How to reduce EMI: ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI) পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ২৫ বেসিস পয়েন্ট হারে রেপো রেট কমিয়েছে। এর ফলে লক্ষ লক্ষ ভারতীয় ঋণগ্রহীতা স্বস্তি পেয়েছেন। কারণ, রেপো রেট কমলে সাধারণত ঋণের সুদের হারও কমে যায় এবং মাসিক EMI (ইকুইটেড মান্থলি ইনস্টলমেন্ট) লাঘব হয়। তবে বাস্তব চিত্রটা একটু আলাদা।
রেপো রেট কমলেও EMI কেন কমে না?
অনেক ঋণগ্রহীতা মনে করেন রেপো রেট কমলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাঁদের EMI কমে যাবে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা হয় না। RBI-এর রেপো রেট কমানোর ঘোষণার পরও মার্চ ও এপ্রিল মাসে অনেক ঋণগ্রহীতার EMI অপরিবর্তিত থেকেছে। আবার এপ্রিলে RBI দ্বিতীয়বারের মতো রেট কমিয়েছে, কিন্তু EMI হ্রাসের সুবিধা সবাই পাচ্ছেন না।
MinEmi-এর CFO সিদ্ধার্থ জৈনের মতে, “ভারতের ঋণ ব্যবস্থায় একটি অজানা বাস্তবতা হলো, ব্যাংকগুলো সচেতন গ্রাহক না হলে সুদের হার হ্রাসের সুবিধা নিজেরাই দেয় না।”
দুই ঋণগ্রহীতার গল্প: রাহুল বনাম শ্লোক
ধরা যাক রাহুল ও শ্লোক—দুজনই ২ কোটি টাকার হোম লোন নিয়েছেন। RBI রেট কমানোর পর তারা বছরে প্রায় ১.২ লক্ষ টাকা সাশ্রয়ের আশা করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে শুধুমাত্র রাহুল এই সুবিধা পাবেন।
রাহুলের ঋণটি RLLR (Repo Linked Lending Rate)-এর সঙ্গে যুক্ত। RBI নির্দেশ দিয়েছে RLLR যুক্ত ঋণে রেপো রেট পরিবর্তনের প্রভাব তিন মাসের মধ্যে পড়বে। ফলে জুন ২০২৫ থেকে রাহুল কম EMI দেবেন।
অন্যদিকে, শ্লোকের ঋণ MCLR (Marginal Cost of Funds Based Lending Rate)-এর সঙ্গে যুক্ত, যা অক্টোবর ২০১৯-এর আগে চালু ছিল। তাঁর EMI কমবে না যদি না তিনি নিজে ব্যাংকে গিয়ে RLLR-এ স্থানান্তরের জন্য আবেদন করেন এবং প্রয়োজনীয় ফি প্রদান করেন।
ব্যাংকের ভূমিকা ও গ্রাহকের দায়িত্ব
সিদ্ধার্থ জৈন বলেন, “ব্যাংকগুলো বাধ্য নয় গ্রাহকদের proactively জানাতে। গ্রাহক যদি নিজের ঋণের ধরন না বোঝেন বা সময়মতো পদক্ষেপ না নেন, তাহলে রেট কমলেও তাঁরা বেশি EMI দিতে থাকেন।”
তিনি আরও বলেন, “নতুন ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সুদের হারে ‘স্প্রেড’ বা মার্জিন বাড়িয়ে রাখতে পারে। এর ফলে রেপো রেট কমলেও নতুন গ্রাহকরা পুরোনো বা আরও বেশি হারে ঋণ নিয়ে ফেলেন।”
কোভিড সময়ের পুনরাবৃত্তি
২০২০-২১ সালে কোভিডের সময় RBI রেপো রেট ঐতিহাসিকভাবে কমিয়েছিল। তবুও বহু গ্রাহক EMI কমাতে পারেননি, কারণ তারা নিজে থেকে আবেদন করেননি কিংবা জানতেন না তাঁরা যোগ্য কিনা।
এই পরিস্থিতি এখনো বিদ্যমান। অধিকাংশ ঋণগ্রহীতা জানেন না তাঁদের ঋণ RLLR না MCLR-এর সঙ্গে যুক্ত, রিসেট পিরিয়ড কখন, কিংবা স্প্রেড কত রাখা হয়েছে।
সাশ্রয়ের উপায় কী?
রেপো রেট কমার সুবিধা পেতে হলে প্রথমেই নিজের ঋণের ধরন বুঝতে হবে। যদি RLLR যুক্ত ঋণ না হয়, তাহলে ব্যাংকে গিয়ে পরিবর্তনের জন্য আবেদন করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, ব্যাংকের স্প্রেড বা মার্জিন যাচাই করা জরুরি। সময়ের সাথে সাথে ব্যাংক এই স্প্রেড বাড়াতে পারে, ফলে পুরোনো ভাল ডিল এখন আর সেরা নাও থাকতে পারে। যদি আপনার সিবিল স্কোর ভালো থাকে ও সময়মতো EMI পরিশোধ করে থাকেন, তাহলে আপনি সহজেই সুদের হার কমাতে পারেন—বা অন্য ব্যাঙ্কে ব্যালেন্স ট্রান্সফার করে কম সুদে ঋণ নিতে পারেন।
RBI-এর নীতিমালায় নজর রাখা প্রয়োজন। রেপো রেট কমার পর দ্রুত পদক্ষেপ নিলে EMI কমিয়ে সঞ্চয় বাড়ানো সম্ভব।
ডিজিটাল যুগে সুবিধা
আগে ব্যাংকে বারবার ফোন করে বা শাখায় গিয়ে তথ্য জানার চেষ্টা করতে হতো। এখন প্রযুক্তির সাহায্যে EMI ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ হয়েছে। বিভিন্ন প্রযুক্তিনির্ভর প্ল্যাটফর্মে রিয়েল টাইম রেট অ্যালার্ট, পার্সোনালাইজড EMI ক্যালকুলেশন, ব্যালেন্স ট্রান্সফার অপশন ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে।
এইসব টুলস ব্যবহার করে ঋণগ্রহীতারা নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কোথায় গেলে সাশ্রয় হবে। ব্যাংকের ওপর একচেটিয়া নির্ভরতা এখন আর দরকার নেই।
RBI-এর রেট কাট আপনার EMI কমাতে সাহায্য করতে পারে—কিন্তু দায়িত্ব আপনার। ব্যাংক নিজে থেকে উদ্যোগ নেবে না। সচেতনতা এবং সঠিক ডিজিটাল টুলস ব্যবহার করলেই আপনি EMI কমাতে পারবেন, অতিরিক্ত খরচ এড়াতে পারবেন এবং সুদের হার কমার সময়ে সুবিধা পেতে পারবেন।