Claim Post Office Deposit: ভারতের ব্যাংক, ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্প এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি মৃত অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের টাকা দাবি করার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে থাকে। সঠিক কাগজপত্র ও আইনগত প্রমাণের ভিত্তিতে মৃত ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট বা সার্টিফিকেট থেকে টাকা দাবি করা যায়। তিনটি প্রধান পদ্ধতির মাধ্যমে এই দাবি নিষ্পত্তি করা হয়—নমিনেশন, আইনগত প্রমাণ এবং নমিনেশন ছাড়াই দাবি।
নমিনেশন: দ্রুততম ও সহজ পদ্ধতি
নমিনেশন পদ্ধতিতে দাবি নিষ্পত্তি সবচেয়ে দ্রুত এবং সহজ হয়। যদি মৃত ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে পূর্বেই কোনো নমিনি নিযুক্ত থাকেন, তাহলে তাঁকে কিছু নির্দিষ্ট ডকুমেন্ট জমা দিয়ে টাকা পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হয়।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- ফর্ম SB-84 (ডাকঘরের ওয়েবসাইট বা অফিস থেকে পাওয়া যায়)
- আসল বা অ্যাটেস্টেড ডেথ সার্টিফিকেট (মিউনিসিপাল কর্পোরেশন বা রেজিস্ট্রার অফ ডেথস কর্তৃক জারি)
- নমিনির KYC ডকুমেন্ট (আধার, প্যান কার্ড, ছবি এবং ঠিকানার প্রমাণ)
- সংশ্লিষ্ট পোস্ট অফিসে ফর্ম ও কাগজপত্র জমা
- পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষ নমিনি ও অ্যাকাউন্টের তথ্য যাচাই করে টাকা ছাড় করে দেন।
আইনগত প্রমাণ: উইল, সাকসেশন সার্টিফিকেট ও অন্যান্য
যদি কোনো নমিনি না থাকে এবং মৃত ব্যক্তির উইল থাকে, তবে সেই অনুযায়ী উত্তরাধিকারী বা উইলে উল্লিখিত ব্যক্তিকে টাকা পাওয়ার অধিকার দেওয়া হয়। উইল না থাকলে আদালতের মাধ্যমে সাকসেশন সার্টিফিকেট বা লেটার অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সংগ্রহ করতে হয়।
- প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
- ডেথ সার্টিফিকেট (মূল বা অ্যাটেস্টেড কপি)
- উইল বা সাকসেশন সার্টিফিকেট, লেটার অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
- দাবি ফর্ম
- দাবিদারের KYC ডকুমেন্ট
- এই সমস্ত কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট পোস্ট অফিসে জমা দিয়ে টাকা পাওয়া যায়।
নমিনেশন ছাড়া দাবি (রু. ৫ লক্ষ পর্যন্ত): বিশেষ নিয়ম
যদি কোনো নমিনি নিযুক্ত না থাকেন এবং অ্যাকাউন্টে জমা টাকা ৫ লক্ষ টাকার কম হয়, তাহলে ডিপোজিটর মারা যাওয়ার পর ৬ মাস অপেক্ষা করতে হয়। এরপর কিছু বিশেষ ডকুমেন্ট পোস্ট অফিসে জমা দিতে হয়।
- প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
- দাবি ফর্ম ও ডেথ সার্টিফিকেট (মূল বা অ্যাটেস্টেড)
- অ্যানেক্সার-I: লেটার অফ ইন্ডেমনিটি (ক্ষতিপূরণপত্র)
- অ্যানেক্সার-II: হলফনামা (আবেদনকারীর পরিচয় ও দাবি সংক্রান্ত)
- অ্যানেক্সার-III: ডিক্লেইমার হলফনামা (অন্য উত্তরাধিকারীদের দাবির পরিত্যাগ সংক্রান্ত)
- আবেদনকারীর KYC ডকুমেন্ট
এই ডকুমেন্টগুলি যাচাই করে পোস্ট অফিস টাকা ছাড় করতে পারে।
নমিনেশন ছাড়া দাবি (রু. ৫ লক্ষের বেশি): আদালতের সাকসেশন সার্টিফিকেট আবশ্যক
যদি জমা রাশি ৫ লক্ষ টাকার বেশি হয় এবং কোনো নমিনি না থাকে, তবে উত্তরাধিকারীর সাকসেশন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা বাধ্যতামূলক। এটি দেওয়ানি আদালত দ্বারা ইস্যু করা হয়, যেখানে প্রমাণ দিতে হয় যে আবেদনকারী মৃত ব্যক্তির বৈধ উত্তরাধিকারী।
প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া
- সিভিল কোর্টে সাকসেশন সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন
- ডেথ সার্টিফিকেট, মৃতের সাথে সম্পর্কের প্রমাণ, অ্যাকাউন্টের ডিটেইল জমা
- আদালত সাকসেশন সার্টিফিকেট ইস্যু করলে, সেটি সহ পোস্ট অফিসে দাবি ফর্ম ও অন্যান্য KYC ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়
- যাচাইয়ের পরে টাকা ছাড় করা হয়।
কখন ও কীভাবে নমিনি নিযুক্ত করবেন?
একটি অ্যাকাউন্ট বা সার্টিফিকেট খোলার সময়ই নমিনি নিযুক্ত করা যেতে পারে, অথবা পরে যে কোনো সময় তা যোগ বা পরিবর্তন করা যায়। পোস্ট অফিসে নমিনেশন ফর্ম পূরণ করে, নমিনির নাম, সম্পর্ক, ঠিকানা ও অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে অভিভাবকের নাম উল্লেখ করতে হয়।
মৃত ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা দাবি করার প্রক্রিয়া ভারতের ডাকঘর ও ব্যাংক ব্যবস্থায় সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত। আগেই নমিনি নিযুক্ত থাকলে প্রক্রিয়া অনেকটাই সহজ হয়। তবে নমিনি না থাকলে কিছু অতিরিক্ত আইনগত পদক্ষেপ ও কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। তাই প্রত্যেক সঞ্চয়কারী ও পরিবার সদস্যদের উচিত আগেই নমিনি নিযুক্ত করা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য হালনাগাদ রাখা। এই নির্দেশনাগুলি মেনে চললে মৃত সঞ্চয়কারীর টাকা দ্রুত ও নির্ভুলভাবে উত্তোলন করা সম্ভব।