ট্রাম্পের বাণিজ্য শুল্কের প্রভাবে ভারতীয় শেয়ার বাজারে অস্থিরতা

বিশ্ববাজারের উদ্বেগ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মুদ্রা প্রবাহ এবং সিকিউরিটিজ বাজারের মন্দাভাব: স্টক মার্কেটের গত সপ্তাহে এমনটাই ছিল প্রবণতা। স্টক মার্কেটের বাজার গত সপ্তাহে নিম্নমুখী প্রবণতা বজায়…

impact-of-trumps-trade-tariffs-on-indian-stock-market-volatility

বিশ্ববাজারের উদ্বেগ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মুদ্রা প্রবাহ এবং সিকিউরিটিজ বাজারের মন্দাভাব: স্টক মার্কেটের গত সপ্তাহে এমনটাই ছিল প্রবণতা। স্টক মার্কেটের বাজার গত সপ্তাহে নিম্নমুখী প্রবণতা বজায় রেখে আরও ৮ দিন ধরে কমেছে। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী সপ্তাহে বাজারের গতিপথ নির্ধারণ হবে বৈশ্বিক প্রবণতা এবং বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের (FPI) ট্রেডিং কার্যক্রমের উপর। গত সপ্তাহে ভারতের শেয়ার বাজারের দুটি প্রধান সূচক, সেনসেক্স এবং নিফটি, সঙ্কটপূর্ণ পরিস্থিতির মুখে পড়েছে এবং তারা নিম্নমুখী প্রবণতা বজায় রেখেছে।

বিশ্ববাজারের চাপ এবং বাজারে বিদেশী অর্থের প্রবাহের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের মনোভাব গত সপ্তাহে নেতিবাচক হয়ে উঠেছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিনটি মূল বিষয় শেয়ার বাজারের পরবর্তী পথে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে, যা হচ্ছে – বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতি এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের প্রবাহ।

   

বিশ্ববাজারের উদ্বেগের পাশাপাশি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠছে, যা ভারতীয় বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘প্রতিবন্ধকতার শুল্ক’ (Reciprocal Tariffs) ঘোষণার কারণে মার্কিন ও ভারতের বাণিজ্য সম্পর্কের উপর বড় চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এই শুল্কের সম্ভাবনা ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কারণ এটি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির সাথে ভারতের বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। এসব কারণে বাজারে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে, যার কারণে স্টক মার্কেটের পরিবেশ কিছুটা তীব্র হয়েছে।

এই অবস্থায়, বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, বাজারে অন্য যে কোনও বড় পরিবর্তন, তা নির্ভর করবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্য পরিস্থিতির উপর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের পরিবেশ এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের প্রবাহ এখন বাজারের পরবর্তী গতি এবং ইন্ডেক্সের দিক নির্ধারণ করবে।

তবে, বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, Q3 অর্থাৎ তৃতীয় ত্রৈমাসিকের কর্পোরেট লাভের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পরে এখন মূল মনোযোগ চলে এসেছে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবণতার দিকে। বিশেষজ্ঞরা আরো জানিয়েছেন, FII (বিদেশী বিনিয়োগকারীরা) প্রবাহ এবং মুদ্রার মূল্য গতিপথ তদারকি করা হবে এবং তাতে শেয়ার বাজারের প্রভাব থাকবে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের প্রবাহের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দামও বাজারের পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পারে, এবং এ কারণে পেট্রোল এবং ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। তেলের দাম বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি এবং ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি হতে পারে, এবং এর প্রভাব শেয়ার বাজারের উপর পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেলের দাম বেড়ে গেলে ভারতীয় মুদ্রার (রুপি) প্রতি একাধিক প্রভাব পড়তে পারে, যা শেয়ার বাজারের জন্য নেতিবাচক ফলাফল নিয়ে আসতে পারে।

বাজারের পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, স্টক মার্কেটে প্রবাহের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “আমরা যদি ফান্ডামেন্টাল গুণমান এবং এক্সপেন্সিভ ভ্যালুয়েশন নিয়ে সচেতন থাকি, তবে সঠিক নির্বাচিত শেয়ারগুলির মাধ্যমে লাভ করা সম্ভব,” বলেছেন পুণীত সিংহানিয়া, মাস্টার ট্রাস্ট গ্রুপের ডিরেক্টর।

এছাড়া, মার্কিন ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটির (FOMC) বৈঠকের নোটসও এই সপ্তাহে বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কারণ বৈদেশিক মুদ্রা এবং শেয়ার বাজারের জন্য এর প্রভাব থাকা সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এটি আমাদের বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের আর্থিক নীতির পরিবর্তন ভারতীয় বাজারে বিনিয়োগকারীদের মনোভাবকে প্রভাবিত করতে পারে।”

বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির পাশাপাশি, বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের প্রবাহ এবং মুদ্রার অস্থিরতা, শেয়ার বাজারের জন্য একটি নতুন পথে ইঙ্গিত দেবে। স্টক মার্কেটে বর্তমানে অনিশ্চয়তা এবং উদ্বেগের মাঝে, বৈশ্বিক পরিস্থতিতে কোনো বড় পরিবর্তন আসলে এটি বাজারের গতি নির্ধারণ করবে।

এই সমস্ত ভেরিয়েবলসের পরিপ্রেক্ষিতে, শেয়ার বাজারের জন্য একনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের প্রবাহ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবেশের পরিবর্তনগুলির দিকে নজর রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। আসন্ন সপ্তাহে বিশ্ববাজারে যেকোনো ধরনের পরিবর্তন শেয়ার বাজারের পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।