এক নজরে বুঝে নিন সোনার উপর জিএসটি হিসেবের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া

সোনার প্রতি বাঙালির টান চিরকালীন। বিয়ে হোক বা পুজো, সোনার গয়না যেন আবশ্যিক। কিন্তু জানেন কি, আপনি যখন সোনার গয়না কেনেন, তখন আপনি কেবল গয়নার…

"Gold Prices Continue to Drop on June 16: Check Today's Rates in Major Cities Including Kolkata"

সোনার প্রতি বাঙালির টান চিরকালীন। বিয়ে হোক বা পুজো, সোনার গয়না যেন আবশ্যিক। কিন্তু জানেন কি, আপনি যখন সোনার গয়না কেনেন, তখন আপনি কেবল গয়নার দামই দেন না, তার সঙ্গে দিতে হয় জিএসটিও (GST On Gold)? এবং এই জিএসটি কেবল গয়নার উপরই নয়, তার প্রস্তুত প্রক্রিয়ার উপরেও বসে। আজ আমরা জেনে নেব, সোনার উপরে জিএসটি কীভাবে কাজ করে এবং এর হিসেব কীভাবে করা হয়।

জিএসটি কী এবং সোনায় এর প্রভাব:
২০১৭ সালের জুলাই মাসে ভারতে চালু হয় গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (GST)। পূর্বে সোনার উপর ১% ভ্যাট ও ১% বিক্রয় কর (Sales Tax) বসত। কিন্তু জিএসটি চালুর পর এই দুই কর বাতিল হয়ে যায়। এখন সোনার গয়নার উপরে মোট ৩% জিএসটি বসে। এর সঙ্গে আরও ৫% জিএসটি বসে মেকিং চার্জ বা গয়না তৈরির খরচের উপরে।

   

এই নতুন কর কাঠামো অনুযায়ী, এখন সোনা কেনা বেশ ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। ফলে মধ্যবিত্তের পক্ষে সোনা কেনা কিছুটা কঠিন হয়ে উঠেছে, এবং এর ফলে বিনিয়োগ হিসেবেও সোনার চাহিদা কমেছে।

জিএসটি কোথায় কোথায় বসে?
সোনা ব্যবসার বিভিন্ন পর্যায়ে জিএসটি বসে:
1. আমদানির সময়: বিদেশ থেকে সোনা আমদানির সময় আমদানিকারকদের উপর শুল্কের পাশাপাশি বসে জিএসটি।
2. ক্রয়ের সময়: একজন ক্রেতা যখন গয়না কেনেন, তখন তাঁকে গয়নার মূল দামের উপরে ৩% জিএসটি দিতে হয়।
3. মেকিং চার্জ: গয়না তৈরির চার্জের উপরে বসে অতিরিক্ত ৫% জিএসটি।
তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, যদি কেউ পুরনো সোনা বিক্রি করে নতুন গয়না কেনেন, সেখানে জিএসটি বসে না। অর্থাৎ, পুরনো গয়না এক্সচেঞ্জ করলে তা থেকে কর বাঁচানো যায়।

কীভাবে হয় সোনার উপর জিএসটি হিসেব?
বিভিন্ন রাজ্য ও শহরের গয়না ব্যবসায়ীরা ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে বিল তৈরি করেন। তবে জিএসটি হিসেব করার একটি সাধারণ নিয়ম রয়েছে। আসুন একটি উদাহরণের মাধ্যমে দেখি, কীভাবে এই হিসেব হয়।
ধরা যাক:
প্রতি গ্রাম সোনার দাম: ৪,০০০ টাকা
আপনি কিনলেন: ২৫ গ্রাম সোনা
মেকিং চার্জ: সোনার দামের ১০% (অর্থাৎ ১০,০০০ টাকা)
জিএসটি: গয়না + মেকিং চার্জ এর উপর ৩%
হিসেব:
মূল সোনার দাম: ৪,০০০ টাকা x ২৫ গ্রাম = ১,০০,০০০ টাকা
মেকিং চার্জ: ১০,০০০ টাকা
জিএসটি (৩%): (১,০০,০০০ + ১০,০০০) টাকাx ৩% = ৩,৩০০ টাকা
সর্বমোট মূল্য: ১,১৩,৩০০ টাকা
সুতরাং, ১ লক্ষ টাকা দামের সোনার উপর প্রায় ১৩,৩০০ টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হয় কেবল কর ও মেকিং চার্জের জন্য।

Advertisements

এই কাঠামোর প্রভাব কী?
এই কর কাঠামোর ফলে বেশ কিছু সমস্যার মুখে পড়ছে গয়না শিল্প:
মধ্যবিত্তের জন্য ব্যয়বহুল: বাড়তি কর ও মেকিং চার্জের কারণে সাধারণ মানুষের জন্য সোনা কেনা কঠিন হয়ে উঠছে।
চাহিদা কমে গেছে: খরচ বেশি হওয়ায় সোনার বিনিয়োগের আকর্ষণ কমে গেছে।
ছায়া অর্থনীতি: কিছু ব্যবসায়ী জিএসটি এড়াতে নগদ লেনদেনে ঝুঁকছেন, যা কর ফাঁকি বাড়াতে পারে।
তবে সরকারের বক্তব্য, এই কর কাঠামো গয়না ব্যবসায় স্বচ্ছতা নিয়ে এসেছে এবং কালো টাকার ব্যবহার কমাতে সাহায্য করছে।

কীভাবে কমানো যায় খরচ?
সোনা কেনার সময় কিছু উপায় অবলম্বন করলে করের বোঝা কিছুটা কমানো যায়:
1. এক্সচেঞ্জ অফার: পুরনো গয়না দিয়ে নতুন গয়না কিনলে জিএসটি বসে না।
2. মেকিং চার্জ দরাদরি করুন: বিভিন্ন দোকানে মেকিং চার্জ আলাদা হয়। তুলনা করে সবচেয়ে কম মেকিং চার্জ যেখানে, সেখান থেকে কেনা ভালো।
3. জেনারেল/হলমার্ক গয়না কিনুন: এতে মেকিং চার্জ তুলনামূলক কম হয়।

জিএসটি চালুর পর থেকে সোনার দামে একটি বড় পরিবর্তন এসেছে। গয়নার মূল্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত কর ও মেকিং চার্জ, যা সোনা কিনতে গেলে মাথায় রাখা জরুরি। ক্রেতাদের উচিত প্রতিটি ধাপ বুঝে নিয়ে হিসেব করে গয়না কেনা। সচেতন থাকলে করও কম পড়বে, গয়নাও ভালোমানের কেনা সম্ভব হবে।