HomeBusinessভাড়া থেকে নিজের ঘর! মিলেনিয়ালরা কীভাবে ব্যক্তিগত ঋণ নিয়ে স্বপ্নের বাড়ি সাজাচ্ছে

ভাড়া থেকে নিজের ঘর! মিলেনিয়ালরা কীভাবে ব্যক্তিগত ঋণ নিয়ে স্বপ্নের বাড়ি সাজাচ্ছে

- Advertisement -

Millennials Use Personal Loans: বাড়ি কেবল ইট-পাথরের কাঠামো নয়, এটি একটি স্বপ্ন, আবেগ এবং স্বাধীনতার প্রতীক। আজকের মিলেনিয়াল প্রজন্ম, যারা তাদের স্বাধীনতা ও ব্যক্তিত্বকে মূল্য দেয়, তারা ভাড়ার বাড়ি থেকে নিজেদের স্বপ্নের ঘরের মালিক হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে। এই যাত্রায় তাদের সঙ্গী হচ্ছে ব্যক্তিগত ঋণ, যা তাদের স্বপ্নের বাড়ি সাজানোর জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। এই প্রতিবেদনে আমরা দেখব কীভাবে মিলেনিয়ালরা ব্যক্তিগত ঋণ ব্যবহার করে তাদের বাড়ির স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে, এবং এই প্রক্রিয়ায় কীভাবে তারা গর্ব, স্বাধীনতা এবং রূপান্তরের একটি নতুন গল্প লিখছে।

মিলেনিয়ালদের স্বপ্নের বাড়ি
মিলেনিয়ালরা, যারা ১৯৮০-এর দশকের শেষ থেকে ১৯৯০-এর দশকের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে, তারা একটি বদলে যাওয়া বিশ্বে বড় হয়েছে। প্রযুক্তি, আধুনিক জীবনযাত্রা এবং আর্থিক স্বাধীনতার প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পূর্ববর্তী প্রজন্মের থেকে আলাদা। অনেক মিলেনিয়াল দীর্ঘদিন ধরে ভাড়ার বাড়িতে থাকার পর নিজেদের একটি স্থায়ী ঠিকানা তৈরি করতে চায়। এই প্রজন্মের জন্য বাড়ি কেবল একটি আশ্রয় নয়, বরং তাদের ব্যক্তিত্ব, স্বাদ এবং জীবনধারার প্রতিফলন।

   

কিন্তু বাড়ি কেনা বা সাজানোর জন্য প্রয়োজন মোটা অঙ্কের অর্থ, যা অনেক মিলেনিয়ালের জন্য এককালীন বিনিয়োগ করা সম্ভব হয় না। এখানেই ব্যক্তিগত ঋণ একটি গেম-চেঞ্জার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ব্যাঙ্ক এবং নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি (এনবিএফসি) মিলেনিয়ালদের জন্য আকর্ষণীয় ব্যক্তিগত ঋণের স্কিম নিয়ে এসেছে, যা তাদের বাড়ির সংস্কার, আসবাব কেনা বা অভ্যন্তরীণ সজ্জার জন্য অর্থের জোগান দিচ্ছে।

ব্যক্তিগত ঋণের জনপ্রিয়তা
ব্যক্তিগত ঋণের জনপ্রিয়তা বাড়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, এই ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে সহজ এবং দ্রুত। হোম লোন বা অন্যান্য সুরক্ষিত ঋণের তুলনায় ব্যক্তিগত ঋণের জন্য কম কাগজপত্র এবং কম সময় লাগে। দ্বিতীয়ত, এই ঋণের জন্য কোনও জামানতের প্রয়োজন হয় না, যা মিলেনিয়ালদের জন্য আকর্ষণীয়। তৃতীয়ত, ব্যক্তিগত ঋণের অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনও নির্দিষ্ট বাধ্যবাধকতা থাকে না, যা মিলেনিয়ালদের তাদের বাড়ি সাজানোর ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দেয়।

উদাহরণস্বরূপ, কলকাতার একজন তরুণ সফটওয়্যার প্রকৌশলী, সায়ন্তনী চ্যাটার্জি, সম্প্রতি তার প্রথম ফ্ল্যাট কিনেছেন। তিনি একটি ব্যক্তিগত ঋণ নিয়ে তাঁর বাড়ির জন্য আধুনিক আসবাব, মডুলার কিচেন এবং স্মার্ট হোম ডিভাইস কিনেছেন। “আমার জন্য বাড়ি মানে আমার নিজের জায়গা, যেখানে আমি আমার মতো করে থাকতে পারি। ব্যক্তিগত ঋণ আমাকে সেই স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করেছে,” বলেন সায়ন্তনী। এই ধরনের গল্প এখন আর বিরল নয়।

