Credit Card Without Salary: ভারতে স্বনির্ভর কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফ্রিল্যান্সার, ছোট ব্যবসায়ী, কনসালট্যান্ট, গিগ কর্মী— এদের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির নতুন এক অধ্যায় রচিত হচ্ছে। অনেকেই চাকরির বদ্ধ কাঠামোর বাইরে বেরিয়ে নিজের শর্তে কাজ করার স্বাধীনতা উপভোগ করছেন। তবে এই স্বাধীনতার সাথে এসেছে আর্থিক চ্যালেঞ্জও। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিয়মিত আয় দেখিয়ে ব্যাংকিং সুবিধা, বিশেষ করে ক্রেডিট কার্ড পাওয়া।
সাধারণত নিয়মিত বেতনের চাকুরিজীবীদের জন্য ক্রেডিট কার্ড পেতে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। কারণ তাদের মাসিক বেতন সহজেই প্রমাণযোগ্য এবং ব্যাংক বা ক্রেডিট কার্ড ইস্যুকারীরা স্থায়ী আয়কেই মূল ভিত্তি হিসেবে ধরে। কিন্তু স্বনিয়োজিত পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে আয় অনিয়মিত ও পরিবর্তনশীল হওয়ায় তাদের ক্রেডিট কার্ডের আবেদন প্রায়ই বাতিল হয়ে যায় বা অতিরিক্ত শর্ত আরোপ করা হয়।
তবে বাজার পরিস্থিতি ও ক্রেডিট পেনিট্রেশনের পরিবর্তনের কারণে ব্যাংক ও ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউটগুলো এই বিশাল কর্মী শ্রেণিকে অন্তর্ভুক্ত করার দিকে এগিয়ে এসেছে।
স্বনিয়োজিতদের জন্য ক্রেডিট কার্ড: এখন সম্ভব:
স্বনিয়োজিত পেশাজীবীরা এখন সহজেই ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন, তবে তাদের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। ব্যাংকগুলো এই আবেদনকারীদের যাচাই করতে আয়কর রিটার্ন (ITR), ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ব্যবসার স্থায়িত্ব এবং ক্রেডিট স্কোরের মতো নানান ডকুমেন্ট দেখে সিদ্ধান্ত নেয়।
যেমন, ডাক্তার, স্থপতি, ব্যবসায়ী, কনসালট্যান্ট, ছোট ব্যবসার মালিক বা অন্যান্য স্বাধীন পেশাজীবীদের যাচাই করা হয় আলাদা মানদণ্ডে। এখানে মাসিক বেতন স্লিপের বদলে ITR, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ব্যবসায়িক নিবন্ধন সনদ বা প্রফেশনাল লাইসেন্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যোগ্যতা মানদণ্ড:
সাধারণত ভারতের প্রায় সব ব্যাংকের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত যোগ্যতা মানদণ্ড প্রযোজ্য:
বয়স: ২১ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে।
বার্ষিক আয়: ২ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত, যা ITR-এর মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।
ব্যবসার স্থায়িত্ব: কমপক্ষে ১ থেকে ৩ বছরের ধারাবাহিকতা।
ক্রেডিট স্কোর: ৭০০ বা তার বেশি।
নাগরিকত্ব: শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিক।
প্রয়োজনীয় নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে আধার কার্ড, প্যান কার্ড, সর্বশেষ তিন বছরের আয়কর রিটার্ন, শেষ ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ব্যবসার নিবন্ধন সনদ বা প্রফেশনাল লাইসেন্স, ঠিকানা ও পরিচয়ের প্রমাণপত্র।
গৃহিণীদের জন্যও রয়েছে বিকল্প:
মজার বিষয় হলো, আয়ের কোনো উৎস না থাকলেও গৃহিণীরা ক্রেডিট কার্ড পেতে পারেন। কিছু বিকল্পের মধ্যে রয়েছে:
সিকিউরড ক্রেডিট কার্ড: যেগুলো ফিক্সড ডিপোজিটের (FD) উপর ভিত্তি করে ইস্যু করা হয়। অর্থাৎ, একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিট করে সেই অঙ্কের উপর ভিত্তি করে লিমিট দেওয়া হয়।
অ্যাড-অন কার্ড: পরিবারের অন্য সদস্যের (যেমন স্বামী বা সন্তান) মূল কার্ডের সাথে যুক্ত কার্ড হিসেবে ইস্যু করা যায়।
জয়েন্ট ক্রেডিট কার্ড: যেখানে স্বামী বা পরিবারের আরেকজন আয় করা সদস্য মূল আবেদনকারী হিসেবে থাকেন।
সেভিংস বেসড বেসিক কার্ড: সঞ্চয় হিসাবের শক্তিশালী ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে ইস্যু করা যায়।
ক্রেডিট স্কোরের গুরুত্ব:
ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে ক্রেডিট স্কোর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত সময়মতো বিল পরিশোধ করা, অতিরিক্ত ঋণ না নেওয়া এবং লোনের কিস্তি সঠিকভাবে দেওয়া— এগুলো ক্রেডিট স্কোর উন্নত করতে সহায়তা করে। ব্যাংক ও ফিনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলো ৭০০ বা তার বেশি স্কোরকে নিরাপদ মনে করে।
কেন এই পরিবর্তন?
ভারতে ডিজিটাল লেনদেন ও ক্রেডিট ব্যবস্থার প্রসার, ফিনটেক কোম্পানির উদ্যোগ, এবং সরকারের ফাইনান্সিয়াল ইনক্লুশন নীতির কারণে ব্যাংকগুলো নতুন সেগমেন্টের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। অনেক ব্যাংক ও নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি (NBFC) এখন স্পেশাল প্রোডাক্ট আনছে, যা বিশেষভাবে স্বনিয়োজিতদের জন্য তৈরি।
ফ্রিল্যান্সার, উদ্যোক্তা, গিগ কর্মী কিংবা গৃহিণী— প্রত্যেকের জন্য এখন ক্রেডিট কার্ডের দরজা খুলছে। শর্ত পূরণ করে সঠিক নথিপত্রের মাধ্যমে আবেদন করলে, নিজের আর্থিক স্বাধীনতা আরও বিস্তৃত করা সম্ভব। শুধুমাত্র আয়ের ধারাবাহিকতা এবং ক্রেডিট হেলথ ঠিক রাখতে পারলেই এই সুবিধা উপভোগ করা যাবে। ভারতের ক্রমবর্ধমান নতুন কর্মসংস্থান সংস্কৃতিতে এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় সুখবর।