ভারতীয় বিমান বাহিনীর (IAF) প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিংহ এক জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন—দেশের প্রতিরক্ষা আত্মনির্ভরতাকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিতে বেসরকারি সেক্টরের সাথে অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতা বাড়াতে হবে। সম্প্রতি একটি প্রতিরক্ষা সম্মেলনে তিনি বলেছেন, “আমাদের আমদানির উপর নির্ভরতা কমাতে এবং স্বদেশী উৎপাদন বাড়াতে বেসরকারি শিল্পের ভূমিকা অপরিহার্য। এটি শুধু প্রযুক্তি নয়, একটা জাতীয় দায়িত্ব।” এই বক্তব্য আত্মনির্ভর ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে নতুন গতি আনবে, যেখানে যুদ্ধবিমান, ড্রোন, মিসাইল সিস্টেম এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামের উৎপাদন দেশের মধ্যেই হবে। এসিএম সিংহের এই আহ্বান ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পকে বিশ্বমানের করে তুলতে একটা রোডম্যাপ হিসেবে কাজ করবে।
এসিএম সিংহের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট—ভারতকে প্রতিরক্ষায় সম্পূর্ণ স্বনির্ভর করতে হলে সরকারি সংস্থা যেমন হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (এইচএএল) এবং ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)-এর পাশাপাশি টাটা, রিলায়েন্স, মাহিন্দ্রা, অ্যাডানি এবং অন্যান্য বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে সমানভাবে জড়িত করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেছেন, “বেসরকারি সেক্টরের উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের শক্তি আমাদের প্রতিরক্ষা উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করবে।” এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে তেজস এমকেআর২, এএমসিএ (অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট), স্বদেশী ড্রোন এবং মিসাইল সিস্টেমের উৎপাদন বাড়ানো যাবে। বর্তমানে ভারতের প্রতিরক্ষা আমদানির ৬০-৭০ শতাংশ বিদেশ থেকে আসে, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটা দুর্বলতা। এসিএম সিংহ চান, ২০৩৫ নাগাদ এই নির্ভরতা শূন্যের কাছাকাছি নামিয়ে আনতে।
এই আহ্বানের পটভূমিতে ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে বেসরকারি সেক্টরের অবদান ইতিমধ্যে বাড়ছে। টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস সি-২৯৫ বিমান তৈরি করছে, অ্যাডানি ডিফেন্স ড্রোন এবং মিসাইল উৎপাদনে জড়িত, আর রিলায়েন্স এয়ারক্রাফট কম্পোনেন্ট তৈরি করছে। কিন্তু এসিএম সিংহ চান আরও গতি। তিনি বলেছেন, “পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে কাজ করলে আমরা দ্রুত ফল পাব।” এর ফলে শুধু উৎপাদন বাড়বে না, লক্ষ লক্ষ চাকরির সৃষ্টি হবে এবং যুবকদের জন্য প্রযুক্তিগত দক্ষতা বিকাশের সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়া, বেসরকারি কোম্পানিগুলোর আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানিকে বাড়াতে সাহায্য করবে।
এই উদ্যোগের সাথে সরকারের নীতিও মিলে যাচ্ছে। আত্মনির্ভর ভারতের অধীনে প্রতিরক্ষা উৎপাদন কর্পাস (ডিপিসি) গঠিত হয়েছে, এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। এসিএম সিংহের আহ্বান এই প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করবে। তিনি উল্লেখ করেছেন, “আমাদের যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন, রাডার, অস্ত্র সিস্টেম—সবকিছু দেশে তৈরি হতে হবে।” এটি চীন এবং পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর সামরিক শক্তির মুখোমুখি ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
#IAF Chief ACM Singh has urged speeding up India’s defence self-sustainability through private sector involvement & partnerships. pic.twitter.com/v7Ba1uulxO
— News IADN (@NewsIADN) November 4, 2025
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবরে উৎসাহ ছড়িয়ে পড়েছে। #AtmanirbharDefence এবং #IAFChief ট্যাগ ট্রেন্ড করছে, যেখানে লোকেরা লিখছেন, “এসিএম সিংহের দৃষ্টিভঙ্গি ভারতকে প্রতিরক্ষায় সুপারপাওয়ার করবে!” এই আহ্বান শুধু আইএএফ-এর নয়, পুরো প্রতিরক্ষা খাতের জন্য একটা জাগরণ। বেসরকারি সেক্টরের সাথে হাত মিলিয়ে ভারত এখন বিশ্বের শীর্ষ প্রতিরক্ষা উৎপাদক দেশগুলোর সারিতে দাঁড়াতে প্রস্তুত। ভারত মাতা কি জয় হো—এই জয় আকাশে এবং ভূমিতে নতুন ইতিহাস গড়বে!


