Home Loan Tax Benefit: নতুন কর ব্যবস্থা ভারতের করদাতাদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এই ব্যবস্থায় ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর কোনো কর দিতে হয় না। বেতনভোগী ব্যক্তিদের জন্য, ৭৫,০০০ টাকার স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন সহ এই সীমা বেড়ে দাঁড়ায় ১২.৭৫ লক্ষ টাকা। তবে, অনেকেই অভিযোগ করেন যে পুরনো কর ব্যবস্থার কর-সাশ্রয়ী সুবিধাগুলো নতুন ব্যবস্থায় নেই। এটি আংশিকভাবে সত্য। কিন্তু নতুন কর ব্যবস্থাও কিছু আকর্ষণীয় সুবিধা প্রদান করে, যেমন ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেমে (এনপিএস) নিয়োগকর্তার অবদানের উপর কর সুবিধা। এছাড়া, গৃহঋণের সুদের উপর ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর সুবিধাও রয়েছে। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন! তবে এর সঙ্গে কিছু শর্ত জড়িত। এই নিয়মের সাহায্যে আপনি কীভাবে ১৪,৭৫,০০০ টাকার আয়ে কোনো কর না দিয়ে বাঁচতে পারেন, তা জানতে এই প্রতিবেদনটি পড়ুন।
নতুন কর ব্যবস্থায় গৃহঋণের সুদের সুবিধা
গৃহঋণের কর সুবিধা বলতে আমরা সাধারণত পুরনো কর ব্যবস্থার কথা ভাবি, যেখানে মূলধন এবং সুদ উভয়ের উপর সুবিধা পাওয়া যায়। পুরনো ব্যবস্থায়, স্বামী-স্ত্রীর যৌথ গৃহঋণে প্রথম বাড়ির জন্য ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুবিধা পাওয়া যেত। তবে, নতুন কর ব্যবস্থায়ও গৃহঋণের সুদের উপর সুবিধা রয়েছে, যা আপনার ১৪.৭৫ লক্ষ টাকার বেতন আয়কে সম্পূর্ণ করমুক্ত করতে পারে। এই সুবিধা কেবল ভাড়া দেওয়া (লেট-আউট) বাড়ির গৃহঋণের সুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যদি আপনি নিজে সেই বাড়িতে থাকেন (স্ব-অধিকৃত), তাহলে এই সুবিধা পাবেন না।
নতুন কর ব্যবস্থায়, ভাড়ার আয়ের বিপরীতে গৃহঋণের সুদের নিট ক্ষতি সমন্বয় করা যায়। এই নিয়মে সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর সুবিধা পাওয়া যায়। এই সুবিধা আপনার করযোগ্য আয় কমিয়ে আপনাকে করমুক্ত রাখতে সাহায্য করতে পারে।
গৃহঋণের সুদে কর সুবিধার হিসাব
আসুন, তিনটি পরিস্থিতির মাধ্যমে এই সুবিধার হিসাব বুঝে নিই:
পরিস্থিতি ১:
• গৃহঋণের সুদ প্রদান: ৪,০০,০০০ টাকা
• ভাড়ার আয়: ২,০০,০০০ টাকা
• নিট ক্ষতি = গৃহঋণের সুদ – ভাড়ার আয়
= ৪,০০,০০০ – ২,০০,০০০ = ২,০০,০০০ টাকা
নতুন কর ব্যবস্থায়, আপনি এই ২ লক্ষ টাকার ক্ষতি আপনার অন্য আয়ের (যেমন বেতন) বিপরীতে সমন্বয় করতে পারেন। এটি আপনার করযোগ্য আয় ২ লক্ষ টাকা কমিয়ে দেবে।
পরিস্থিতি ২:
• গৃহঋণের সুদ প্রদান: ৭,০০,০০০ টাকা
• ভাড়ার আয়: ২,০০,০০০ টাকা
• নিট ক্ষতি = ৭,০০,০০০ – ২,০০,০০০ = ৫,০০,০০০ টাকা
এই ক্ষেত্রে, ক্ষতি ৫ লক্ষ টাকা হলেও, নতুন কর ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সমন্বয় করা যায়। অতিরিক্ত ৩ লক্ষ টাকার ক্ষতি অন্য আয়ের বিপরীতে সমন্বয় করা যাবে না।
পরিস্থিতি ৩:
• গৃহঋণের সুদ প্রদান: ৩,০০,০০০ টাকা
• ভাড়ার আয়: ৪,০০,০০০ টাকা
• নিট ক্ষতি = ৩,০০,০০০ – ৪,০ৰ০,০০০ = -১,০০,০০০ টাকা (অর্থাৎ লাভ)
এই ক্ষেত্রে কোনো ক্ষতি না থাকায় কর সুবিধা পাওয়া যাবে না।
কীভাবে ১৪,৭৫,০০০ টাকার আয়ে শূন্য কর দেবেন?