আবেগের সঙ্গে জড়িত গল্প
বাড়ি সাজানোর প্রক্রিয়া মিলেনিয়ালদের জন্য কেবল একটি আর্থিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি তাদের আবেগের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। নিজের বাড়ির মালিক হওয়া তাদের মধ্যে গর্ব এবং স্বাধীনতার অনুভূতি জাগায়। ভাড়ার বাড়িতে থাকার সময় অনেক মিলেনিয়াল নিয়মিত ভাড়া বৃদ্ধি, বাড়িওয়ালার হস্তক্ষেপ এবং স্থানান্তরের ঝামেলার মুখোমুখি হয়েছেন। নিজের বাড়ি তাদের এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় এবং তাদের জীবনে স্থিতিশীলতা নিয়ে আসে।

এছাড়া, মিলেনিয়ালরা তাদের বাড়িকে তাদের ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন হিসেবে দেখেন। তারা আধুনিক ডিজাইন, পরিবেশ-বান্ধব উপকরণ এবং স্মার্ট প্রযুক্তির প্রতি আকর্ষিত। ব্যক্তিগত ঋণ তাদের এই সব ইচ্ছা পূরণে সাহায্য করছে। উদাহরণস্বরূপ, অনেকে তাদের বাড়িতে সোলার প্যানেল, এনার্জি-এফিসিয়েন্ট যন্ত্রপাতি বা মিনিমালিস্ট ডিজাইনের আসবাব কিনছেন। এই প্রক্রিয়ায় তারা কেবল একটি বাড়ি তৈরি করছেন না, বরং তাদের জীবনধারাকে রূপান্তরিত করছেন।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
ব্যক্তিগত ঋণের মাধ্যমে বাড়ি সাজানোর প্রবণতা শুধু ব্যক্তিগত স্তরে প্রভাব ফেলছে না, এটি অর্থনীতিতেও ইতিবাচক অবদান রাখছে। আসবাব, গৃহসজ্জা এবং স্মার্ট হোম প্রযুক্তির বাজারে চাহিদা বাড়ছে, যা স্থানীয় ব্যবসা এবং শিল্পের জন্য সুযোগ তৈরি করছে। একই সঙ্গে, ব্যাঙ্ক এবং এনবিএফসি-র ব্যক্তিগত ঋণের বাজারও সম্প্রসারিত হচ্ছে। একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের ব্যক্তিগত ঋণের বাজার ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছতে পারে, যার একটি বড় অংশ মিলেনিয়ালদের বাড়ি কেনা এবং সংস্কারের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।

তবে, এই প্রবণতার কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ব্যক্তিগত ঋণের সুদের হার সাধারণত হোম লোনের তুলনায় বেশি, যা দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। মিলেনিয়ালদের মধ্যে অনেকেই এই ঋণ পরিশোধের জন্য তাদের আয়ের একটি বড় অংশ ব্যয় করছেন। তাই, বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন যে ঋণ নেওয়ার আগে বাজেট পরিকল্পনা এবং আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

একটি নতুন যুগের সূচনা
মিলেনিয়ালদের জন্য বাড়ি কেনা এবং সাজানো কেবল একটি আর্থিক লেনদেন নয়, এটি তাদের জীবনের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। ব্যক্তিগত ঋণ তাদের এই যাত্রায় সাহায্য করছে, যা তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও গর্বের অনুভূতি জাগাচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় তারা কেবল একটি বাড়ি তৈরি করছে না, বরং একটি নতুন জীবনধারা এবং স্বাধীনতার গল্প রচনা করছে।

এই প্রবণতা ভবিষ্যতে আরও তীব্র হবে বলে মনে করা হচ্ছে। শহরাঞ্চলে ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় এবং আধুনিক সুবিধার প্রতি আকর্ষণের কারণে মিলেনিয়ালরা ব্যক্তিগত ঋণের উপর আরও নির্ভর করবে। তবে, এই যাত্রায় সাফল্যের জন্য তাদের আর্থিক পরিকল্পনা এবং দায়িত্বশীল ঋণ গ্রহণের প্রতি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

উপসংহারে বলা যায় মিলেনিয়ালরা ব্যক্তিগত ঋণের মাধ্যমে তাদের স্বপ্নের বাড়ি সাজিয়ে নিজেদের জীবনে একটি নতুন মাত্রা যোগ করছে। এই প্রক্রিয়া তাদের কেবল স্বাধীনতা ও গর্বই দেয় না, বরং ভারতের অর্থনীতি ও সমাজের গতিশীলতাকেও প্রভাবিত করছে।

- Advertisement -
Business Desk
Business Desk
Stay informed about the latest business news and updates from Kolkata and West Bengal on Kolkata 24×7
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular