলা করা হবে। ইতিমধ্যেই প্রায় ১৫০টি স্থানে যাচাই অভিযান শুরু হয়েছে।”
এই অভিযান দেশের অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা রক্ষায় বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। করদাতাদের সতর্ক করে বিভাগ জানিয়েছে, “সঠিক তথ্য এবং বৈধ নথি ছাড়া কখনও রিটার্ন ফাইল করবেন না। অজানা বা অবৈধ মধ্যস্থতাকারীর প্রলোভনে পা দেবেন না।”
অভিযান এখনও চলছে এবং গোয়েন্দা ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতায় তদন্ত আরও গভীরে পৌঁছানো হবে বলে জানা গেছে।
সর্বশেষে, আয়কর বিভাগ সবাইকে সঠিক আয় এবং সঠিক যোগাযোগের তথ্য দিয়ে রিটার্ন জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ, যেকোনও প্রকার ভুল বা ভুয়া দাবি থেকে আইনি জটিলতা এড়ানোর একমাত্র উপায় সততা।