Impact of GST changes
কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) হারে বড় ধরনের সংস্কার করেছে। এর ফলে কর কাঠামোতে একদিকে যেমন কিছু খাতে শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে, অন্যদিকে বেশ কয়েকটি পণ্যে করের বোঝা বেড়েছে। তবে এই সংস্কারের প্রভাবে সরকারের রাজস্ব আয়ে নেট ঘাটতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই)।
জিটিআরআই-এর সর্বশেষ বিশ্লেষণ অনুযায়ী, নতুন হারের ফলে সরকারের ইন্টিগ্রেটেড জিএসটি (আইজিএসটি) আয়ে প্রায় ১০,৬৬৪ কোটি টাকা কমতে পারে। এই আঘাত আসবে মূলত আমদানি পর্যায়ে আরোপিত কর থেকে।
২০২৪-২৫-এ ভারতের মোট জিএসটি সংগ্রহ কত?
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আর্থিক বর্ষ ২০২৪-২৫-এ ভারতের মোট জিএসটি সংগ্রহ ছিল প্রায় ২২,০৮,৮৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে কেবলমাত্র আমদানিকৃত পণ্যের ওপর আইজিএসটি থেকে এসেছে ৫,৩৩,০০০ কোটি টাকা, যা মোট জিএসটি আয়ের প্রায় ২৪ শতাংশ। অর্থাৎ সরকারের এক-চতুর্থাংশ রাজস্ব নির্ভর করে আমদানি-নির্ভর কর সংগ্রহের ওপর।
জিটিআরআই বলেছে, যেহেতু আমদানিতে কর সরাসরি সীমান্তে আদায় হয়, তাই শুল্ক ও কাস্টমসের তথ্যই সবচেয়ে কার্যকর উপায়ে রাজস্বের উপর কর পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের মোট আমদানির পরিমাণ ছিল ৭২১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৮৮.৭৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বা প্রায় ১২.৩ শতাংশ আমদানি সরাসরি নতুন জিএসটি হারের আওতায় এসেছে।
এই সংশোধিত কাঠামোর মধ্যে: Impact of GST changes
৫৫.২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য-তে কর কমানো হয়েছে।
৩৩.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য-তে কর বাড়ানো হয়েছে।
কর হ্রাসের আওতায় আসা ৫৫.২ বিলিয়ন ডলারের আমদানির ওপর আইজিএসটি আগে ছিল প্রায় ৯২,২৮০ কোটি টাকা। নতুন হারের ফলে তা নেমে আসবে মাত্র ৪২,৯৫৬ কোটি টাকায়। অর্থাৎ কেবল এই খাতেই সরকারের প্রায় ৪৯,৩২৪ কোটি টাকা আয়ের ঘাটতি তৈরি হবে।
অন্যদিকে, কর বাড়ানো হয়েছে ৩৩.৫ বিলিয়ন ডলারের আমদানির ওপর। এর ফলে আগে যেখানে সরকার পেত ২১,৯২৩ কোটি টাকা, নতুন হারের ফলে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৬০,৫৯০ কোটি টাকা। এখানে সরকারের রাজস্ব বাড়ছে প্রায় ৩৮,৬৬০ কোটি টাকা।
উভয় দিকের হিসাব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে—একদিকে প্রায় ৪৯,৩২৪ কোটি টাকার ক্ষতি, অন্যদিকে ৩৮,৬৬০ কোটি টাকার লাভ। ফলে শেষ পর্যন্ত সরকারের হাতে থেকে যাচ্ছে ১০,৬৬৪ কোটি টাকার ঘাটতি।
দেশীয় বাজারে কী প্রভাব
জিটিআরআই বলছে, এই হিসাব কেবলমাত্র আমদানি পর্যায়ের। দেশীয় বাজারে কী প্রভাব পড়বে, তা নির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না, কারণ সরকার দেশীয় পণ্যভিত্তিক জিএসটি তথ্য প্রকাশ করে না। তবে যেহেতু মোট জিএসটি আয়ের এক-চতুর্থাংশই আসে আমদানি থেকে, তাই এই বিশ্লেষণকে বৃহত্তর অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি হিসেবেই ধরা যেতে পারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, কর হ্রাসের ফলে কিছু খাতে ভোক্তা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানরা স্বস্তি পাবে। বিশেষ করে যেখানে উৎপাদন বা খুচরো বাজার আমদানিনির্ভর, সেখানে দাম কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কর বাড়ানোর খাতগুলোতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যেতে পারে, যার প্রভাব সরাসরি ভোক্তার পকেটে পড়তে পারে।
সরকার অবশ্য বলছে, এই ধরনের সংস্কার দীর্ঘমেয়াদে কর কাঠামোকে সহজ করবে এবং সুষম রাজস্ব আদায়ে সহায়ক হবে। কিন্তু স্বল্পমেয়াদে যে আয়ের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে, তা সরকারের অর্থনৈতিক ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতের পণ্য আমদানি এতটাই বড় আকারের যে ক্ষুদ্র পরিবর্তনও রাজস্ব আয়ে ব্যাপক ওঠানামা ঘটাতে পারে। বিশেষত এখন, যখন কেন্দ্রীয় সরকার পরিকাঠামো, সামাজিক খাত এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে, তখন অতিরিক্ত রাজস্ব ঘাটতি আর্থিক চাপ তৈরি করতে পারে।
অন্যদিকে দেশীয় পণ্যভিত্তিক জিএসটি তথ্য প্রকাশ না হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ চিত্র বোঝা কঠিন। ফলে অর্থনীতির ভবিষ্যৎ প্রভাব নির্ভর করবে কেবল আমদানি-সংক্রান্ত নয়, দেশীয় চাহিদা, উৎপাদনশীলতা এবং বিনিয়োগের ওপরও।
জিটিআরআই-এর এই বিশ্লেষণ স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে জিএসটি হারে পরিবর্তনের ফলে সরকারকে স্বল্পমেয়াদে ১০,৬৬৪ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি মেনে নিতে হবে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এই সংস্কার বাজারের ভারসাম্য রক্ষা এবং সুষ্ঠু কর কাঠামো গঠনে ভূমিকা রাখবে কিনা, তা সময়ই বলবে।
Business: A new GTRI report warns that recent GST rate changes, which reduced taxes on some imports but raised them on others, could lead to a net revenue loss of ₹10,664 crore, impacting the government’s IGST collection.