ভারতের ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল অর্থনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে অনলাইন প্রতারণা ও জালিয়াতির ঘটনা। উৎসবের মরশুমে এই প্রবণতা আরও তীব্র আকার ধারণ করে। এমন পরিস্থিতিতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে প্রতিষ্ঠিত Indian Cybercrime Coordination Centre (I4C) এবং ই-কমার্স সংস্থা Amazon India যৌথভাবে শুরু করল একটি নতুন সর্বভারতীয় প্রচারাভিযান— #ScamSmartIndia। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো দেশের সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে প্রতারণা প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা এবং নিরাপদ অনলাইন কেনাকাটাকে উৎসাহিত করা।
উদ্যোগের লক্ষ্য ও প্রেক্ষাপট:
এক যৌথ বিবৃতিতে আই৪সি এবং অ্যামাজন জানিয়েছে, এই সহযোগিতার মাধ্যমে প্রতারণা বিরোধী সচেতনতা মূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হবে। ডিজিটাল প্রতারণার জটিল কৌশলগুলোকে সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করা হবে যাতে প্রথমবারের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বা প্রবীণ নাগরিকরাও তা বুঝতে পারেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে দেশের মোট প্রতারণার প্রায় অর্ধেকের বেশি ঘটছে অনলাইন মাধ্যমে। সম্প্রতি প্রকাশিত ম্যাকাফির এক রিপোর্টে সতর্ক করা হয়েছে, উৎসবের মরশুমে অনলাইন শপিং বেড়ে যাওয়ার ফলে প্রতারণার ঝুঁকি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। এই প্রেক্ষাপটে আই৪সি-অ্যামাজনের যৌথ পদক্ষেপ ভোক্তা সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কী কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে?
প্রচারণার অংশ হিসেবে আগামী কয়েক মাস ধরে জাতীয় ও আঞ্চলিক স্তরে একাধিক কর্মসূচি পরিচালনা করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে—
- সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট: জটিল প্রতারণার ঘটনাগুলোকে সহজ ভাষায় ও ভিজ্যুয়ালের মাধ্যমে বোঝানো হবে।
- ডিজিটাল বিজ্ঞাপন: কোটি কোটি পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে প্রতারণা এড়ানোর সহজ পরামর্শ।
- অ্যামাজন ডেলিভারি প্যাকেজে ফ্লায়ার: প্রতিটি প্যাকেটের সঙ্গে দেওয়া হবে শিক্ষামূলক বার্তা, যা হবে এক ব্যক্তিগত নিরাপত্তা স্মারক।
- ‘Scam-Free September’ উদ্যোগ: প্রতি সপ্তাহে বহু-ভাষিক টিপস প্রকাশ করা হবে যাতে উৎসবকালে নিরাপদ অনলাইন কেনাকাটা করা যায়।
- জাতীয় হ্যাকাথন: এআই-ভিত্তিক প্রতারণা শনাক্তকরণ ও প্রতিরোধ সমাধান তৈরি করার জন্য দেশজুড়ে প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হবে।
কর্মকর্তাদের বক্তব্য: আই৪সি-র ডিরেক্টর নিশান্ত কুমার বলেন,
“উৎসবের মরশুমে কেনাকাটা ভারতীয় পরিবারের একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এই সময়ই প্রতারকরা সক্রিয় হয়ে ওঠে, বিশেষত নতুন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এবং প্রবীণ নাগরিকদের টার্গেট করে। অ্যামাজনের সঙ্গে আমাদের এই অংশীদারিত্ব ভোক্তাদের সচেতন করতে সাহায্য করবে যাতে তারা প্রতারণা শনাক্ত করতে পারেন এবং ফাঁদে পা না দেন।”
অন্যদিকে, অ্যামাজন ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট (লিগ্যাল) রাকেশ বকশি বলেন, “অ্যামাজনে গ্রাহকদের আস্থা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। প্রতারকরা যখন পরিচিত ব্র্যান্ডের নাম ব্যবহার করে ভোক্তাদের প্রলুব্ধ করে, তখন তা কেবল ব্যবসার ক্ষতি করে না, বরং দেশের পুরো ডিজিটাল অর্থনীতির উপর আঘাত হানে। তাই আই৪সি-র সঙ্গে আমরা এমন পদক্ষেপ নিতে চাই যা ভোক্তাদের সচেতন করবে, প্রতারণা এড়াতে এবং রিপোর্ট করতে সাহায্য করবে।”
ডিজিটাল ইন্ডিয়ার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ:
এই যৌথ উদ্যোগ শুধু প্রতারণা রোধ করাই নয়, বরং একটি নিরাপদ ডিজিটাল ভারতের ভিত্তি গড়ে তোলার দিকেও বড় পদক্ষেপ। বর্তমানে অনলাইন ব্যবসার বাজার যতই বাড়ছে, ভোক্তাদের আস্থার উপর তার টিকে থাকা নির্ভর করছে। তাই সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এই ধরনের সহযোগিতা দেশের ডিজিটাল অর্থনীতিকে আরও সুরক্ষিত ও টেকসই করে তুলবে।
অ্যামাজন জানিয়েছে, এর আগেও তারা বিভিন্ন শিল্প সংস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্ব করে দেশজুড়ে ওয়ার্কশপ আয়োজন করেছে যেখানে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ অনলাইন শপিং সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এবার আই৪সি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে তারা সেই সচেতনতা প্রচারকে আরও ব্যাপক ও কার্যকর করতে চলেছে।
ভারত ডিজিটাল ইকোনমির দ্রুত বিকাশের পথে এগোচ্ছে। কিন্তু তার সঙ্গে সমান্তরালে বাড়ছে প্রতারণার নতুন নতুন ফাঁদ। তাই সরকার, শিল্প সংস্থা ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলির সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একমাত্র ভরসা। #ScamSmartIndia উদ্যোগ সেই দিকেই এক দৃঢ় পদক্ষেপ, যা প্রতিটি নাগরিককে নিরাপদ ডিজিটাল ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।