সিবিল স্কোর ছাড়াই ৫০,০০০ টাকার ঋণ কীভাবে পাবেন?

ভারতে আর্থিক জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে অনেক সময়ই তাৎক্ষণিক ঋণের প্রয়োজন হয়। কিন্তু সিবিল স্কোর না থাকলে বা কম সিবিল স্কোর থাকলে ঋণ পাওয়া কঠিন…

Does Prepaying Loan Boost or Hurt Your Credit Score in India

ভারতে আর্থিক জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে অনেক সময়ই তাৎক্ষণিক ঋণের প্রয়োজন হয়। কিন্তু সিবিল স্কোর না থাকলে বা কম সিবিল স্কোর থাকলে ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সিবিল স্কোর হলো একটি তিন-অঙ্কের সংখ্যা (৩০০-৯০০), যা ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো ইন্ডিয়া লিমিটেড (CIBIL) দ্বারা নির্ধারিত হয় এবং এটি আপনার ঋণ পরিশোধের ইতিহাস ও আর্থিক বিশ্বাসযোগ্যতার একটি পরিমাপক। তবে, সুসংবাদ হলো এখন ভারতে এমন অনেক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান এবং ফিনটেক প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যারা সিবিল স্কোর ছাড়াই (Loan without CIBIL) ৫০,০০০ টাকার তাৎক্ষণিক ব্যক্তিগত ঋণ প্রদান করে। এই প্রতিবেদনে আমরা জানব কীভাবে আপনি সিবিল স্কোর ছাড়াই ৫০,০০০ টাকার ঋণ পেতে পারেন, এর জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলী, নথিপত্র এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস।

সিবিল স্কোর ছাড়া ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা
সিবিল স্কোর না থাকা বা কম স্কোর থাকা মানে আপনার ক্রেডিট ইতিহাস নেই বা অতীতে ঋণ পরিশোধে কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে, বর্তমানে অনেক নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি (NBFC) এবং ফিনটেক প্ল্যাটফর্ম সিবিল স্কোরের পরিবর্তে বিকল্প ক্রেডিট মূল্যায়ন পদ্ধতি ব্যবহার করে। এই প্ল্যাটফর্মগুলি আপনার আয়ের স্থিতিশীলতা, চাকরির ধারাবাহিকতা, ব্যাঙ্ক লেনদেন, এমনকি ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টের মতো বিষয়গুলি বিবেচনা করে ঋণ প্রদান করে। সাধারণত, এই ধরনের ঋণগুলি ছোট পরিমাণে এবং স্বল্প মেয়াদের জন্য দেওয়া হয়, যেমন ৫০,০০০ টাকার ঋণ, যা জরুরি আর্থিক চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে।

   

সিবিল স্কোর ছাড়া ঋণ পাওয়ার উপায়
১. গ্যারান্টারের সাহায্যে আবেদন করুন: যদি আপনার সিবিল স্কোর না থাকে বা কম থাকে, তবে একজন গ্যারান্টারের সঙ্গে ঋণের জন্য আবেদন করলে অনুমোদনের সম্ভাবনা বাড়ে। গ্যারান্টার হতে পারেন আপনার পরিবারের কোনো সদস্য, যেমন বাবা-মা, ভাই-বোন বা স্ত্রী, যাঁর সিবিল স্কোর ভালো। তাঁদের ক্রেডিট ইতিহাস ঋণদাতার ঝুঁকি কমায়। তবে, মনে রাখবেন, আপনি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে গ্যারান্টারের ক্রেডিট স্কোরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

২. কম পরিমাণের ঋণের জন্য আবেদন: সিবিল স্কোর ছাড়া ঋণ পাওয়ার জন্য কম পরিমাণের ঋণ, যেমন ৫০,০০০ টাকা, আবেদন করা ভালো। ঋণদাতারা সাধারণত ছোট ঋণের ক্ষেত্রে কম ঝুঁকি নিয়ে থাকে, ফলে অনুমোদনের সম্ভাবনা বেশি।

৩. আয়ের প্রমাণ জমা দিন: স্থিতিশীল আয়ের প্রমাণ ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। বেতনভোগী ব্যক্তিদের জন্য শেষ তিন মাসের বেতন স্লিপ বা ছয় মাসের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট এবং স্ব-নিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য ব্যবসায়িক আর্থিক নথি বা আয়কর রিটার্ন (ITR) জমা দিতে হবে।

৪. জামানত বা সুরক্ষিত ঋণ: সিবিল স্কোর ছাড়া ঋণ পাওয়ার জন্য সম্পত্তি, স্বর্ণ বা ফিক্সড ডিপোজিটের মতো জামানত প্রদান করা যেতে পারে। এই ধরনের সুরক্ষিত ঋণে ঋণদাতার ঝুঁকি কম থাকে, তাই তারা সহজেই ঋণ অনুমোদন করে। তবে, ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে জামানত বাজেয়াপ্ত হতে পারে।

৫. ফিনটেক এবং ডিজিটাল ঋণ অ্যাপ: ভারতে বেশ কিছু ফিনটেক প্ল্যাটফর্ম, যেমন NoBroker InstaCash, MoneyView, Fibe (পূর্বে EarlySalary), PaySense, এবং Zype, সিবিল স্কোর ছাড়াই ঋণ প্রদান করে। এই অ্যাপগুলি ডিজিটাল পদ্ধতিতে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এবং ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঋণ প্রদান করে।

Advertisements

যোগ্যতার শর্তাবলী
সিবিল স্কোর ছাড়া ৫০,০০০ টাকার ঋণ পাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত শর্তাবলী পূরণ করতে হবে:

  • বয়স: আবেদনকারীর বয়স ২১ থেকে ৫৮ বছরের মধ্যে হতে হবে।
  • নাগরিকত্ব: ভারতীয় নাগরিক হতে হবে এবং বৈধ প্যান ও আধার কার্ড থাকতে হবে।
  • আয়: ন্যূনতম মাসিক আয় ১৫,০০০ টাকা (বেতনভোগী বা স্ব-নিযুক্ত)।
  • চাকরি: স্থিতিশীল চাকরি বা ব্যবসায়ের প্রমাণ থাকতে হবে।
    প্রয়োজনীয় নথিপত্র
  • পরিচয় প্রমাণ: আধার কার্ড, প্যান কার্ড, পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স।
  • ঠিকানার প্রমাণ: ইউটিলিটি বিল, ভাড়ার চুক্তি বা পাসপোর্ট।
  • আয়ের প্রমাণ: শেষ তিন মাসের বেতন স্লিপ, ছয় মাসের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট বা ITR।
  • ছবি: পাসপোর্ট সাইজের ছবি।

আবেদন প্রক্রিয়া
১. ঋণদাতা নির্বাচন করুন: NoBroker InstaCash, MoneyView, Fibe, বা Tata Capital-এর মতো ফিনটেক প্ল্যাটফর্ম বা NBFC নির্বাচন করুন যারা সিবিল স্কোর ছাড়া ঋণ প্রদান করে।
২. অ্যাপ ডাউনলোড করুন: নির্বাচিত ঋণদাতার অ্যাপ ডাউনলোড করুন বা তাদের ওয়েবসাইটে যান।
৩. নিবন্ধন: মোবাইল নম্বর এবং OTP দিয়ে নিবন্ধন করুন।
৪. KYC সম্পন্ন করুন: প্যান ও আধার নম্বর প্রদান করে ডিজিটাল KYC সম্পন্ন করুন।
৫. ঋণের পরিমাণ ও মেয়াদ নির্বাচন: ৫০,০০০ টাকার ঋণ এবং আপনার সুবিধাজনক EMI বেছে নিন।
৬. নথি আপলোড: প্রয়োজনীয় নথি ডিজিটালভাবে আপলোড করুন।
৭. অনুমোদন ও বিতরণ: আবেদন যাচাইয়ের পর ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঋণের টাকা আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হবে।

সিবিল স্কোর ছাড়া ঋণের সুবিধা ও অসুবিধা
সুবিধা:
দ্রুত অনুমোদন এবং বিতরণ, সাধারণত ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে।
ন্যূনতম নথিপত্র এবং ডিজিটাল প্রক্রিয়া।
জরুরি আর্থিক চাহিদা, যেমন চিকিৎসা খরচ বা বাড়ির মেরামত, মেটানোর জন্য উপযুক্ত।

অসুবিধা:
সিবিল স্কোর ছাড়া ঋণে সুদের হার বেশি হতে পারে (১৬-৩৬% প্রতি বছর)।
মেয়াদ সাধারণত স্বল্প (৩-১২ মাস)।
প্রক্রিয়াকরণ ফি এবং অন্যান্য চার্জ বেশি হতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ টিপস
১. বিশ্বস্ত ঋণদাতা নির্বাচন করুন: শুধুমাত্র রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) দ্বারা নিবন্ধিত NBFC বা ফিনটেক প্ল্যাটফর্ম বেছে নিন। স্ক্যাম এড়াতে WhatsApp বা অজানা লিঙ্কের মাধ্যমে আবেদন করবেন না।
২. শর্তাবলী যাচাই করুন: সুদের হার, প্রক্রিয়াকরণ ফি, এবং পেনাল্টি চার্জ ভালোভাবে পড়ুন।
৩. EMI পরিকল্পনা করুন: আপনার মাসিক আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে EMI বেছে নিন যাতে পরিশোধে সমস্যা না হয়।
৪. ক্রেডিট স্কোর উন্নত করুন: এই ঋণ সময়মতো পরিশোধ করলে ভবিষ্যতে আপনার সিবিল স্কোর তৈরি হবে, যা পরবর্তী ঋণের জন্য সুবিধাজনক।

সিবিল স্কোর ছাড়া ৫০,০০০ টাকার তাৎক্ষণিক ব্যক্তিগত ঋণ পাওয়া এখন ভারতে সম্ভব, ধন্যবাদ ফিনটেক প্ল্যাটফর্ম এবং NBFC-এর নমনীয় নীতির। গ্যারান্টার, জামানত, বা আয়ের প্রমাণ ব্যবহার করে এবং সঠিক ঋণদাতা নির্বাচন করে আপনি সহজেই জরুরি আর্থিক চাহিদা মেটাতে পারেন। তবে, উচ্চ সুদের হার এবং স্বল্প মেয়াদের কথা মাথায় রেখে সতর্কতার সঙ্গে আবেদন করা উচিত। সময়মতো ঋণ পরিশোধ করলে আপনার ক্রেডিট ইতিহাস উন্নত হবে, যা ভবিষ্যতে আরও ভালো ঋণের সুযোগ তৈরি করবে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News