Get an Education Loan: ভারতের শহরগুলো থেকে শুরু করে মফস্বল — সর্বত্রই স্কুল ফি বৃদ্ধির চাপ ক্রমশ অসহনীয় হয়ে উঠছে। দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, ও নয়ডার মতো বড় শহরের পাশাপাশি টিয়ার ২ ও টিয়ার ৩ শহরগুলোতেও অভিভাবকেরা সন্তানের শিক্ষার খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অধিকাংশ অভিভাবক মানসম্পন্ন শিক্ষা দিতে চাইলেও ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে আশার আলো হয়ে উঠছে স্কুল শিক্ষার জন্য পাওয়া শিক্ষা ঋণ।
স্কুল শিক্ষার জন্য ঋণ কি পাওয়া যায়?
হ্যাঁ, ভারতে এখন শুধু উচ্চশিক্ষার জন্য নয়, নার্সারি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল শিক্ষার জন্যও শিক্ষা ঋণ পাওয়া যায়। যদিও এতদিন পর্যন্ত শিক্ষা ঋণ বলতেই বোঝানো হত কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের জন্য ঋণ, এখন অনেক ব্যাংক স্কুল শিক্ষার খরচ মেটাতেও ঋণ দিচ্ছে।
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, ব্যাঙ্ক অফ বড়োদা-র মতো সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি আইসিআইসিআই, এইচডিএফসি-র মতো বেসরকারি ব্যাংক এবং কিছু এনবিএফসি (NBFC) প্রতিষ্ঠানও এখন স্কুল শিক্ষার জন্য ঋণ দিয়ে থাকে।
এই ঋণের আওতায় পড়ে:
- স্কুলের টিউশন ফি
- হোস্টেল বা আবাসিক খরচ
- বই, ইউনিফর্ম, স্টেশনারি
- ল্যাপটপ বা অপরিহার্য ইলেকট্রনিক সামগ্রী
- যাতায়াতের খরচ (বিশেষ করে বোর্ডিং স্কুলের ক্ষেত্রে)
ঋণের পরিমাণ কত হতে পারে?
সাধারণভাবে, স্কুল শিক্ষার জন্য শিক্ষা ঋণের পরিমাণ সর্বাধিক ₹৪ লক্ষ পর্যন্ত হতে পারে কোনও জামানত ছাড়াই। তবে কিছু ব্যাংক ₹৭.৫ লক্ষ থেকে ₹১০ লক্ষ পর্যন্ত ঋণ প্রদান করে, যেগুলির জন্য জামানত বা গ্যারান্টার প্রয়োজন হতে পারে।
₹৪ লক্ষ পর্যন্ত ঋণে সাধারণত জামানতের প্রয়োজন হয় না। ₹৭.৫ লক্ষ পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে Credit Guarantee Fund Scheme for Education Loans (CGFSEL) স্কিমের আওতায় নিরাপত্তা দেওয়া হয়।
কারা এই ঋণের জন্য যোগ্য?
সাধারণ যোগ্যতা যা ব্যাংক অনুযায়ী সামান্য পরিবর্তিত হতে পারে:
ভারতীয় নাগরিক: আবেদনকারী (ছাত্র বা অভিভাবক) ভারতীয় নাগরিক হতে হবে। কিছু ব্যাংক এনআরআই ছাত্রদেরও এই ঋণ দিয়ে থাকে যাঁদের বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট আছে।
ছাত্রের বয়স: সাধারণত ৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই ঋণ পাওয়া যায়।
স্কুল ভর্তির প্রমাণ: ছাত্রকে সিবিএসই (CBSE), আইসিএসই (ICSE), রাজ্য বোর্ড বা আন্তর্জাতিক বোর্ড অনুমোদিত স্বীকৃত স্কুলে ভর্তি থাকতে
হবে।
সহ-আবেদনকারী: একজন অভিভাবক বা লিগ্যাল গার্ডিয়ান যাঁর নিয়মিত আয় আছে, তাঁকে সহ-আবেদনকারী হতে হবে।
আয় সীমা: যদি কেউ Central Sector Interest Subsidy (CSIS) এর সুবিধা নিতে চান, তবে পরিবারের বার্ষিক আয় ₹৪.৫ লক্ষের মধ্যে হতে হবে। তবে বেসরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে ₹৮ লক্ষ পর্যন্ত আয় গ্রহণযোগ্য হয়।
কী কী কাগজপত্র লাগবে?
- ছাত্রের নথি:
- আধার কার্ড
- প্যান কার্ড
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি
- স্কুলে ভর্তির স্বীকৃতি বা অ্যাডমিশন প্রমাণ
সহ-আবেদনকারীর নথি:
- আধার ও প্যান কার্ড
- ইনকাম প্রুফ (আইটিআর, বেতন স্লিপ ইত্যাদি)
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- স্কুল সংক্রান্ত কাগজপত্র:
- স্কুলের ফি স্ট্রাকচার
- বিল এবং স্বীকৃতির প্রমাণ
যদি জামানত প্রয়োজন হয়:
তবে সম্পত্তির কাগজপত্র বা অন্য জামানতের নথি জমা দিতে হবে।
সরকারের সহায়তা এবং ভর্তুকি:
সরকারের কিছু স্কিম রয়েছে যা এই ঋণগ্রহণ প্রক্রিয়াকে সহজ এবং সাশ্রয়ী করে তোলে:
1. প্রধানমন্ত্রী বিদ্যালক্ষ্মী যোজনা (PM Vidyalakshmi Yojana):
এই স্কিমের অধীনে বার্ষিক আয় ₹৮ লক্ষের মধ্যে থাকা পরিবারের মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা ৩% সুদের ভর্তুকিসহ ঋণ পেতে পারে। জামানত লাগে না।
2. CSIS (Central Sector Interest Subsidy):
যাঁদের পরিবারের বার্ষিক আয় ₹৪.৫ লক্ষের মধ্যে, তাঁদের জন্য কোর্স চলাকালীন এবং আরও এক বছর পর্যন্ত সুদের উপর ভর্তুকি দেওয়া হয়।
3. বিদ্যা লক্ষ্মী পোর্টাল (Vidya Lakshmi Portal):
একাধিক ব্যাংকে একসঙ্গে ঋণের জন্য আবেদন করা যায় এই পোর্টালের মাধ্যমে। একক ফর্মে আবেদন করেই বিভিন্ন বিকল্পের মধ্যে তুলনা করে নির্বাচন করা যায়।
বর্তমানে স্কুলে পড়াশোনার খরচ যে গতিতে বাড়ছে, তাতে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে তা বহন করা কঠিন হয়ে উঠছে। যদিও অনেকেই শিক্ষা ঋণ বলতে শুধু কলেজ বা বিদেশে পড়াশোনার কথা বোঝেন, স্কুল পর্যায়েও যে এই সুবিধা পাওয়া যায় — তা অনেকের অজানা। সঠিক তথ্য ও পরিকল্পনা নিয়ে অভিভাবকেরা শিক্ষা ঋণের সাহায্যে তাঁদের সন্তানের মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারেন।
শুধু ঋণ নিলেই চলবে না — সেই সঙ্গে প্রয়োজন ঋণের সুদের হার, শর্তাবলী ও ভর্তুকি স্কিমগুলি সম্পর্কে ভালভাবে জেনে নেওয়া। তবেই আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যত গড়ে তোলার পথে কোনও বাধা থাকবে না।