ধরুন, আপনার বেতন থেকে আয় ১৪,৭৫,০০০ টাকা। আপনার ভাড়া দেওয়া বাড়ির গৃহঋণের সুদের বিপরীতে ২ লক্ষ টাকার নিট ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি সমন্বয় করলে আপনার করযোগ্য আয় হবে:
১৪,৭৫,০০০ – ২,০০,০০০ = ১২,৭৫,০০০ টাকা।
এরপর, বেতনভোগী ব্যক্তি হিসেবে ৭৫,০০০ টাকার স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন প্রয়োগ করলে:
১২,৭৫,০০০ – ৭৫,০০০ = ১২,০০,০০০ টাকা।
নতুন কর ব্যবস্থায় ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত। ফলে, আপনাকে কোনো আয়কর দিতে হবে না।
নতুন কর ব্যবস্থায় গৃহঋণের কর সুবিধা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
১. স্ব-অধিকৃত বাড়ির ক্ষেত্রে সুবিধা নেই: যদি আপনি গৃহঋণের বাড়িতে নিজে থাকেন, তাহলে সুদের উপর কোনো কর সুবিধা পাবেন না।
২. ভাড়া দেওয়া বাড়ির ক্ষেত্রে সুবিধা: বাড়িটি ভাড়া দেওয়া হলে, সুদের পরিমাণ ভাড়ার আয়ের বিপরীতে সমন্বয় করা যায়।
৩. সর্বোচ্চ সীমা ২ লক্ষ টাকা: যদি গৃহঋণের সুদের ক্ষতি ২ লক্ষ টাকার বেশি হয়, তবুও সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সমন্বয় করা যাবে। অতিরিক্ত ক্ষতি অন্য আয়ের বিপরীতে সমন্বয় করা যাবে না।
৪. বার্ষিক সীমা: সরকার এই সুবিধার জন্য একটি বার্ষিক সীমা নির্ধারণ করেছে, যা এক অর্থবছরে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
কেন এই সুবিধা গুরুত্বপূর্ণ?
নতুন কর ব্যবস্থা করদাতাদের জন্য সরল এবং সুবিধাজনক হলেও, পুরনো ব্যবস্থার তুলনায় এটি কম কর-সাশ্রয়ী সুবিধা প্রদান করে। তবে, গৃহঋণের সুদের উপর এই সুবিধা বেতনভোগী ব্যক্তিদের জন্য একটি বড় সুযোগ। ভারতে গৃহঋণ গ্রহণকারীদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান, এবং অনেকেই তাদের দ্বিতীয় বাড়ি ভাড়া দিয়ে অতিরিক্ত আয় করেন। এই নিয়ম তাদের জন্য একটি আর্থিক সুবিধা হিসেবে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, মুম্বই বা দিল্লির মতো শহরে, যেখানে গৃহঋণের সুদের পরিমাণ প্রায়ই ৪-৭ লক্ষ টাকার মধ্যে হয়, এই সুবিধা করদাতাদের বড় অঙ্কের কর বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে।
আর্থিক পরিকল্পনার জন্য পরামর্শ
গৃহঋণের সুদের এই কর সুবিধা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে, নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখুন:
• আয়ের হিসাব রাখুন: আপনার বেতন এবং ভাড়ার আয়ের সঠিক হিসাব রাখুন।
• নথিপত্র সংরক্ষণ: গৃহঋণের সুদ প্রদান এবং ভাড়ার আয়ের প্রমাণপত্র সংরক্ষণ করুন।
• ট্যাক্স কনসালট্যান্টের পরামর্শ: কর সুবিধা সঠিকভাবে গ্রহণ করতে একজন ট্যাক্স কনসালট্যান্টের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
• ভাড়ার চুক্তি: বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময় একটি বৈধ ভাড়া চুক্তি তৈরি করুন, যা কর ফাইলিংয়ের সময় প্রয়োজন হবে।
নতুন কর ব্যবস্থায় গৃহঋণের সুদের উপর ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর সুবিধা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ, যা বেতনভোগী ব্যক্তিদের ১৪,৭৫,০০০ টাকার আয়কে সম্পূর্ণ করমুক্ত করতে পারে। এই সুবিধা কেবল ভাড়া দেওয়া বাড়ির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং সঠিক আর্থিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এটি সর্বাধিক কাজে লাগানো যায়। গৃহঋণ গ্রহণকারী এবং ভাড়ার আয় থেকে উপকৃত হওয়া ব্যক্তিদের জন্য এই নিয়ম একটি আর্থিক সুবিধা হিসেবে কাজ করতে পারে। তাই, আপনার আয় এবং গৃহঋণের হিসাব পরীক্ষা করে এই সুবিধার সদ্ব্যবহার করুন এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কর বাঁচান।