রিয়েল এস্টেট হয়ে উঠছে কর সাশ্রয়ের সবচেয়ে স্মার্ট উপায়

ভারতের বিনিয়োগ পরিবেশের জটিলতা উচ্চ সম্পদধারী ব্যক্তি তথা হাই নেটওয়ার্থ ইন্ডিভিজুয়ালস (HNIs)-দের জন্য যেমন চ্যালেঞ্জের, তেমনি সুযোগেরও ক্ষেত্র তৈরি করে। এই প্রেক্ষাপটে রিয়েল এস্টেট (Real…

Real Estate Tax Benefits

ভারতের বিনিয়োগ পরিবেশের জটিলতা উচ্চ সম্পদধারী ব্যক্তি তথা হাই নেটওয়ার্থ ইন্ডিভিজুয়ালস (HNIs)-দের জন্য যেমন চ্যালেঞ্জের, তেমনি সুযোগেরও ক্ষেত্র তৈরি করে। এই প্রেক্ষাপটে রিয়েল এস্টেট (Real Estate ) বা আবাসন খাত শুধু সম্পদ সঞ্চয়ের নয়, বরং কর সাশ্রয়ের অন্যতম কৌশল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

যুগ্ম মালিকানা ও কর বন্টনের সুবিধা
আবাসন খাতে যুগ্ম মালিকানা (joint ownership)-র ব্যবহারে আয় ভাগ করে নেওয়া যায়, ফলে করযোগ্য আয় কমে আসে। একজন ব্যক্তির পরিবর্তে যখন চারজন একটি বাণিজ্যিক সম্পত্তির মালিক হন, যার বার্ষিক ভাড়া আয় ২০ লক্ষ টাকা, তখন প্রত্যেকের করযোগ্য আয় আলাদা ভাবে হিসাব করা হয় এবং করের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।

   

এই ধারণার উপর ভিত্তি করে, গোয়েল গঙ্গা ডেভেলপমেন্টস-এর পরিচালক অনুরাগ গোয়েল বলেন, “রিয়েল এস্টেট শুধু একটি বিনিয়োগ নয়, এটি একটি কর পরিকল্পনার হাতিয়ার।”

আইন অনুসারে কর ছাড়ের পথ: ধারা ২৪, ৮০সি, ৫৪ ও ৫৪ইসি
ভারতের আয়কর আইনের ধারা ২৪ অনুসারে, নিজস্ব ব্যবহারের ঘরের ক্ষেত্রে বার্ষিক ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুদের টাকা করমুক্ত হিসেবে দাবি করা যায়। অন্যদিকে, ভাড়া দেওয়া ঘরের জন্য সুদের পুরো টাকাটিই করমুক্ত করা যায়। এছাড়া, ধারা ৮০সি-তে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মূল ঋণ পরিশোধের জন্য ছাড় পাওয়া যায়।

অন্যদিকে, ধারা ৫৪ এবং ৫৪ইসি মূলধনী লাভ কর (Capital Gains Tax) থেকে ছাড় দেয়। একটি আবাসিক সম্পত্তি বিক্রি করে যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আরেকটি সম্পত্তি কেনা হয়, তাহলে লাভের উপর কর দিতে হয় না। ধারা ৫৪ইসি অনুসারে, সেই লাভের অর্থ NHAI বা REC-এর মতো সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করে কর টাল করা যায়।

এই কর ছাড়গুলো মিলিয়ে উচ্চ আয়ধারী ব্যক্তিরা দীর্ঘমেয়াদে রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করে আয় রূপান্তর করে করযোগ্য আয়ের পরিবর্তে সম্পদ তৈরি করতে পারেন।

সম্পদ থেকে উত্তরাধিকার – একটি দূরদর্শী কৌশল
রিয়েল এস্টেট আজ শুধু একটা সাময়িক লাভের মাধ্যম নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উত্তরাধিকার সৃষ্টির হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। আরপিএস গ্রুপের পরিচালক আমান গুপ্ত বলেন, “আগের প্রজন্ম যেমন ব্যবসা উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে গেছেন, এখন HNI-রা সম্পত্তিকেই সেই ব্যবসা হিসেবে ধরে নিচ্ছেন।”

Advertisements

উদাহরণ হিসেবে, ৫ কোটি টাকার একটি সম্পত্তি ৪ কোটি টাকার ঋণে কিনলে, প্রতি বছর ২ লক্ষ টাকার মতো সুদের উপর কর ছাড় পাওয়া যায়। তার সাথে ৮০সি-র ১.৫ লক্ষ টাকার ছাড় ধরলে বছরে উল্লেখযোগ্য কর সাশ্রয় হয়। ২০ বছরে এই পরিমাণ টাকা ১০০ কোটিরও বেশি করমুক্ত বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে।

রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট (REITs) ও তার সুবিধা
ঐতিহ্যগতভাবে রিয়েল এস্টেট খাত তরল নয় (illiquid), অর্থাৎ সহজে নগদে রূপান্তর করা কঠিন। তবে বর্তমানে REITs ও ফ্র্যাকশনাল ওনারশিপ প্ল্যাটফর্ম-এর মাধ্যমে অংশিক মালিকানায় বিনিয়োগের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে, যা এই খাতকে অধিকতর তরল করে তুলেছে। এর ফলে HNI-রা তাদের বিনিয়োগের একটি অংশ বাজার থেকে বের করে আনতে পারেন সম্পূর্ণ সম্পত্তি বিক্রি না করেও।

বিনিয়োগের পাশাপাশি কর পরিকল্পনা
মোতিয়া গ্রুপের পরিচালক এল সি মিত্তল বলেন, “সঠিক কর পরিকল্পনার মাধ্যমে রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করলে তা শুধু অর্থ সঞ্চয়ের নয়, বরং আয় বৃদ্ধি ও সম্পদের রূপান্তরের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়।”

তিনি আরও বলেন, “একটি উচ্চমূল্যের আবাসন সম্পত্তি কিনে ধার নেওয়া অর্থের উপর সুদ ছাড় ও মূলধন কর ছাড় একসাথে ব্যবহার করলে HNI-রা দীর্ঘমেয়াদী লাভবান হন।”

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
ভারতের নগরায়ণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির (যেমন RERA) সক্রিয় ভূমিকায় এখন রিয়েল এস্টেট অনেক বেশি স্বচ্ছ ও নিরাপদ খাত হয়ে উঠেছে। কর পরিকল্পনার সুবিধাগুলি যখন সুপরিকল্পিতভাবে প্রয়োগ করা হয়, তখন এই খাত উচ্চ সম্পদধারীদের জন্য একটি দৃঢ় ও বুদ্ধিদীপ্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়ায়।

শেষ কথা হিসেবে, “রিয়েল এস্টেট আজ শুধু একটি সম্পত্তি নয়, এটি একটি আর্থিক কৌশল,” বলেন আমান গুপ্ত। ভবিষ্যতের কর সাশ্রয়, রাজস্ব বৃদ্ধি ও উত্তরাধিকার রচনার জন্য HNI-দের জন্য এটি এক অপরিহার্য খাত।