আইসিআইসিআই প্রুডেনশিয়াল (ICICI Prudential ) লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে জিএসটি সংক্রান্ত প্রায় ৩.৬৭ কোটি টাকার দাবিকে বৈধ ঘোষণা করল সেন্ট্রাল গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (CGST) কমিশনার (আপিলস)। শুক্রবার কোম্পানির পক্ষ থেকে একটি নিয়ন্ত্রক দাখিলপত্রের মাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত ২০২৪ সালের ২ জুলাই, যখন সেন্ট্রাল গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স বিভাগ মুম্বাই থেকে একটি আদেশ জারি করে। এই আদেশে ২০১৭-২০১৮ অর্থবর্ষে জিএসটি চালু হওয়ার সময় সংস্থার দ্বারা স্থানান্তরিত আংশিক সার্ভিস ট্যাক্স ক্রেডিটকে অস্বীকার করা হয়। এর ফলস্বরূপ সংস্থার বিরুদ্ধে মোট ৩.৬৭ কোটি টাকার কর ও জরিমানা ধার্য করা হয়।
কোম্পানি প্রথমে এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে CGST ও সেন্ট্রাল এক্সসাইজ কমিশনার (আপিলস), মুম্বাই-এর কাছে। কিন্তু ২০২৫ সালের ১৭ এপ্রিল কমিশনার (আপিলস) ওই আদেশকে বহাল রাখেন এবং কর দাবি ও জরিমানা উভয়কেই বৈধ বলে ঘোষণা করেন।
জিএসটি ও জরিমানা মিলিয়ে মোট দাবি ৩.৬৭ কোটি টাকা
উল্লেখযোগ্যভাবে, আদেশে বলা হয়েছে যে, আইসিআইসিআই প্রুডেনশিয়ালের বিরুদ্ধে মোট ১.৮৩ কোটি টাকার জিএসটি দাবি করা হয়েছে এবং এই পরিমাণের সমপরিমাণ জরিমানা আরোপ করা হয়েছে। ফলে মোট আর্থিক দায় দাঁড়িয়েছে ₹৩.৬৭ কোটি।
কোম্পানির প্রতিক্রিয়া
আইসিআইসিআই প্রুডেনশিয়াল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি জানিয়েছে, “আমরা কমিশনার (আপিলস) কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ হাতে পেয়েছি। কোম্পানি এই আদেশের বিরুদ্ধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করবে।” এর মাধ্যমে সংস্থাটি বোঝাতে চেয়েছে যে তারা এই আদেশ মানতে নারাজ এবং এর বিরুদ্ধে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে বিচার চাইবে।
জিএসটি রূপান্তর ঘিরে বিতর্ক
২০১৭ সালের ১ জুলাই ভারতে জিএসটি (পণ্য ও পরিষেবা কর) চালু হয়। তার আগে কোম্পানিগুলি সার্ভিস ট্যাক্স বা এক্সসাইজ ডিউটি মতো বিভিন্ন পরোক্ষ করের আওতায় ছিল। জিএসটি চালুর সময় কোম্পানিগুলিকে তাদের পূর্ববর্তী কর ক্রেডিটগুলি নতুন কর ব্যবস্থায় রূপান্তর করার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে এই রূপান্তরের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম ও শর্তাবলি অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক ছিল।
সরকারি সংস্থার দাবি অনুযায়ী, আইসিআইসিআই প্রুডেনশিয়াল কিছু অংশে নিয়মাবলি সঠিকভাবে অনুসরণ না করে অতিরিক্ত সার্ভিস ট্যাক্স ক্রেডিট স্থানান্তর করেছিল, যা তাদের অনুমোদিত ছিল না। এই কারণেই তাদের বিরুদ্ধে এই আর্থিক দাবি তৈরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
ট্যাক্স বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের মামলাগুলি এখন ঘন ঘন দেখা যাচ্ছে কারণ জিএসটি রূপান্তরের সময় বহু কোম্পানি বিভিন্ন ধরনের পুরনো কর ক্রেডিট নতুন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। অনেক ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়ায় ভুলত্রুটি ঘটেছে বা দ্ব্যর্থতা রয়ে গেছে, যার কারণে সরকার ও কোম্পানির মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে।
একজন কর পরামর্শদাতা বলেন, “এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা কারণ এতে পরিষ্কার হচ্ছে সরকার এখন আরও কঠোর মনোভাব নিচ্ছে পুরনো কর ক্রেডিট যাচাইয়ের ক্ষেত্রে। অন্যান্য কোম্পানির জন্যও এটি একটি সতর্কবার্তা।”
আইসিআইসিআই প্রুডেনশিয়াল যদি এই আদেশের বিরুদ্ধে জাতীয় আপিল ট্রাইব্যুনাল বা উচ্চ আদালতে যায়, তাহলে এই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে আরও সময় লাগতে পারে। তবে কোম্পানির এই প্রতিক্রিয়া ইঙ্গিত দেয় যে তারা লড়াই চালিয়ে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত আইন অনুযায়ী বিচার চাবে।
এই মামলার চূড়ান্ত রায় কর প্রশাসন ও বেসরকারি সংস্থাগুলির জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে, বিশেষ করে যখন পুরনো কর ব্যবস্থার জটিলতা এবং নতুন ব্যবস্থার মধ্যে সংযুক্তি নিয়ে এত অনিশ্চয়তা রয়েছে।
এই ঘটনায় স্পষ্ট যে জিএসটি রূপান্তরকালীন সময়ে সার্ভিস ট্যাক্স ক্রেডিট স্থানান্তর নিয়ে বিভ্রান্তি এখনো বহু সংস্থার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আইসিআইসিআই প্রুডেনশিয়াল-এর বিরুদ্ধে এই দাবি ও তার বিরুদ্ধে লড়াই আগামী দিনে কর প্রশাসনের নীতি নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।