ভারতের কর ব্যবস্থায় আসছে বড় পরিবর্তন। কেন্দ্র সরকার চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আয়কর আইন ২০২৫-এর সমস্ত নিয়ম ও ফর্ম প্রকাশ করবে বলে জানা গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এই নিয়ম প্রকাশের পর থেকেই বাজেট প্রস্তুতির কাজ শুরু হবে এবং নতুন আইন কার্যকর হবে ২০২৬ সালের এপ্রিল থেকে।
একক নোটিফিকেশনে সব নিয়ম প্রকাশ
সরকারি সূত্রে খবর, প্রায় ৪০০টি নিয়ম ও ১৮০টি ফর্ম ডিসেম্বরের মধ্যে একসঙ্গে নোটিফাই করা হবে। বর্তমানে প্রচলিত আয়কর আইনে ৫০০-র বেশি নিয়ম রয়েছে, যা তুলনায় অনেক জটিল। নতুন কাঠামো এই নিয়মগুলিকে একত্রিত ও সরল করবে।
একজন কর্মকর্তা বলেন—
“ডিসেম্বরে আমরা সমস্ত নিয়ম একত্রে নোটিফাই করব। এর সঙ্গে সিস্টেম টেস্টিং, ট্রায়াল রান এবং ব্যাকএন্ড সমন্বয়ের কাজও চলবে বছরের শেষ প্রান্তিকে।”
অর্থাৎ, শুধু নিয়ম প্রকাশ নয়, নতুন ব্যবস্থাকে কার্যকর করার জন্য প্রযুক্তিগত দিক থেকেও বড় আপগ্রেড শুরু হবে।
নতুন নিয়ম ও ফর্মের বৈশিষ্ট্য
নতুন আইন অনুযায়ী—
নিয়মগুলি মূলত কর নির্ধারণ, রিফান্ড প্রক্রিয়া এবং করছাড় সম্পর্কিত হবে।
ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক করদাতাদের জন্য নতুন বিন্যাসে ফর্ম প্রকাশিত হবে।
বিদ্যমান ফর্মগুলো সংহত করে সরল করা হবে, যাতে সাধারণ করদাতারাও সহজে বুঝতে পারেন।
প্রতিটি ফর্মের প্রোটোটাইপ তৈরি করে সিস্টেম টেস্টিং ও চেকিং সম্পন্ন করা হবে।
কার্যকর হবে এপ্রিল ২০২৬ থেকে
নতুন আয়কর আইন ২০২৫ কার্যকর হবে ২০২৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে। এর আগে আয়কর দপ্তরের কম্পিউটার সিস্টেমকে নতুন কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে সম্পূর্ণ রিবুট ও আপগ্রেড করা হবে।
এর মানে, আগামী অর্থবছর থেকেই করদাতারা নতুন নিয়ম ও ফর্ম ব্যবহার করতে পারবেন।
আয়কর আইন ২০২৫: মূল বৈশিষ্ট্য
কেন্দ্র সরকার ২০২৫ সালের ২২ আগস্ট সরকারি গেজেটে আয়কর আইন ২০২৫ প্রকাশ করে। এর আগের দিন রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায় এই আইন। নতুন আইনটি ১৯৬১ সালের আয়কর আইনকে প্রতিস্থাপন করছে।
মূল পরিবর্তনগুলো হলো—
পুরনো আইনের ৮১৯টি ধারা কমিয়ে আনা হয়েছে ৫৩৬-এ।
অধ্যায় সংখ্যা ৪৭ থেকে কমে ২৩।
মোট শব্দ সংখ্যা ৫.১২ লক্ষ থেকে ২.৬ লক্ষে নামানো হয়েছে।
প্রথমবারের মতো ৩৯টি টেবিল ও ৪০টি ফর্মুলা যুক্ত করা হয়েছে, যাতে জটিল ভাষা সহজ হয় এবং পুনরাবৃত্তি দূর হয়।
সরকার বলছে, এই নতুন কাঠামো হবে সহজ, স্বচ্ছ ও করদাতা-বান্ধব।
দ্রুত প্রস্তুতি
নতুন আয়কর আইনটি মাত্র ছয় মাসে প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি প্রথম উপস্থাপিত হয়েছিল ২০২৫ সালের বাজেট অধিবেশনে। পরে সংসদের মনসুন অধিবেশনে সংশোধিত আকারে পাস হয়। ফলে, ভারতের করব্যবস্থায় এটি স্বাধীনতার পর অন্যতম বড় সংস্কার বলে ধরা হচ্ছে।
ডিসেম্বরে যখন সমস্ত নিয়ম ও ফর্ম একসঙ্গে নোটিফাই হবে, তখন করদাতারা পরিষ্কার ধারণা পাবেন নতুন আইন কীভাবে কার্যকর হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিবর্তন যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে আয়কর ব্যবস্থা হবে অনেক সরল ও স্বচ্ছ।
২০২৬ সালের এপ্রিল থেকে ভারতের করদাতারা নতুন অভিজ্ঞতা পেতে চলেছেন—একটি আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও সহজ কর কাঠামো, যা দেশের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করবে।