আয়কর রিটার্ন (ITR) দাখিলের মৌসুম শুরু হয়ে গিয়েছে এবং যারা বেতনভুক্ত কর্মচারী ও সরল আয় কাঠামোর অধিকারী, তাঁদের জন্য ITR-1 ফর্ম ব্যবহার করাই সবচেয়ে সহজ ও সুবিধাজনক বিকল্প। মূল্যায়ন বর্ষ ২০২৫-২৬ (আর্থিক বর্ষ ২০২৪-২৫)-এর জন্য আয়কর দপ্তর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা বাড়িয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ করেছে, যাতে করদাতারা আরও কিছু সময় পান নিজেদের রিটার্ন সঠিকভাবে জমা দেওয়ার জন্য।
কে ব্যবহার করতে পারবেন ITR-1?
ITR-1 ফর্মটি শুধুমাত্র সেইসব বাসিন্দা (Resident and Ordinarily Resident বা ROR) ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য, যাঁদের মোট বার্ষিক আয় ৫০ লক্ষ টাকার মধ্যে। এটি মূলত নিম্নলিখিত আয়ের উৎসের জন্য ব্যবহৃত হয়:
বেতন বা পেনশন, একটি গৃহসম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত আয়, অন্যান্য উৎস থেকে আয়, যেমন সেভিংস অ্যাকাউন্ট বা ফিক্সড ডিপোজিট থেকে সুদ, লভ্যাংশ আয় ইত্যাদি।
এছাড়া, যদি আপনার কৃষিজ আয় ৫,০০০ টাকার মধ্যে হয়, তাহলেও আপনি এই ফর্ম ব্যবহার করতে পারবেন।
এ বছরের বড় পরিবর্তন হিসেবে, এখন থেকে তালিকাভুক্ত শেয়ার বা ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে অর্জিত দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভ (Long Term Capital Gain বা LTCG) যদি ১.২৫ লক্ষ টাকার মধ্যে থাকে, তাহলে সেটিও ITR-1 ফর্মের আওতায় ফাইল করা যাবে। এটি নতুন সংযোজন যা অনেক ছোট লগ্নিকারীদের জন্য সুবিধাজনক।
কীভাবে ITR-1 ফাইল করবেন?
ITR-1 ফাইল করার দুটি উপায় রয়েছে:
1. Excel বা Java Utility ডাউনলোড করে ফর্ম পূরণ করে আপলোড করা।
2. সরাসরি আয়কর ই-ফাইলিং পোর্টালে গিয়ে অনলাইনে ফাইল করা।
দ্বিতীয় পদ্ধতিটিই সবচেয়ে সহজ, দ্রুত এবং অধিকাংশ করদাতারাই এটি ব্যবহার করেন। কারণ, এখানে আগেই প্রি-ফিল্ড তথ্য যেমন বেতন, TDS, ব্যাংকের সুদের পরিমাণ ইত্যাদি দেখা যায়। ফলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় এবং সময়ও বাঁচে।
ধাপে ধাপে ITR-1 ফাইল করার প্রক্রিয়া:
ধাপ ১: প্রথমে যান www.incometax.gov.in/iec/foportal/ লিংকে এবং আপনার PAN বা আধার ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।
ধাপ ২: এরপর যান: E-File > Income Tax Returns > File Income Tax Return।
ধাপ ৩: মূল্যায়ন বর্ষ ২০২৫-২৬ সিলেক্ট করুন, “Online” মোড বেছে নিন এবং Continue-তে ক্লিক করুন।
ধাপ ৪: Start New Filing বেছে নিন, এরপর Individual সিলেক্ট করুন।
ধাপ ৫: ITR-1 নির্বাচন করুন এবং “Proceed with ITR-1” > Let’s Get Started-এ ক্লিক করুন।
ধাপ ৬: রিটার্ন ফাইল করার কারণ নির্বাচন করুন। যেমন: “Taxable income is more than the basic exemption limit”।
ধাপ ৭: এরপর ধাপে ধাপে তথ্য পূরণ করুন:
ব্যক্তিগত তথ্য (Personal Information), আয়ের বিবরণ (Income Details), কর ছাড়ের দাবী (Deductions), প্রদত্ত করের বিবরণ (Tax Paid) এবং চূড়ান্ত ট্যাক্স সারাংশ (Final Tax Summary)।
রিটার্ন জমা দেওয়ার পরে কী করবেন?
রিটার্ন সাবমিট করার পর এটি ৩০ দিনের মধ্যে ভেরিফাই করা বাধ্যতামূলক। আপনি নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলির যেকোনও একটি ব্যবহার করে এটি ভেরিফাই করতে পারেন:
আধার OTP, ইলেকট্রনিক ভেরিফিকেশন কোড (EVC), ডিজিটাল সিগনেচার সার্টিফিকেট (DSC), অথবা ITR-V সই করে পোস্টে পাঠিয়ে দিন CPC বেঙ্গালুরু ঠিকানায়।
যখন ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হয়ে যায়, তখন একটি নিশ্চিতকরণ মেসেজ পাওয়া যায় এবং এরপর আয়কর দপ্তর আপনার রিটার্ন প্রসেস করা শুরু করে।
কেন এখনই ITR-1 ফাইল করবেন?
দেরি না করে এখনই ফাইল করলে পরবর্তী জরিমানা বা সুদের ঝুঁকি কমে যায়।
যদি ট্যাক্স রিফান্ড পাওয়ার কথা থাকে, তবে তা দ্রুত হাতে পাবেন।
ভিসা অ্যাপ্লিকেশন, লোনের আবেদন, বা অন্যান্য আর্থিক কাজে ITR প্রয়োজন হতে পারে।
সমস্ত তথ্য এখন অনলাইনে সহজে পাওয়া যায় এবং গাইডলাইন অনুযায়ী ফাইল করা আরও সহজ হয়ে গিয়েছে।
বর্তমানে ITR ফাইল করা একটি সম্পূর্ণ অনলাইন, দ্রুত এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়া। বেতনভুক্ত কর্মচারীদের জন্য ITR-1 ফর্ম অত্যন্ত সহজপাঠ্য এবং প্রায় সব তথ্যই প্রি-ফিল্ড হিসেবে পাওয়া যায়। সময়সীমা ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হলেও, শেষ মুহূর্তে ঝামেলা এড়াতে এখনই রিটার্ন ফাইল করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। আর্থিকভাবে সচেতন নাগরিক হিসেবে সময়মতো রিটার্ন দাখিল করাই দায়িত্বশীলতার প্রমাণ।